ফাঁকা নগর ফিরছে পুরনো ব্যস্ততায়
সিভয়েস২৪ প্রতিবেদক
পবিত্র ঈদুল ফিতর ও পহেলা বৈশাখের ছুটি শেষ। লম্বা ছুটির পর আবারও খুলেছে অফিস-আদালত, ব্যাংক-বিমাসহ সরকারি-বেসরকারি সব প্রতিষ্ঠান। তবে ছুটির পর সোমবার প্রথম কার্যদিবস হলেও অফিসপাড়ায় দেখা মেলেনি পুরনো সেই কর্মব্যস্ততা। এছাড়া চট্টগ্রামে এখনো ফিরেনি সব মানুষ। তাই ফাঁকা নগরে পুরোদমে শুরু হয়নি ‘বিরক্তিকর’ যানজট আর চিরচেনা ব্যস্ততা।
এদিকে, সোমবার সকাল থেকে সড়কে ব্যক্তিগত গাড়ি ও গণপরিবহনের সংখ্যা কম থাকলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে গাড়ির হর্নের শব্দ আর মানুষের চাপ লক্ষ্য করা গেছে। ধীরে ধীরে ফাঁকা নগর ফিরছে পুরনো ব্যস্ততায়।
সোমবার (১৫ এপ্রিল) ঈদের ছুটির পর সব প্রতিষ্ঠানের প্রথম কর্মদিবস। অফিসে প্রবেশ করতেই সহকর্মীরা একে অপরের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। তবে ছিল না অফিসপাড়ার তেমন কর্মব্যস্ততা। একইভাবে ব্যাংকপাড়ায়ও জরুরি প্রয়োজন ছাড়া লেনদেনও খুব একটা হচ্ছে না। সরকারি অফিসের যারা চট্টগ্রামে বাইরে ঈদ করতে গেছেন তাদের অনেকেই নিয়েছেন ঐচ্ছিক ছুটি। তাই অফিস-আদালতে পুরোদমে কার্যক্রম শুরু হতে সময় লাগবে আরও কয়েকদিন।
এদিকে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এখনো বন্ধ রয়েছে। যদিও আজ (সোমবার) থেকে ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলেছে। এছাড়া স্কুল-কলেজও পুরোদমে চালু হবে আগামী সপ্তাহে। এরপরই আগের মতো কর্মমুখর ব্যস্ত জীবনে ফিরবে নগরবাসী।
প্রথম কর্মদিবসে কর্মকর্তাদের উপস্থিতি ও কাজের চাপ কম—
ঈদ উপলক্ষে গত ৯ এপ্রিল থেকে ছুটি শুরু হয়। ঈদের পরে শনিবার (১৩ এপ্রিল) সাপ্তাহিক ছুটি ও রবিবার (১৪ এপ্রিল) পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে বাংলা নববর্ষের ছুটি। ফলে ৯ তারিখ থেকে ১৪ তারিখ পর্যন্ত লম্বা ছুটি কাটিয়েছেন চাকরিজীবীরা। টানা ৬ দিন ঈদের ছুটি শেষে কর্মজীবীরা অফিসপাড়ায় যোগ দিয়েছেন। সবখানে প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে আসেছে।
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) প্রকৌশল বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘ঈদের পরে আজ থেকে অফিস শুরু হয়েছে। মোটামুটি সবাই অফিসে এসেছেন। তবে যারা গ্রামের বাড়িতে বা শহরের বাইরে গেছেন তাদের অনেকে এখনো যোগ দেননি। তারা ঐচ্ছিক ছুটি নিয়েছেন। আর প্রথমদিন তেমন কোনো ব্যস্ততা থাকে না। আমাদের আজ কোনো মিটিংও নেই।’
আরেক কর্মকর্তা বলেন, ‘আজ থেকে বাচ্চাদের স্কুল খোলায় তাদের স্কুলে নামিয়ে দিয়ে তারপর অফিসে এসেছি। আজ আমাদের কোনো মিটিং রাখা হয়নি। আর ঈদের ছুটির পরদিন খুব একটা কাজের চাপ থাকে না। পরবর্তী কর্মপরিকল্পনা কী হবে তা নিয়েই মূলত কাজ থাকে। আশা করি, আগামীকাল থেকে পুরোদমে কর্মব্যস্ততা শুরু হবে।’
একই বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা আজিজ আহমেদ বলেন, ‘আজ থেকে অফিস শুরু। সবাই যথারীতি অফিস শুরু করেছেন। ঈদের পরে অফিসে প্রথম কার্যদিবসে সহকর্মীদের ঈদ কেমন কাটলো তা নিয়ে শুভেচ্ছা বিনিময় হয়। পরবর্তীতে সব ডিপার্টমেন্ট প্রধানদের নিয়ে করণীয় নিয়ে একটা মিটিং হয়। তবে আজ কোনো মিটিংয়ের শিডিউল আছে কিনা আমার জানা নেই।’
ছুটি শেষে নগরে কর্মজীবীরা, বাড়বে গাড়ি-মানুষের চাপ—
নগরের স্থায়ী বাসিন্দা এবং একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সিনিয়র কর্মকর্তা নিজাম ইউ আহমদ বলেন, ‘এ কয়েকদিন নগরে কোনো রকম বাড়তি চাপ ছিল না। ছিল না কোনো ধরনের যানজট। রাস্তাঘাট ফাঁকা ছিল; মানুষজন কমছিল। খুব স্বাচ্ছন্দ্যে ঈদ কাটিয়েছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘পরিবার নিয়ে খুব ভালোভাবেই চলাফেরা করতে পেরেছি। কোনো ধরনের সমস্যার মধ্যে পড়তে হয়নি। এছাড়া আবহাওয়া এবং পরিবেশ ছিল অসাধারণ।’
আজ থেকে আবারো শহরের চাপ বাড়বে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আজ থেকে অফিস-আদালত শুরু হয়েছে। সেই সঙ্গে ঈদের সময় যারা গ্রামের বাড়িতে গিয়েছিলেন তারা সবাই নগরে ফিরছেন। গাড়ি-মানুষের চাপ বাড়বে, যানজটে পড়তে হবে। সড়কে ভোগান্তি বাড়বে। বলতে গেলে, শুরু হবে বিরক্তিকর যানজট।’
একই কথা জানিয়েছেন আরেক বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা হাসান কুতুব। তিনি বলেন, ‘আজ থেকে অফিস শুরু হয়েছে। তবে অফিসের কাজে আমাদের ঈদের দ্বিতীয় দিন থেকে অফিস করতে হয়েছে। ওই সময় নগর ফাঁকা ছিল। খুব সহজেই যাতায়াত করতে পেরেছি। গাড়ির চাপ কমছিল, মানুষও কমছিল। অফিস থেকে আসা-যাওয়ায় সময়ও খুব কম গিয়েছে। তবে আজ থেকে সবাই অফিসমুখী। আবারো নগরের চাপ বাড়ছে। যানজট বাড়ছে।’
উল্লেখ্য, এবারের ঈদে ছয়দিন ছুটি ছিল সংবাদপত্রে। সংবাদপত্র মালিকদের সংগঠন নিউজপেপারস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (নোয়াব) ৯ এপ্রিল থেকে ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত ছুটি ঘোষণা করে। এ কারণে দেশে ১০ থেকে ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত কোনো সংবাদপত্র প্রকাশ হয়নি। তবে পত্রিকা প্রকাশিত না হলেও অনলাইন নিউজ পোর্টাল ও টেলিভিশন চ্যানেলগুলো ঈদের ছুটিতেও চালু ছিল।