আগুনের থাবা লেগেছিল ১৩ বছর আগেও

দেবাশীষ চক্রবর্তী, সিভয়েস২৪

প্রকাশিত: ২৩:৫৫, ১৫ এপ্রিল ২০২৪
আগুনের থাবা লেগেছিল ১৩ বছর আগেও

১৩ বছর আগে আরো একবার ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের কবলে পড়েছিল ফিরিঙ্গিবাজার এলাকার টেকপাড়ার বস্তি। ফায়ার সার্ভিসকে ঠিক সময়ে খবর পৌঁছে না দেয়ায় ওই সময়ে আগুনের ভয়াবহতা ছিল তীব্র। চোখের সামনে সর্বস্ব হারিয়েছিলেন সাড়ে তিনশোরও বেশি পরিবার।

সোমবার (১৫ এপ্রিল) পুড়ে যাওয়া বস্তির ছাইয়ে দাঁড়িয়ে পুরনো ভয়াবহ এ স্মৃতির কথা জানিয়েছেন স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর হাসান মুরাদ বিপ্লব। এদিন দুপুর ১টার কিছু সময় পর অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। ১টা ২০ মিনিটের দিকে খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের ৯টি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে ঘণ্টাব্যাপী চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। এর মধ্যেই পুড়ে ছাই ২০০ বসতঘর। 

কাউন্সিলর হাসান মুরাদ বিপ্লব বলেন, টেকপাড়ার এই বস্তিতে নিম্ন আয়ের মানুষের বসবাস। ঘনবসতি হওয়ার কারণে অগ্নিঝুঁকি রয়েছে এখানে। ২০১২ সালেও মুহূর্তের মধ্যে ৩৫০ ঘর পুড়ে ছাই হয়েছে। তখন ফায়ার সার্ভিসকে খবর দিতে দেরি হওয়ায় আগুনের লেলিহান শিখা ভয়াবহ হয়ে উঠে। কিছু উদ্ধার তো দূরের কথা, আশপাশেও কেউ যেতে পারেনি।

১৩ বছর পর ফের আগুনের লেলিহান শিখায় সর্বশান্ত টেকপাড়া ও ইয়াকুবনগর বস্তি এলাকার নিম্ন আয়ের এসব মানুষ। কারো মাথা গোঁজার ঠাঁই নেই, খোলা আকাশই একমাত্র ভরসা।

বিকেলে সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, কারো ঘরে এককোণে চুলায় এখনো বসানো আছে পাতিল। কোথাও পড়ে আছে বই। খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে ছাইয়ের স্তূপ থেকে আসবাবপত্র খুঁজছেন ক্ষতিগ্রস্তরা।

ইয়াকুবনগর বস্তির বাসিন্দা মান্নান মিয়া। পেশায় ফিশারিঘাটের মৎস্য শ্রমজীবী। তিনি বলেন, ৮ জনের পরিবারে কামাই করার মানুষ একমাত্র আমি। আজকে আগুনের ঘটনায় টিনের সরাতে গিয়ে হাত গুরুতরভাবে আহত হয়েছি। ডাক্তার আগামী এক মাস হাত দিয়ে ভারী কাজ করতে মানা করে দিয়েছেন। একে তো আগুনে সর্বশান্ত, অন্যদিকে কাজের জন্যও অচল হয়ে গেলাম।

এদিকে গত মাসে নিজের চিকিৎসার জন্য জমি বিক্রির জন্য ৬ মাস কোর্ট বিল্ডিং-এ দৌড়াদৌড়ি করে ১০ হাজার টাকা খরচে দলিল তুলেছেন সুসন্ধ্যা দাশ। তবে আগুনের ঘটনায় আরও কয়েক মাস পিছিয়ে গেলেন তিনি। তিনি বলেন, যত দ্রুত সময়ের মধ্যে রোগের চিকিৎসা করাতে ডাক্তার বলেছিলেন। কিন্ত আজকের ঘটনার পর টাকা ও জরুরি কাগজপত্র  সবটাই শেষ। 

ফায়ার সার্ভিস বলছে, নারকেল গাছের সঙ্গে বৈদ্যুতিক খুঁটির তার লাগানো ছিল। বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে আগুনের ফুলকি গিয়ে বস্তির একটি ঘরের টিনের চালে পড়ে। মুহূর্তের মধ্যেই সেই ফুলকি থেকে আগুন ধরে যায়।

এদিকে অগ্নিকাণ্ডে নগরের ফিরিঙ্গিবাজারে বস্তিতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিটি পরিবারকে তিন হাজার টাকা নগদ অর্থ সহায়তা এবং শাড়ি-লুঙ্গি দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন চট্টগ্রাম সিটি মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী। 

সোমবার (১৫ এপ্রিল) মেয়র অগ্নিকাণ্ডস্থল পরিদর্শকালে সোমবার রাত এবং মঙ্গলবার দুপুর ও রাতের খাবারের ব্যবস্থা করারও ঘোষণা দেন। এছাড়া ক্ষতিগ্রস্ত ঘর পুননির্মাণে টিন দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন।

পরিদর্শকালে মেয়র বলেন, অগ্নিকাণ্ডের কথা জানার সাথে সাথে ক্ষয়ক্ষতি কমাতে বিভিন্ন সংস্থার সাথে যোগাযোগ করে উদ্ধার কার্যক্রম তরান্বিত করতে সমন্বয় করেছি। আমাদের তিনজন কাউন্সিলরের তত্ত্বাবধানে পরিচ্ছন্ন বিভাগের কর্মীরা ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিস্কার করতে কাজ করছেন।

এ সময় কাউন্সিলর হাসান মুরাদ বিপ্লব, পুলক খাস্তগীর, বেগম লুৎফুন্নেছা দোভাষ বেবী, প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা কমান্ডার লতিফুল হক কাজমিসহ চসিকের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন৷

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়