Cvoice24.com

দলকে জিতালেও যে কারণে নিজে হারলেন মমতা

সিভয়েস ডেস্ক

প্রকাশিত: ০৫:২৫, ৩ মে ২০২১
দলকে জিতালেও যে কারণে নিজে হারলেন মমতা

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়

পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচনে বড় জয় পেয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। ২১৩ আসনে জয়ের নজির গড়ে রাজ্যে হ্যাট্রিক সরকার গঠন করছে দলটি। এই আনন্দের মধ্যেও বিষাদের রেশ। নন্দীগ্রামে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই করেও হেরে গেছেন দলের নেত্রী স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। 

নন্দীগ্রামে ভোটের দিনই ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। জানিয়েছিলেন, তৃণমূল প্রার্থী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবার নন্দীগ্রাম থেকে পরাজিত হবেন। ফল হাতে ফললও তাই। দিদি হেরেছেন ১ হাজার ৬২২ ভোটে, এক সময়ের তারই ঘনিষ্ঠ মিত্র শুভেন্দু অধিকারীর কাছে। যদিও এর আগে ভরতেরে সংবাদ সংস্থা এএনআই জানিয়েছিল, ১ হাজার ২০২ ভোটে নন্দীগ্রামে জয়ী হয়েছেন মমতা।

এবার ভোটের আগে বিজেপিতে যোগ দেন শুভেন্দু। তারপরেই জানুয়ারিতে নন্দীগ্রামে যান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ৫ বছর পর সেখানে গিয়ে হঠাৎ করেই জনসভায় মমতা ঘোষণা করেন তিনি নন্দীগ্রাম থেকেই এবার লড়বেন। সঙ্গে সঙ্গে রাজ্য রাজনীতিতে নতুন আলোড়ন শুরু হয়ে যায়। কারণ নন্দীগ্রাম শুভেন্দু অধিকারীর গড় হিসাবেই পরিচিত। 

কোন সন্দেহ নেই বাংলার রাজনীতিতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উত্থানে সিঙ্গুরের মতই অবদান ছিল নন্দীগ্রামের। আর এই লড়াইয়ে মমতার সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই করেছিলেন শুভেন্দু। ২০১৬ সালের বিধানসভা ভোটে জিতে মন্ত্রিত্বও পেয়েছিলেন তিনি।  

নন্দীগ্রামের ভূমিপুত্র শুভেন্দু অধিকারী। ওই আসনে বরাবরই তিনি জয়ী হয়েছেন। আধিকারী পরিবারের বড় একটা গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে ওই এলকায়।  

শুভেন্দুর খাসতালুকে দাঁড়িয়ে মমতার ভোটে লড়ার ঘোষণাকে ‘প্রেস্টিজ ফাইট’ হিসেবেই ধরে নেন স্থানীয় ওই নেতা। চ্যালেঞ্জ ছুঁড়েন তৃণমূলনেত্রীকে ৫০ হাজার ভোটে হারানোর। তারপর গড়িয়েছে অনেক জল।  

মনোনয়ন জমা দিতে গিয়ে নন্দীগ্রামে আহতও হন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তারপর হুইল চেয়ারে করেই গোটা প্রচারপর্বে দেখা গেছে তাকে। 

নন্দীগ্রামে দাঁড়িয়ে মমতার চণ্ডীপাঠ, মন্দিরে-মন্দিরে পুজো। ভোটের দিনও অশান্তি। বুথের ভেতর তৃণমূলনেত্রীর বসে থাকা। রাজ্য পালকে ফোন। 

এবারের ভোটে নন্দীগ্রাম নিয়ে অনেক কিছু দেখেছে রাজ্য রাজনীতি। হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হয়েছে মমতা-শুভেন্দুর। নানা নাটকীয়তা শেষে এ আসনে চূড়ান্তভাবে জয়ী ঘোষণা করা হয় শুভেন্দুকেই।

নির্বাচন কমিশন জানায়, নন্দীগ্রাম আসনে এক লাখ ৯ হাজার ৬৭৩ ভোট পেয়েছেন শুভেন্দু। আর মমতা পেয়েছেন ১ লাখ ৭ হাজার ৯৩৭ ভোট।

স্থানীয়রা জানায়, নন্দীগ্রামে মমতার হেরে যাওয়ার দুটি কারণ। এর একটি হলো আসনটি শুভেন্দুর খাসতালুক, যেখানে অধিকারী পরিবারের রয়েছে বেশ প্রভাব। আর অন্যটি হলো, পুরো ভোটে সংখ্যালঘু তথা মুসলিম ভোট তৃণমূল টানতে পারলেও নন্দীগ্রাম আসনে হয়েছে তার ঠিক উল্টো। কট্টর হিন্দুত্ববাদী দল বিজেপির প্রার্থী হয়েও ব্যক্তি শুভেন্দু তার ঝুলিতে বেশ কিছু সংখ্যালঘুর ভোট ভরতে পেরেছেন। 

তবে নিজে হারলেও দলের জয়ের জন্য বাংলার মানুষকে কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন মমতা, ‘বাংলার জয়ের জন্য সবাইকে অভিনন্দন। বাংলার জয়, মানুষের জয়। বাংলা আজ ভারতকে বাঁচিয়েছে।’ 

নন্দীগ্রামের মানুষ যা করেছেন, ভালো করেছেন বলেও জানান মমতা। একই সঙ্গে ফলাফল নিয়ে আদালতে যাবেন বলে জানিয়েছেন মমতা। তার অভিযোগ, ‘আমার কাছে অভিযোগ রয়েছে, রায় ঘোষণার পর কারচুপি হয়েছে।’

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়