Cvoice24.com

কিশোর গ্যাংকে চাইলেই রক্তদাতা গ্যাং করা যায়, কণিকা’র অনুষ্ঠানে ড. সিকান্দর খান

সিভয়েস প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২২:৪২, ৮ এপ্রিল ২০২২
কিশোর গ্যাংকে চাইলেই রক্তদাতা গ্যাং করা যায়, কণিকা’র অনুষ্ঠানে ড. সিকান্দর খান

কিশোর গ্যাং কালচারকে রক্তদান গ্যাংয়ে পরিণত করার আহ্বান করেছেন ইস্ট ডেল্টা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. সিকান্দর খান। তিনি বলেন, ‘আমরা হতাশ হয়ে বলি আমাদের ছেলে-মেয়েরা উচ্ছন্নে গেছে। এখন বলা হয় কিশোর গ্যাং, এই কিশোর গ্যাংকে চাইলেই রক্তদাতা গ্যাং করা যায়। কণিকার মাধ্যমে ৫ হাজার ব্যাগ রক্ত দেয়া হয়েছে, এটা সোজা কথা নাকি? ৫ হাজার মানুষকে যুক্ত করে যারা এই কাজ করেছে তারাও এর ফজিলত পাবেন। দেশে কিশোর গ্যাং থাকবে না, তাদের সমাজসেবামূলক কাজে জড়াতে হবে। বাংলাদেশের মানুষ ভালো, বাংলাদেশের মানুষ পরস্পরের কথা চিন্তা করেন। বাংলাদেশের মানুষ নিজের যা আছে তা দিয়ে অন্যজনকে সহযোগিতা করে।’

শুক্রবার বিকেলে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে আব্দুল খালেক মিলনায়তনে রক্তাদাতা সংগঠন ‘কণিকা’র সম্মাননা ও ইফতার পার্টিতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

বরেণ্য এ শিক্ষাবিদ আরও বলেন, ‘আমি মায়ের জন্য সপ্তম শ্রেণিতে পড়ার সময় রক্ত দিয়েছিলাম। আমরা যে রক্ত দিই, আমার রক্ত হিন্দুর কাছে যাচ্ছে নাকি মুসলমানের কাছে যাচ্ছে, নাকি বৌদ্ধের কাছে যাচ্ছে তা আমরা জানি না। যারা রক্ত দেয়, রক্ত নিয়ে কাজ করে তারা বিশাল হৃদয়ের মানুষ। আপনার রক্ত কার শরীরে গিয়ে কাকে বাঁচিয়ে রাখে, আমরা কেউ জানি না। এটা তো মহা পূণ্যের কাজ। মানুষের উপকারে আমরা রক্ত দিই, এতেই আমরা সন্তুষ্ট। নিজের স্বার্থ ভুলে গিয়ে এই কাজ যারা করে তাদের চেয়ে মহৎ আর কে?’

রক্তদান ও রক্ত নিয়ে কাজ করার জন্য বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে ৬৩ ব্যক্তি ও সংগঠনকে সম্মাননা জানানো হয় কণিকার পক্ষ থেকে। এরমধ্যে ৪০ জনকে সুপার ডোনার সম্মাননা, ৫ জনকে নতুন রক্তদাতা সম্মাননা, ৩ জনকে দুঃসাহসিক রক্তদাতা সম্মাননা, ৩ জনকে বর্ষ সেরা রক্তদাতা সম্মাননা, ২ জনকে কণিকা সেরা সংগঠক সম্মাননা, ১ জনকে উদীয়মান সংগঠক সম্মাননা এবং ৩টি সংগঠনকে রক্তদানে অবদান রাখায় বিশেষ সম্মাননা প্রদান করা হয়। 

রক্তাদানে সাধারণ মানুষকে উদ্বুদ্ধ করার বার্তা সমাজে মানুষের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়ায় কণিকা’র বিশেষ সম্মাননা নিচ্ছেন সিভয়েসের হেড অব নিউজ আলম দিদার।

এছাড়া রক্তাদানে সাধারণ মানুষকে উদ্বুদ্ধ করার বার্তা সমাজে মানুষের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়ায় বিশেষ সম্মাননা দেওয়া হয়েছে চট্টগ্রামের দুইজন সাংবাদিককেও। দৈনিক সমকালের চট্টগ্রাম ব্যুরো প্রধান সরোয়ার সুমন ও সিভয়েসটোয়েন্টিফোরডটকমের হেড অব নিউজ আলম দিদারকে এ সম্মাননা তুলে দেন প্রধান অতিথিসহ আমন্ত্রিত অতিথিরা।

কণিকা’র সহ-সভাপতি নাঈমুল হাসান ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নুসরাত জাহান তানির সঞ্চালনায় এই অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সংগঠনটির সভাপতি আবদুল্লাহ আল মাসউদ। এসময় তিনি বলেন, ‘সারাদেশে আমাদের ডাকে সাড়া দিয়ে যারা মানুষের জীবন বাঁচাতে এগিয়ে আসেন, তাদের জন্যই আমাদের এই আয়োজন। তাদের সম্মানিত করতে পারলে সাধারণ মানুষ রক্তদানে আরও উদ্বুদ্ধ হবে বলে বিশ্বাস আমার।’

প্রধান আলোচক চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মেরিন সাইন্স অ্যান্ড ফিশারিজের ডিন ড. মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘রক্তদান অনেক মহৎ কাজ, রক্তদাতার যে আত্মতুষ্টি, এটা অনেক বড় পাওয়া। আমার নিজের ছেলেরও দুই বছর বয়স থেকে রক্ত দিতে হয়েছে টানা তিন বছর। তখন আমি বুঝেছি রক্ত কত মূল্যবান। কারও যখন রক্তের প্রয়োজন হয়, তখন তারা বুঝতে পারে রক্তদাতাদের ত্যাগ কত বড়। অনেকের মধ্যে রক্তদানের বিষয়ে ভয় কাজ করে। এই ভয় দূর করার জন্য কণিকার মত সংগঠনগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। কণিকার সঙ্গে যে তরুণরা আছে, এভাবে যদি কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এসব সংগঠনে আসে, তাহলে সমাজের বিভিন্ন অপরাধ কমে যাবে। তরুণরা খারাপ কাজের দিকে ধাবিত হবে না।’ এসময় কণিকার সদস্যদের রক্ত নিয়ে নিঃস্বার্থ কাজের জন্য ধন্যবাদ জানান তিনি।

অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী ফরিদ, কলামিস্ট ড. মুহাম্মদ মাসুম চৌধুরী, কণিকা’র সাদারণ সম্পাদক তারেক সাব্বির প্রমুখ।

২০১২ সাল থেকে সামাজিক সংগঠন কণিকা’র যাত্রা শুরু হয়। চট্টগ্রামে প্রতি বছর সড়ক দুর্ঘটনাসহ বিভিন্ন কারণে রক্তের প্রয়োজন হয়। অনেকে সময়মতো রক্ত না পাওয়ায় মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে; আর অনেকে ছুটে বেড়ায় দ্বারে দ্বারে। এই সব বিষয় মাথায় রেখে ২০১২ সালে যাত্রা শুরু হয় সামাজিক সংগঠন কণিকা’র।

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়