যে মন্ত্রে সৎ থেকেও সফল এলজিইডি মন্ত্রী

প্রকাশিত: ০০:৪০, ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২১
যে মন্ত্রে সৎ থেকেও সফল এলজিইডি মন্ত্রী

জুনিয়র চেম্বার ইন্টারন্যাশনাল (জেসিআই) চট্টগ্রামের অনুষ্ঠানে স্থানীয় সরকার মন্ত্রী তাজুল ইসলাম।

‘আমি এখন মন্ত্রী, এখানে অনেক সুযোগ আছে। বিলিয়ন, মিলিয়ন টাকা অবৈধ পথে আয়ের সুযোগ আছে। কিন্তু আমি এখনো চেষ্টা করি নিজেকে সব জিনিস থেকে স্বচ্ছ রাখতে।’ একথা জানিয়ে স্থানীয় সরকার মন্ত্রী তাজুল ইসলাম শুনিয়েছেন তার সৎ থাকার গল্প। সাধারণ পরিবার থেকে বেড়ে উঠেও বারবার সাংসদ হওয়া ও কোন মন্ত্রে সরকারের সবচেয়ে বড় মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেও তিনি সততাকে ধরে রেখেছেন সেই গল্প শুনিয়েছেন মন্ত্রী। কুমিল্লার লাকসাম-মনোহরগঞ্জের এ সাংসদের সফলতা ও সততার পেছনে অণুপ্রেরণা তার পিতার আদর্শই কাজ করেছে বলে জানিয়েছেন তিনি।  শুক্রবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) রাতে রেডিসন ব্লু চট্টগ্রাম বে ভিউতে জুনিয়র চেম্বার ইন্টারন্যাশনাল (জেসিআই) চট্টগ্রাম কসমোপলিটনের ‘চেইন হ্যান্ডওভার সিরোমনি ২০২১’অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব গল্পই তিনি শুনিয়েছেন চট্টগ্রামের তরুণদের। 

মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম বলেন, ‘আমি ধনী পরিবারের সন্তান নই। পারিবারিকভাবে আমি কোনো ধন-সম্পদ পাইনি। কিন্তু আমি গরীব মানুষ নই। আমার বাবা অত্যন্ত আল্লাহওয়ালা মানুষ ছিলেন। আমার বাবা-মা গ্রামে থাকতেন, গ্রামে আমার জন্ম হয়েছে। আমার বাবা কলেজে চাকরি করতেন। আমি যখন স্কুলে পড়ছি, তিনি অবসর নিয়েছেন। আমাদের আয়ের মূল উৎস ছিল কৃষি। তা দিয়ে সংসার কোনমতে চলতো।’

‘প্রথম রোজগার করে আমি বাবার হাতে ১০০ টাকা দিয়েছিলাম। ওনি খুশি হলেন, হঠাৎ করে মুখটা কালো করে ওনি বললেন, বাবা তোমরা বড় হয়েছো, রুজি-রোজগার করবা, সন্দেহ থাকলে এই টাকা আমাকে দিও না। আমার জমি-জমা যা আছে তার কিছু অংশ বিক্রি করে খেয়ে গেলেও আমার বাকি জীবন চলে যাবে। আমি সারাজীবন ভালো ও সৎ রোজগারের উপর নির্ভরশীল ছিলাম। বাকি জীবন আমি অসৎ রোজগার থেকে মুক্ত থাকতে চাই।—যোগ করেন মন্ত্রী। 

তাজুল ইসলাম বলেন, ‘তখন বাবা ছাড়া আমার আর কেউ নেই যে টাকা দিতে হবে। শুধু বাবাকে দেয়ার জন্য আমার টাকা রোজগার করা। বাবার প্রতি আমার সর্বোচ্চ ইমোশন ও শ্রদ্ধা কাজ করতো। ১০ টাকাও যদি রোজগার করতে পারি সেটা বাবাকে দিতে পারলে তিনি খুশি হবেন-এটা আমার কাছে ছিল আবেগের বিষয়। আর এই টাকাটা যদি অসৎ পথে রোজগার হয় তাহলে বাবাকে দিলে তিনি মনে কষ্ট পাবেন। কারণ তিনি আমাকে নিষেধ করেছেন।’

