Cvoice24.com


প্রার্থীদের অভিযোগের সত্যতা পায় না পুলিশ

প্রকাশিত: ১৬:২০, ১৬ জানুয়ারি ২০২১
প্রার্থীদের অভিযোগের সত্যতা পায় না পুলিশ

অভিযোগকারী বেশিরভাগই বিএনপি ও আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী।

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে অভিযোগ পাল্টা অভিযোগের পাল্লা ধীরে ধীরে ভারি হচ্ছে। সেই অভিযোগকারীর তালিকায় বিএনপির মেয়র প্রার্থী যেমন আছেন তেমনি আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থীও আছেন। আরও আছেন দল সমর্থিত বিশেষ করে বিএনপির কাউন্সিলর প্রার্থীরাও। তবে নির্বাচন কমিশনে করা এসব অভিযোগের অধিকাংশেরই সত্যতা পায়না পুলিশ। 

যদিও অভিযোগকারী প্রার্থীরা বলছেন, সরকারদলীয় প্রার্থীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করলেও পুলিশ পক্ষপাতমূলক আচরণ করছে। অন্যদিকে নির্বাচন কমিশন বলছে, তাদের কাছে যেসব অভিযোগ আসছে তা মাঠ পর্যায়ে দায়িত্বরত পুলিশকে তদন্ত করতে বলা হচ্ছে। আর সেই পুলিশ বলছে, পক্ষপাতমূলক আচরণের কোনও সুযোগ নেই। তদন্তে যা পাওয়া যাচ্ছে তা তুলে ধরা হচ্ছে। 

নির্বাচন কমিশন সূত্র বলছে, গত ১০ জানুয়ারি নাগরিক ঐক্য নামে একটি সংগঠনের পক্ষ থেকে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী রেজাউল করিম চৌধুরীর বিরুদ্ধে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করার অভিযোগ করা হয়। সেই অভিযোগ তদন্ত করতে নির্বাচনী দায়িত্বে থাকা জেলা প্রশাসনের ম্যাজিস্ট্রেটকে দায়িত্ব দেওয়া হলেও সত্য-মিথ্যা জানাতে পারেনি এখনও। একইভাবে ১২ জানুয়ারি রেজাউল করিমের বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ করা হলে সেটিও এখনো ম্যাজিস্ট্রেটের তদন্তে বন্দি আছে। 

অন্যদিকে বিএনপি প্রার্থীর করা অভিযোগের সত্যতা পুলিশ না পেলেও নগর বিএনপির প্রধান কার্যালয়ের সামেন আওয়ামী লীগ প্রার্থী রেজাউলের পোস্টার ছেঁড়ার অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত করতে জিডি করে তদন্ত করছে কোতোয়ালী থানা পুলিশ।  

কিন্তু বিএনপির মেয়র প্রার্থী ১৮ নম্বর বাকলিয়া ওয়ার্ডে গত ১২ জানুয়ারি পোস্টার ছেঁড়া ও গাড়ি ভাঙচুরের অভিযোগ করা হলেও বাকলিয়া থানার ওসি তার সত্যতা পায়নি বলে নির্বাচন কমিশনে প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন। 

একই দিনে ৩৩, ৩৪, ৩৫ নম্বর ওয়ার্ডে বিএনপির মহিলা কাউন্সিলর প্রার্থী মনোয়ারা বেগম প্রতিদ্বন্দ্বি সরকার দলীয় প্রার্থীর কর্মীর বিরুদ্ধে প্রচারণা কাজে বাধা, নারীর শ্লীলতাহানী ও ভ্যানিটি ব্যাগ ছিনতাইয়ের অভিযোগ আনেন। কিন্ত নির্বাচন কমিশনের নির্দেশে তদন্ত করে ঘটনার সত্যতা পাওয়া যায়নি বলে প্রতিবেদন দিয়েছেন বাকলিয়া থানার ওসি। 

শুধু বিএনপি প্রার্থীর করা অভিযোগেরই পুলিশ সত্যতা পাচ্ছেনা তা নয় কিন্তু। আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী আঞ্জুমান আরা বেগম গত ১৪ জানুয়ারি অভিযোগ করেন আওয়ামী লীগের রুমকি সেনগুপ্তের সমর্থকরা তার পোস্টার ছিঁড়েছেন। কিন্তু কোতোয়ালী থানার ওসি অভিযোগের সত্যতা পায়নি বলে কমিশনকে প্রতিবেদন দেন।  

