Cvoice24.com


সাংবাদিকতায় আকৃষ্ট দেশের তরুণরা

প্রকাশিত: ০৯:৪৮, ২৬ জুন ২০১৮
সাংবাদিকতায় আকৃষ্ট দেশের তরুণরা

বাবা চেয়েছিলেন আইনজীবী হবো, কিন্তু আমার ইচ্ছা নিজের চিন্তা-ভাবনা বিকশিত করে সৃজনশীল কোনো কাজে নিজেকে জড়িয়ে নেয়ার। সবসময় চ্যালেঞ্জ নিতে পছন্দ করি, তাই চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হওয়াটা অভ্যাসে পরিণত করতে চাই। আর সেই লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য বেছে নেয়া এমন একটি বিষয়, যা আমাকে নিয়ে যাবে সেই অবস্থানে, যেখানে নিজেকে মেলে ধরতে পারবো নিজের মতো করে। কাজ করতে পারবো সমাজ তথা দেশের জন্য। এসব কথা বলেছিলেন স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটির গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী রিথিলা ইসলাম।

রিথিলার মতো এরকম অনেক তরুণ-তরুণী এখন সাংবাদিকতা পেশায় আসতে চাইছে। অথচ কিছুদিন আগেও এ পেশার প্রতি তরুণদের মনোযোগ তেমন একটা দেখা যেত না। বর্তমানে সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় প্রচুর ছাত্রছাত্রী ভর্তি হচ্ছে সাংবাদিকতা বিভাগে।

তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান প্রেস কমিশনের সুপারিশে ১৯৬২ সালের ২ আগস্ট বাংলাদেশে আনুষ্ঠানিকভাবে সাংবাদিকতা শিক্ষা প্রদান শুরু হয়। সাংবাদিক আতিকুজ্জামান খানকে বিভাগের প্রধান নিযুক্ত করা হয়। তখন এক বছর মেয়াদি সান্ধ্যকালীন ডিপ্লোমা কোর্স চালু হয়। প্রথম ব্যাচে ১৬ জন শিক্ষার্থী ভর্তি হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগে ১৯৬৮-৬৯ শিক্ষাবর্ষ থেকে দুই বছরের মাস্টার্স কোর্স চালু হয়। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের পর পর এর নাম হয় গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ। ১৯৭৬ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংবাদিকতা বিভাগে ডিপ্লোমা কোর্সের পরিবর্তে তিন বছর মেয়াদি সম্মান এবং এক বছর মেয়াদি মাস্টার্স কোর্স চালু হয়। ১৯৯৭-৯৮ সালে বিভাগটি কলা থেকে সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদে স্থানান্তর করা হয়।

সাংবাদিকতা এখন আর দ্বিতীয় পেশা হিসেবে পরিগণিত হচ্ছে না। একে পেশা হিসেবে নেয়ার জন্যই এ সময়ের তরুণ-তরুণীরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় বাছাই করছে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ।

সাংবাদিকদের সব বিষয়ে মৌলিক জ্ঞান থাকা জরুরি, এজন্য সাংবাদিকতা বিভাগের পাঠ্যপুস্তকে থাকে ভিন্নতা। সাংবাদিকতা বিষয়ের পাশাপাশি কমিউনিকেশন, মিডিয়া রিসার্চ, পাবলিক রিলেশন, মিডিয়া অ্যাডভোকেসি, এডিটিং প্রভৃতি বিষয় প্রাধান্য পাচ্ছে এ বিভাগে—বলেন ইউনিভার্সিটি অফ লিবারেল আর্টসের শেষ বর্ষের ছাত্র শেখ রাসেল।