মন্ত্রী বলেন, ‘আমি যখন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলাম, তখন আমি বিশ্বাস করতাম না যে লেখার মধ্যে কোনো মিথ্যা থাকতে পারে। বলার মধ্যে মিথ্যা থাকতে পারে- এটা আমি বিশ্বাস করতাম। বিশ্বাস করতাম যে কথার মধ্যে মিথ্যা বলে মানুষ। কিন্তু মিথ্যা কথা লেখে এটা কিন্তু তখন পর্যন্ত আমি বিশ্বাস করতাম না, আমি তখন এতটা বোকা ছিলাম। সে সময় বাবা সৎ পথে রোজগার নিয়ে যে কথাগুলো বলেছেন সেগুলো আমি মেনে চলার চেষ্টা করে আসছি সত্যিকার অর্থে। আমি জানি না এটা আপনারা বিশ্বাস করবেন কিনা, কিন্তু এটা সত্য। সিরিয়াসলি আমি চেষ্টা করে আসছি। যতটুকু সততার সাথে টাকা রোজগার করার সুযোগ ছিল, শতভাগ পারা যায়নি আমাদের সমাজের কারণে। কিন্তু এক ইঞ্চিও এদিক সেদিক হইনি যতটুকু পারা গেছে।’

এলজিইডি মন্ত্রী বলেন, ‘এখন আমি মন্ত্রী, এখানে অনেক সুযোগ আছে। বিলিয়ন, মিলিয়ন টাকা অবৈধ পথে আয়ের সুযোগ আছে। কিন্তু আমি এখনো চেষ্টা করি নিজেকে সব জিনিস থেকে স্বচ্ছ রাখতে। এখন আমি মোটামুটি ধনী মানুষ। আমার কাছে এত টাকা নেই, কিছু টাকা যা আছে আমার জন্য যথেষ্ট, চলবে। আমি আমার বাবার কথাটা কেন বললাম, আমি মাঝে মাঝে বলি, খুব সৎভাবে বলি, আমি যদি পেরে থাকি, কেন এটা হবে না? আমি জ্যাক মা’র কথা বলি, আমি বেজোসের কথা বলি, তারা যখন বলে আমি দুই হাজার ডলারের চাকরির জন্য গিয়েছিলাম, আমাকে দেইনি। বেজোস তো চাকরি-বাকরি না পেয়ে তার বাবা-মায়ের কাছ থেকে ৯ হাজার ডলার নিয়ে ব্যবসা শুরু করেছে। জ্যাক মা’ও তো কোনরকম কিছু টাকা সংগ্রহ করে ব্যবসা শুরু করেছে। অর্থ্যাৎ এটা মনে করি না, দুর্নীতি না করলে, অন্যায় না করলে, অপরাধ না করলে আমরা টিকে থাকবো না।’

জেসিআই চট্টগ্রাম কসমোপলিটনের সভাপতি টিপু সুলতান সিকদারের সভাপতিত্বে আয়োজিত অনুষ্ঠানে গেস্ট অব অনার হিসেবে বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র এম রেজাউল করিম চৌধুরী। কি নোট স্পিকার ছিলেন জেসিআই বাংলাদেশের সভাপতি নিয়াজ মোর্শেদ এলিট। আরও বক্তব্য রাখেন জেসিআই বাংলাদেশের ভাইস প্রেসিডেন্ট মাহমুদ উন নবী প্রিন্স ও চট্টগ্রামের সদ্য বিদায়ী সভাপতি শহীদুল মোস্তাফা চৌধুরী মিজান। 

এছাড়াও অনুষ্ঠানের মূল আকর্ষণ হিসেবে জুনিয়র চেম্বার ইন্টারন্যাশনাল চিটাগাং কসমোপলিটনের নতুন পরিচালনা পর্ষদের কাছে পুরানো পর্ষদ দায়িত্ব হস্তান্তর করে।

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়