চট্টগ্রাম আদালতে সংখ্যা বেড়েছে নারী বিচারকের

প্রকাশিত: ১২:০২, ২১ মার্চ ২০১৯
চট্টগ্রাম আদালতে সংখ্যা বেড়েছে নারী বিচারকের

ছবি-প্রতীকি

নারীর ক্ষমতায়ন এবং নারীর এগিয়ে যাওয়ায় বাংলাদেশ বিশ্ব দরবারে রোল মডেল। বর্তমানে দেশের প্রধানমন্ত্রী, বিরোধী দলীয় নেত্রী ও সংসদের স্পিকার নারী। স্বশস্ত্র বাহিনী, সচিবালয়, প্রশাসন কোথায় নেই নারী? প্রতিটি বিভাগে নারী দ্যুতি ছড়াচ্ছেন।

পিছিয়ে নেই বিচার বিভাগও। বিচারালয়ে ক্রমেই বেড়ে চলছে নারী বিচারকদের সংখ্যা। উচ্চতর আদালতে নারী বিচারক যেখানে ৭ শতাংশ সেখানে নিম্ন আদালতে এটা মোট বিচারকের ২৮ শতাংশ। আর চট্টগ্রামের আদালতগুলোতে মোট বিচারকের ২৯ শতাংশ নারী। চট্টগ্রামে মোট ৯০ আদালতের মধ্যে ২৬ আদালতে দায়িত্ব পালন করছেন নারী বিচারক। বিচারিক কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে এটাকে অনন্য নজির বলছেন সংশ্লিষ্টরা।

বিচারিক কার্যক্রম পরিচালনায় নারী বিচারকদের এগিয়ে যাওয়াকে ঐতিহাসিক ও অনন্য দৃষ্টান্ত বলে উল্লেখ করেন চট্টগ্রাম আদালতে বিচারকাজের সাথে সংশ্লিষ্ট সিনিয়র ব্যক্তিবর্গ।

চট্টগ্রাম আদালত থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী চট্টগ্রামের জেলা জজের অধীনে রয়েছে মোট ৪৩টি আদালত। এসব আদালতের বিচারকদের মধ্যে ১৪টি আদালতে বিচার কার্যক্রম পরিচালনা করছেন নারী বিচারক।

চট্টগ্রামের জেলা জজ মোহাম্মদ ইসমাইল হোসেনের নেতৃত্বে পরিচালিত জেলা জজশীপে ২য় অতিরিক্ত জেলা জজ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন বেগম ফেরদৌস আরা, অর্থঋণ আদালতে (যুগ্ম জেলা জজ) বেগম সুরাইয়া সাহাব, পরিবেশ আদালতে (যুগ্ম জেলা জজ) বেগম সানজীদা আফরিন দীবা, ২য় সিনিয়র সহকারি জজ বেগম ইশরাত জাহান পুনম, ৫ম সিনিয়র সহকারী জজ বেগম মোছাম্মৎ রেশমা খাতুন, ১ম অতিরিক্ত সিনিয়র সহকারি জজ মোছাম্মৎ ইশরাত জাহান নাসরিন, ৩য় অতিরিক্ত সিনিয়র সহকারী জজ আদালত ফাতেমা বেগম মুক্তা, মীরসরাই আদালতের সহকারী জজ বেগম ফারহা নুর রহমান, সীতাকুন্ড আদালতের সহকারী জজ বেগম আশরাফুন্নাহার রীটা, হাটহাজারি আদালতের সহকারি জজ বেগম তাহরীনা আক্তার নওরীন, লিগ্যাল এইড অফিসার (সিনিয়র সহকারি জজ) বেগম ফারহানা ইয়াসমিন, পটিয়া ২য় আদালতের সিনিয়র সহকারি জজ বেগম নাজমুন নাহার, বোয়ালখালী আদালতের সিনিয়র সহকারি জজ বেগম ফারজানা তাবাসসুম মেরী, আনোয়ারা আদালতের সহকারি জজ বেগম তানজিলা মরিয়ম ও চন্দনাইশ আদালতের সহকারি জজ বেগম নিশাত সুলতানা।

তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ ও হাইকোর্ট বিভাগে বিচারপতির সংখ্যা ৯৯ জন। তাদের মধ্যে ৭ জন নারী বিচারপতি। যা শতকরা প্রায় ৭ ভাগের মতো। নিম্ন আদালতে ১ হাজার ৮১৯ জন বিচারক কমর্রত আছেন। এর মধ্যে ৫৩৮ জন নারী বিচারক। যা শতকরা প্রায় ২৮ ভাগ।

