মামলা থেকে ‌‘বাঁচতে’ হেফাজতের আইনজীবী ফোরাম 

প্রকাশিত: ১৫:০৮, ৮ ডিসেম্বর ২০২০
মামলা থেকে ‌‘বাঁচতে’ হেফাজতের আইনজীবী ফোরাম 

নতুন নেতৃত্বে আসার পরই নতুন করে মামলার জালে বন্দি হলেন হেফাজতে ইসলামের আমির হাফেজ জুনায়েদ বাবুনগরী ও যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হক। পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করতে না পারলেও মামলা থেকে বাঁচতে এবার গঠন করা হচ্ছে ‘হেফাজতে ইসলাম আইনজীবী ফোরাম’। সারাদেশে হেফাজতের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে হওয়া মামলা মোকাবিলায় গঠন করা হচ্ছে এ ফোরামটি। 

হেফাজতের প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত আল্লামা শাহ আহমদ শফীর জীবনদশায় কখনো আইনজীবী ফোরাম গঠন করেননি। তবে আহমদ শফীর মৃত্যুর পর গঠিত নতুন কমিটি গঠন করার পর পরই আবার নতুন করে গঠন করা হচ্ছে ‘হেফাজতে ইসলাম আইনজীবী ফোরাম’। এ বিষয়ে ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছে হেফাজতের কেন্দ্রীয় নেতারা। 

হেফাজতে ইসলাম সূত্রে জানা গেছে, ইতোমধ্যে সারাদেশে হেফাজতে ইসলাম আইনজীবী ফোরাম গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আইন বিষয়ক সম্পাদক সাবেক এম.পি এডভোকেট শাহীনূর পাশা চৌধুরী, সহ-আইন বিষয়ক সম্পাদক ও হেফাজতে ইসলাম আইনজীবী ফোরোমের চট্টগ্রামের সভাপতি এডভোটেক মোহাম্মদ নেজাম উদ্দিনের (নেজাম) সাথে সমন্বয় করে সারাদেশে গঠন করা হবে হেফাজতে ইসলাম আইনজীবী ফোরাম। 

এ প্রসঙ্গে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আইন বিষয়ক সম্পাদক এডভোকেট শাহীনূর পাশা চৌধুরী মঙ্গলবার (৮ ডিসেম্বর) রাত ৯টার দিকে সিভয়েসকে বলেন, ‌‌‘নতুন করে সারাদেশে হেফাজতে ইসলাম আইনজীবী ফোরাম গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। মূলত আইনজীবীদেরকে নিয়ে গঠন করা হবে এই ফোরাম। হেফাজত নেতাদের মামলা পরিচালনা ও সাহায্য করার জন্য গঠন করা হচ্ছে আইনজীবী ফোরাম।’ 

হেফাজতের কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক মাওলানা জাকারিয়া নোমান ফয়েজী সিভয়েসকে বলেন, ‌‘হেফাজতে ইসলাম আইনজীবী ফোরাম’ গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। হেফাজতের আইন বিষয়ক ও সহ-আইন বিষয়ক সম্পাদককে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। হেফাজতের নেতাকর্মীদের আইন সহায়তা দিতেই মূলত এ কমিটি।’ 

এর আগে গতকাল সোমবার (৭ ডিসেম্বর) দুপুরে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম সত্যব্রত শিকদারের আদালতে বাবুনগরীসহ তিন জনের বিরুদ্ধে দুটি রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলায় হয়। আদালত মামলা দুটি তদন্ত করতে পিবিআইকে নির্দেশ দিয়েছেন। জাতির জনকের ভাস্কর্যের বিরোধিতা করে বক্তব্য দেয়ায় ‘রাষ্ট্রদ্রোহের’ অভিযোগে একটি মামলার আর্জিতে হেফাজতে ইসলামের আমির জুনায়েদ বাবুনগরী, হেফাজতের যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হক এবং ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের নায়েবে আমির সৈয়দ ফয়জুল করীমকে আসামি করা হয়। 

১৩ নভেম্বর ঢাকার গেণ্ডারিয়ার ধূপখোলার মাঠে ‘তৌহিদি জনতা ঐক্যপরিষদের’ ব্যানারে এক সমাবেশ থেকে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য স্থাপনের বিরোধিতা করা হয়। এতে বক্তৃতা দেন ইসলামী আন্দোলনের নায়েবে আমির মাওলানা ফয়জুল করীম।

একই দিনে রাজধানীর বিএমএ অডিটোরিয়ামে বাংলাদেশ খেলাফত যুব মজলিস ঢাকা মহানগরীর উদ্যোগে শানে রিসালাত কনফারেন্সে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব ও বাংলাদেশ খেলাফত যুব মজলিসের কেন্দ্রীয় সভাপতি মাওলানা মামুনুল হক প্রকাশ্যে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য স্থাপনের বিরোধিতা করেন।

এরপর গত ২৭ নভেম্বর চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে এক মাহফিলে অংশ নিয়ে হেফাজতে ইসলামের আমির জুনায়েদ বাবুনগরী হুমকি দেন, যেকোনো দল ভাস্কর্য বসালে তা ‘টেনে-হিঁচড়ে ফেলে দেয়া’ হবে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য নির্মাণের বিরুদ্ধে ইসলামভিত্তিক দলগুলো আন্দোলন করছে। ইসলামী আন্দোলনের নেতাদের বক্তব্য ঘিরে আন্দোলন আরও গতি পায়। এই আন্দোলনের মধ্যে শুক্রবার রাতের আঁধারে কুষ্টিয়া শহরের পাঁচ রাস্তার মোড়ে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্মাণাধীন ভাস্কর্য ভেঙে ফেলে দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় জড়িত স্থানীয় মাদ্রাসার দুই ছাত্র ও দুই শিক্ষককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

গ্রেপ্তার দুই মাদ্রাসা ছাত্র পুলিশকে জানিয়েছেন, মাওলানা মামুনুল হক ও ফয়জুল করীমের বয়ান শুনে উদ্বুদ্ধ হয়ে তারা বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙচুর করেন। এ ঘটনায় দেশব্যাপী ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। ভাস্কর্য বিরোধীদের রুখে দেয়ার হুশিয়ারি দিয়ে মাঠে নামার ঘোষণা দিয়েছে ছাত্রলীগ ও যুবলীগ।

-সিভয়েস/এমএন/এডি

সিভয়েস প্রতিবেদক

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়