এছাড়া গত ১১ জানুয়ারি ১১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী নুরুল ইসলাম, ১২ জানুয়ারি ২৩ নম্বর উত্তর পাঠানটুলি ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী হাজী মোহাম্মদ মহসীন, ২৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী আব্দুল কাদের, ১৩ জানুয়ারি ১১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী মোরশেদ আকতার চৌধুরী, ৬ নম্বর ওয়ার্ডের মোহাম্মদ হাসান চৌধুরী লিটন, ১২ নম্বর ওয়ার্ডের সাবের হোসেন সওদাগর, ১৪ জানুয়ারি মোহরা ৫ নম্বর ওয়ার্ডের মোহাম্মদ আজম, ১২ নম্বর সরাই পাড়ার নুরুল আমিন, ১৫ নম্বর বাগমনিরাম ওয়ার্ডের চৌধুরী সায়েফুদ্দীন রশিদ সিদ্দীকি, ১৫ জানুয়ারি ২৮ নম্বর পাঠানটুলি ওয়ার্ডের আব্দুল কাদের ওরফে মাছ কাদের, ১৬ জানুয়ারি পাল্টা অভিযোগ করেন ১১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী অধ্যাপক মো. ইসমাইল, ৬ নম্বর ওয়ার্ডের আশরাফুল আলম, ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডের হাসান মুরাদ বিপ্লব প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন। তবে এসব অভিযোগের বিষয়ে স্থানীয় থানা পুলিশের পক্ষ থেকে এখনো কোনও জবাব আসেনি। অভিযোগকারীদের বেশিরভাগই বিএনপি ও আওয়ামী লীগের কাউন্সিলর প্রার্থী। 

এছাড়া ১৬ জানুয়ারি বিএনপির মেয়র প্রার্থী একই দিনে পাঠানটুলি, পূর্ব বাকলিয়া ও রামপুরা ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের কাউন্সিলর প্রার্থীদের বিরুদ্ধে তার পোস্টার ছেঁড়া, সমর্থকদের হুমকি দমকির অভিযোগ আনেন। এর আগে আওয়ামী লীগের প্রার্থী রেজাউল করিম চৌধুরীও বাকলিয়ায় তার পোস্টার ছেঁড়ার অভিযোগ আনেন। যদিও এসব অভিযোগের কোনও জবাব পাওয়া যায়নি। 

পুলিশ ও নির্বাচন কমিশন সরকার দলীয় প্রার্থীর হয়ে কাজ করছেন বলে অভিযোগ করে বিএনপির মেয়র প্রার্থী ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন ও পুলিশ ‍উৎসবমূখর পরিবেশে ভোট হোক তা চায় না। তারা সরকার দলীয় প্রার্থী ও কর্মীদের সাথে মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে। প্রতিদিন কোনও না কোনও ওয়ার্ডে ধানের শীষের কর্মী সমর্থকদের ওপর হামলা করা হচ্ছে, পোস্টার ছেঁড়া হচ্ছে। এসব অভিযোগ আমলেও নিচ্ছে না প্রশাসন। আমরা এখনও আশা করি প্রশাসন নিরপেক্ষ আচরণের মাধ্যমে একটি উৎসবমূখর নির্বাচন আয়োজনে সহিযোগিতা করবে।’ 

চসিক নির্বাচনের সহকারি রিটার্নিং অফিসার মো. মোজাম্মেল বলেন, ‘প্রার্থীদের যেসব অভিযোগ আমরা পাই তা দায়িত্বপ্রাপ্ত ম্যাজিস্ট্রেট ও স্থানীয় থানার ওসিকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে আমরা চিঠি দিয়ে থাকি। এখন পুলিশ তদন্ত করে যা প্রতিবেদন দেয় সেটা তাদের বিষয়।’  

অভিযোগ প্রসঙ্গে সিএমপি কমিশনার সালেহ মোহাম্মদ তানভীর বলেন, ‘আমরা কোন প্রার্থীর পক্ষে না। নির্বাচন কমিশন থেকে যেসব অভিযোগের তদন্ত করতে বলা হয় তার বেশিরভাগই পোস্টার ছেঁড়া সংক্রান্ত। এসব প্রমাণ করা একটু ডিফিকাল্ট। এছাড়া অন্য অভিযোগগুলোও আমরা যথাযথ প্রক্রিয়া মেনে তদন্ত করে প্রতিবেদন দিয়ে থাকি।’

সিভয়েস প্রতিবেদক

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়