উচ্চ ও নিম্ন আদালতে কর্মরত বিচারকদের সংখ্যা বিশ্লেষণে দেখা যায়, প্রতি ১০০ জনের ৩৫ জন নারী বিচারক। তুলনামূলক উচ্চ আদালতের চেয়ে নিম্ন আদালতে নারী বিচারকের সংখ্যা বেশি। এ সংখ্যা ইউরোপ আমেরিকাসহ আমাদের প্রতিবেশী রাষ্ট্রের চেয়েও বেশি। সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন বলেছেন, অধিকাংশ নারী বিচারক তাদের দায়িত্ব পালনে যথেষ্ট দক্ষতার পরিচয় দিচ্ছেন।

চট্টগ্রামের জুডিশিয়াল ম্যাজিস্টেসিতে বিচার কার্যক্রমে নেতৃত্ব দিচ্ছেন মু্খ্য বিচারিক হাকিম (সিজেএম) বেগম কামরুন নাহার রুমী। এখানে ১৩ টি আদালতের মধ্যে সিজেএমসহ ৪টি আদালতে বিচারকার্য পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছেন নারী বিচারক।

অন্য তিনজন হচ্ছেন- জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট-৪ এর বিচারক জয়ন্তী রাণী রায়, জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট-৫ এর বিচারক বেগম জিহান সানজিদা ও জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বেগম সুস্মিতা আহমেদ।

চট্টগ্রামে ২টি বিদ্যুৎ আদালতের দুইটিতেই রয়েছেন নারী বিচারক। বিদ্যুৎ আদালত উত্তরের দায়িত্বে রয়েছেন বেগম কোহিনুর আক্তার ও দক্ষিণের বিচারক বেগম আইরিন পারভীন।

জানা গেছে, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সিদ্ধান্তে ১৯৭৪ সালে প্রথমবারের মত বিচার বিভাগে নারীদের যোগ দেয়ার বাধা বিলুপ্ত করা হয়। ১৯৭৫ সালে শুরু হয় নিম্ন আদালতে নারী বিচারকদের পথচলা। এরপর বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার ২০০১ সালে সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে এবং ২০১১ সালে আপিল বিভাগে সর্বপ্রথম নারী বিচারপতি নিয়োগ দেন। ২০১১ সালে পঞ্চদশ সংবিধান সংশোধনীর মাধ্যমে জাতীয় পর্যায়ে সর্বস্তরে মহিলাদের অংশগ্রহণ ও সুযোগের সমতা নিশ্চিত করার ব্যবস্থা করে দেন। বর্তমানে বিচার বিভাগে মোট নারী বিচারকের সংখ্যা ৫৪২ জন। এর মধ্যে আপিল বিভাগে একজন ও হাইকোর্ট বিভাগে ৭ জন বিচারপতি রয়েছেন। এ ছাড়া নিম্ন আদালতে রয়েছেন ৫৩৮ জন নারী বিচারক। সর্বশেষ ১১তম বিজিএস পরীক্ষার মাধ্যমে ৫৩ জন নারী বিচার বিভাগে যোগদানের পর বর্তমানে মোট বিচারকের শতকরা প্রায় ২৮ ভাগ নারী।

মহানগর দায়রা জজ মোহাম্মদ আকবর হোসেন মৃধার নেতৃত্বে ১৩টি মহানগর দায়রা আদালতে কাজ করছেন তিন নারী বিচারক। তাঁরা হলেন- সিনিয়র সহকারি মহানগর দায়রা জজ আফরোজা জেসমিন কলি, সিনিয়র সহকারি মহানগর জজ বিলকিস আক্তার ও প্রথম অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ জান্নাতুল ফেরদাউস চৌধুরী। জননিরাপত্তা বিষয়ক বিশেষ ট্রাইব্যুনালে বিচারক হিসেবে রয়েছেন সৈয়দা হোসনে আরা। ৭টি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের মধ্যে ৩য় ট্রাইব্যুনালে দায়িত্ব পালন করছেন জান্নাতুল ফেরদৌস।

দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল, বিভাগীয় বিশেষ জজ আদালত ও প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনাল নামে আরো ২টি আদালত রয়েছে। এগুলোতে অবশ্য নারী বিচারক নেই।

মুখ্য

মুহাম্মদ নাজমুল হাসান

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়