ডিএমপির ডিবি হেফাজতে আজিজুল হক ইসলামাবাদী!

সিভয়েস প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৩:৩১, ১২ এপ্রিল ২০২১
ডিএমপির ডিবি হেফাজতে আজিজুল হক ইসলামাবাদী!

মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী

হঠাৎ উধাও হয়ে যাওয়া হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী ডিএমপির গোয়েন্দা পুলিশের হাতে আটক রয়েছে বলে দাবি করেছেন সংগঠনটির চট্টগ্রাম বিভাগের দপ্তর সম্পাদক মো. ইকবাল খলিল। যদিও এ বিষয়ে ডিএমপি ডিবির বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

রোববার রাত ৮টার পর হাটহাজারী বাস স্ট্যান্ড থেকে একটি মাইক্রোবাসে করে আজিজুল হক ইসলামাবাদী ও তার মামাতো ভাই ইকবাল খলীলীকে তুলে নিয়ে যায় কে বা কারা। এরপর থেকে তাদের মোবাইল ফোন বন্ধের পাশাপাশি খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। যদিও ভোর রাতে তার মোবাইলটি সচল হলে তার অবস্থান নিয়ে ধোঁয়াশায় রয়েছে সংগঠনের নেতারা ও পরিবার।  

আজিজুল হকের ছোট ভাই মুহাম্মদ ইরফানুল হক জানান, হাটহাজারী মাদ্রাসায় হেফাজতের বৈঠক শেষে রোববার মাগরিবের নামাজ পড়ে চট্টগ্রামের চকবাজারের বাসার উদ্দেশে রওনা দেন মাওলানা আজিজুল হক। সন্ধ্যা ৭টা নাগাদও পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে মোবাইল ফোনে তার যোগাযোগ হয়। ওই সময় ইসলামাবাদী জানিয়েছিলেন, বাসার দিকে রওনা হয়েছেন, সঙ্গে একজন সফরসঙ্গীও রয়েছেন। তবে রাত ৮টার মধ্যেও বাসায় না ফেরায় আবার যোগাযোগ করা হয়। কিন্তু তার ব্যবহৃত দুটি মোবাইল ফোনই বন্ধ পাওয়া যায়। সারারাতই সেগুলো বন্ধ ছিল। 

সম্ভাব্য সব স্থানে খোঁজ নিয়েও মাওলানা আজিজুল হকের কোনো সন্ধান পায়নি পরিবার। তবে সোমবার ভোর ৪টা থেকে বন্ধ থাকা মোবাইল সচল হলেও তা কেউই রিসিভ করছে না। এমন পরিস্থিতিতে পরিবারের সদস্যদের উদ্বেগ উৎকণ্ঠা, তাকে কি পুলিশ বা গোয়েন্দা সংস্থা আটক করেছে কিনা। যদিও এ বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দায়িত্বশীল কেউ মুখ খুলছেন না। তাই এ ঘটনায় পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় সাধারণ ডায়েরি করার প্রস্তুতি চলছে বলে জানান ইসলামাবাদীর ছোট ভাই মুহাম্মদ ইরফানুল হক।

এদিকে সংগঠনটির চট্টগ্রাম বিভাগের দপ্তর সম্পাদক মো. ইকবাল খলিল বলেন, ‘আজিজুল হক ইসলামাবাদী নিজেই আমাকে ফোন দিয়ে জানিয়েছেন তাকে ঢাকার ডিবি পুলিশ আটক করেছে। তিনি বর্তমানে ঢাকায় ডিবি হেফাজতে আছেন। আমরা ধারণা করছি হেফাজত ইসলামের বিরুদ্ধে করা মামলায় তাঁকে আটক করা হয়েছে।’

পটিয়া উপজেলার হরিণখাইন এলাকার মাওলানা সৈয়দ আহমেদের বাড়ির হাফেজ আহমদ উল্লাহর ছেলে হেফাজত নেতা আজিজুল হক ইসলামাবাদী। ছয় ভাইবোনদের মধ্যে তিনিই সবার বড়। পরিবার-পরিজন নিয়ে তিনি চট্টগ্রাম নগরীর চকবাজার এলাকায় একটি ভাড়া বাসায় থাকতেন। 