দেশে স্যাটেলাইট চ্যানেল ও পত্রিকার সংখ্যা বেড়েই চলেছে। তাই তরুণরাও আকৃষ্ট এ চ্যালেঞ্জধর্মী পেশার প্রতি। সাংবাদিকতায় দুটি বিষয় ত্যাগ করতে হয়— ভয় ও ভবিষ্যৎ চিন্তা। দুটি বিষয়ই ত্যাগ করে পড়াশোনার পাশাপাশি এখনকার শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন মিডিয়া হাউজে শিক্ষানবিশ সাংবাদিকতা করতে পারে এবং করছে, যা তাদের শিক্ষাজীবন সম্পন্নের পর পাথেয় হিসেবে কাজ করবে।

সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ও রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংবাদিকতায় পড়ার সুযোগ রয়েছে। এছাড়া বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়— ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশ, স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি, ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি অব ডেভেলপমেন্ট অলটারনেটিভ, গ্রীন ইউনিভার্সিটি, মানারাত ইউনিভার্সিটিসহ বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংবাদিকতা বিভাগ রয়েছে। সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন মেয়াদে সংক্ষিপ্ত ও ডিপ্লোমা কোর্স করার সুযোগ রয়েছে। প্রেস ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশে রয়েছে সাংবাদিকতার ওপর এক বছর মেয়াদি ডিপ্লোমা কোর্স করার সুযোগ। জাতীয় গণমাধ্যম ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব জার্নালিজম অ্যান্ড ইলেকট্রনিক মিডিয়াসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সাংবাদিকতায় বিভিন্ন স্বল্পমেয়াদি প্রশিক্ষণ নেয়ার সুযোগ রয়েছে।

Journalistবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের নিজস্ব প্রতিবেদক কাজী মোবারক হোসেন। কেন সাংবাদিকতা পেশায় দিন দিন বাড়ছে তরুণদের সংখ্যা জানতে চাইলে তিনি বলেন, সাংবাদিকতা পেশায় সম্মানের পাশাপাশি ‘গ্ল্যামার’ যুক্ত আছে। অনেক নবীনদের এই গ্ল্যামার আকৃষ্ট করছে। তাই তরুণরা নিজ থেকে এই পেশায় আসছে।

বর্তমান সময়ে সাংবাদিকতা পেশা বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। বিশেষ করে তথ্য প্রযুক্তির প্রসার ও অনলাইন মিডিয়া বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে এ পেশায় প্রচুর পরিমাণে লোকবল নিয়োগ দেয়া হচ্ছে। ক্যারিয়ার গড়ার জন্য সাংবাদিকতা পেশা একটা ভালো ক্ষেত্র। মন থেকে এই পেশার প্রতি নিবেদিত থাকতে পারলে এটা একটা চ্যালেঞ্জিং এবং সব থেকে উপভোগ্য পেশা হিসেবে আর্বিভূত হবে সেই লক্ষ্য নিয়েই এই পেশায় এসেছি। এমনটাই বলছিলেন জাগো নিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের নিজস্ব প্রতিবেদক আবু সালেহ সাদায়াত।

কেন সাংবাদিকতায় ক্যারিয়ার করতে চান এমন প্রশ্ন করলে রাইজিংবিডির নিজস্ব প্রতিবেদক আরিফ সাওন বলেন, সততার সাথে সত্যকে উদঘাটন করে তা দেশবাসীর কাছে তুলে ধরতে পারলে সাংবাদিকতার সৃষ্টিশীলতা বৃদ্ধিপাবে। আর তা করলে নিজে হয়ে উঠবো সত্যিকারের সাংবাদিক, জনগণের সাংবাদিক দেশের সাংবাদিক।

নিজেদের চিন্তা ও বুদ্ধিমত্তাকে কাজে লাগিয়ে এ বিভাগের শিক্ষার্থীরা এগিয়ে যাচ্ছে দেশের গণমাধ্যমের প্রতিটি ক্ষেত্রে। তরুণদের এই সাংবাদিকতা প্রীতি গণমাধ্যমগুলোর জন্য আনছে সবুজ সংকেত, যা দেশের জনগণের জন্য বয়ে আনবে সাফল্য।

সিভয়েস/এএইচ

 

তারুণ্য ডেস্ক

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়