এ বিষয়ে হাটহাজারী থানার ওসি রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আজিজুল হক ইসলামাবাদী আমাদের হেফাজতে নেই। তার অবস্থানও আমাদের জানা নেই।’

মুক্তি না দিলে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে: বাবুনগরী

হাটহাজারী থেকে গত রাতে ‘গুম’ হওয়া হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদীকে সুস্থ অবস্থায় ফিরিয়ে দেওয়া এবং নারায়ণগঞ্জের মদনপুর থেকে আটক হওয়া হেফাজতের সহ-অর্থ সম্পাদক মুফতী ইলিয়াস হামিদি সহ সারা দেশে গ্রেফতার হওয়া হেফাজত নেতাকর্মীদের নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানিয়েছেন হেফাজতের আমির আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী। অন্যথায় কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার হুশিয়ারি দেন তিনি। 

সোমবার সংবাদমাধ্যমে প্রেরিত এক বিবৃতিতে হেফাজত আমির বলেন, ‘মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী নিখোঁজ হওয়ার ঘটনায় আমরা গভীরভাবে উদ্বীগ্ন ও চিন্তিত। গত রাত থেকে এখন পর্যন্ত তাঁর কোন খোঁজখবর পাওয়া যাচ্ছে না। দেশের একজন বড় আলেম ও সচেতন নাগরিক হিসেবে তাঁর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সরকার, প্রশাসন সহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব ছিলো। অনতিবিলম্বে আজিজুল হক ইসলামাবাদীকে সুস্থ শরীরে আমাদের মধ্যে ফিরিয়ে দিতে হবে। এবং দক্ষ আলেম মুফতী ও খানকার পীর,মারকাজুল কুরআন মাদরাসার মোহতামীম মুফতি ইলিয়াস হামিদি সহ আটককৃত হেফাজতের সকল নেতাকর্মীদের নিঃশর্ত মুক্তি দিতে হবে। নিরপরাধ মানুষকে এভাবে গ্রেফতার ও হামলা মামলা বরদাশত করা হবে না।’

 জুনায়েদ বাবুনগরী আরো বলেন, ‘কিছুদিন আগে পুলিশ নির্বিচারে গুলি চালিয়ে হেফাজতের নেতাকর্মীদেরকে শহীদ করেছে,রক্তাক্ত করেছে। এরপরও দেশের বিভিন্ন জায়গায় একের পর মিথ্যা মামলা করা হচ্ছে হেফাজত নেতাকর্মীদের নামে। এতো জুলুমের পরও হেফাজতে ইসলাম অত্যন্ত ধৈর্যের পরিচয় দিয়ে যাচ্ছে। সরকার প্রশাসন সহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ হেফাজতে ইসলামের সরলতাকে দূর্বলতা মনে করলে এর চরম মাশুল দিতে হবে। হেফাজতে ইসলাম দেশে শান্তি শৃঙ্খলা চায়। তবে জুলুমবাজদের জুলুমে পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেলে দেয়বাসীকে সাথে নিয়ে সমুচিত জবাব দেওয়া হবে।’

হুশিয়ারি উচ্চারণ করে হেফাজত আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী বলেন, ‘আমাদের নিকট খবর এসেছে, গভীর রাতে বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে হেফাজত নেতাকর্মীদেরকে হয়রানি করা হচ্ছে। মিথ্যা মামলা দিয়ে গ্রেফতার করা হচ্ছে। হেফাজতে ইসলাম  দেশে নৈরাজ্য ও সন্ত্রাস চায় না। হেফাজত ইসলাম শান্তি চায়। হেফাজতে ইসলাম একটি সুশৃঙ্খল ও শান্তিপ্রিয় সংগঠন। তবে নেতাকর্মীদের উপর এভাবে জুলুম চলতে থাকলে আমরা নিশ্চুপ ঘরে বসে থাকবো না। দেশবাসীকে সাথে নিয়ে শান্তিপূর্ণ দূর্বার আন্দোলন গড়ে তুলতে বাধ্য হবো।’ 

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়