তৃণমূলের পরীক্ষায় চট্টগ্রামের এমপিরা, পরীক্ষক কেন্দ্রীয় নেতারা

সিভয়েস প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৪:০৩, ৭ জুন ২০২১
তৃণমূলের পরীক্ষায় চট্টগ্রামের এমপিরা, পরীক্ষক কেন্দ্রীয় নেতারা

একচ্ছত্র ক্ষমতায় থাকলেও ভবিষ্যতে বহুমুখী চ্যালেঞ্জও দেখছে শক্তিশালী আওয়ামী লীগ। আর এসব মোকাবিলায় সাংগঠনিকভাবে তৃণমূলকে ঢেলে সাজাতে চায় ক্ষমতাসীনরা। দলের সভাপতি শেখ হাসিনার নির্দেশনাও এমনটাই। কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এ প্রক্রিয়ায় বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছেন খোদ দলের সাংসদরাই। নিজের জায়গা পাকাপোক্ত রাখতে ত্যাগীদের সরিয়ে বিভিন্ন স্থানে বসিয়ে রেখেছেন অনুসারীদের। 

এমন পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগের তৃণমূল নেতাকর্মীদের সঙ্গে স্থানীয় সংসদ সদস্যদের বিরোধের অভিযোগ দীর্ঘদিনের। এছাড়াও দলের মধ্যে রয়েছে নানা গ্রুপিং। বেশ কয়েকটি ওয়ার্ড, থানা এমনকি মহানগর কমিটিও মেয়াদোত্তীর্ণ। এসবের সমাধানে এবার চট্টগ্রাম মহানগরের সংসদীয় আসনের এমপিদের পাশাপাশি তৃণমূল আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে বসতে যাচ্ছেন কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্তরা। এটাকে আবার কোনো নেতা বলছেন, কেন্দ্রীয় নেতাদের সামনে তৃণমূলের কাছে স্থানীয় সাংসদদের পরীক্ষা।     

এদিকে করোনার কারণে পুরোদমে না হলেও সীমিত পরিসরে মতবিনিময়সভা ও মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটিগুলোর সম্মেলন করার কথা ভাবা হচ্ছে। পাশাপাশি সম্মেলন হওয়া মহানগর, জেলা ও উপজেলা কমিটি পূর্ণাঙ্গ করা এবং কেন্দ্রে জমাপড়া অভিযোগগুলোও যাচাই-বাছাই ও সদস্য সংগ্রহের কাজও শুরু হবে। এসব কাজে এবার প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানোর চিন্তাভাবনা চলছে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের মাঝে। 

দলের শীর্ষ পর্যায় থেকে নির্দেশনা পেয়েই দল গোছাতে মাঠে নেমেছেন কেন্দ্রীয় নেতারা। এরই অংশ হিসেবে আগামী ১৯ ও ২০ জুন দুদিনের সফরে চট্টগ্রাম আসছেন বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ ও সাংগঠনিক সম্পাদক হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন। তারা নগরের চার আসনের একেবারে তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে পর্যন্ত বৈঠক করবেন। এরপরের দিন পৃথকভাবে বসবেন মহানগর আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে। 

আওয়ামী লীগের দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে ১৯ জুন সকাল ১০টায় চট্টগ্রাম ৪, ৫ ও ৮ আসন, দুপুর আড়াইটায় চট্টগ্রাম ১০ আসন, বিকেল সাড়ে ৪টায় চট্টগ্রাম ৯ আসন ও সন্ধ্যা ৭টায় চট্টগ্রাম ১১ আসনের সংসদ সদস্য এবং সংশ্লিষ্ট থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের সঙ্গে বৈঠক করবেন কেন্দ্রীয় নেতারা। 

৮ নম্বর আসনের আওতাধীন নগরের পাঁচটি ওয়ার্ড, ৪ নম্বর আসনের আওয়তাধীন নগরের দুটি ওয়ার্ড ও ৫ নম্বরের আওয়তাধীন নগরের দুটি ওয়ার্ড রয়েছে। সেগুলোর সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকরা বৈঠকে অংশ নিবেন।  

এরপরের দিন রবিবার সকাল সাড়ে ৯টায় চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্যদের সঙ্গে সভা। সকাল সাড়ে ১১টায় সম্পাদকমণ্ডলীর সঙ্গে সভা এবং বিকেল ৩টায় চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতিদের সঙ্গে সভা করবেন কেন্দ্রীয় নেতারা।  

এর আগে আগামী ৮ ও ৯ জুন চট্টগ্রাম উত্তর ও দক্ষিণ জেলার সংসদীয় আসনের এমপিদের সঙ্গে তৃণমূল নেতাদের নিয়ে ঢাকার কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বৈঠকে বসবেন কেন্দ্রীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। 

বিষয়টি নিশ্চিত করে চট্টগ্রাম বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন সিভয়েসকে বলেন, ‘করোনার কারণে দল গোছানোর কাজ থমকে আছে। এরপরও সাংগঠনিক কার্যক্রম থেমে থাকতে পারেনা। স্বাস্থবিধি মেনে তা শুরু করা হচ্ছে। কদনি আগে উত্তর ও দক্ষিণের এমপিদের সঙ্গে বসেছিলাম। ৮ ও ৯ জুন দক্ষিণের কয়েকটা উপজেলার নেতাদের সঙ্গে বসব। এরপর আমরা ১৯ ও ২০ জুন চট্টগ্রামে যাব। সেখানে মহানগরের আওয়াতাধীন ওয়ার্ড ও থানার নেতাদের সঙ্গে এমপিদের নিয়ে বসব।’

তিনি আরও বলেন, ‘দীর্ঘ দিন ক্ষমতায় থাকার কারণে দলের মধ্যে নানা সমস্যা হচ্ছে। দলের তৃণমূলের সঙ্গে এমপিদের দূরত্বও বেড়েছে। নানা গ্রুপিং তৈরী হয়েছে। সব মিলিয়ে দলকে গোছানোর জন্য আমরা সবাইকে নিয়ে বসব। সংগঠনকে গতিশীল ও কার্যকর করতে এ উদ্যোগ। মূলত সেকারণেই এমপিদের তৃণমূলের সঙ্গে বৈঠকে রাখা। কেননা তারাও মাঠের রাজনীতিতে বড় শক্তি।’ 

করোনার কারণে দীর্ঘ সময় দল গোছানোর কাজ স্থগিত রাখতে হয়েছিল আওয়ামী লীগকে। প্রায় সাত মাস পর গত সেপ্টেম্বরে আবার এই কাজ শুরু করেছিল দলটি। এর মধ্যে ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ আওয়ামী লীগসহ গত বছরের শেষে দিকে সম্মেলন হওয়া সহযোগী সংগঠনগুলোর পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়। পূর্ণাঙ্গ করা হয় উপ-কমিটিগুলোও।

এই সময়ে ওয়ার্ড ইউনিয়ন থেকে শুরু করে মেয়াদোত্তীর্ণ জেলা সম্মেলনের কাজও শুরু হয়েছিল। দ্বিতীয় দফায় কাজ শুরু হওয়ার পরে সারা দেশের বিভিন্ন স্থানে ওয়ার্ড, ইউনিয়ন, উপজেলা ও জেলার সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এসব সম্মেলনে স্বাভাবিকভাবেই অনেক লোকের সমাগম হয়। পরে আওয়ামী লীগ সভাপতি লোকসমাগম বেশি হয় এমন সভা-সমাবেশ ও সম্মেলন বন্ধ রাখার নির্দেশনা দেন। এরই মধ্যে করোনার দ্বিতীয় ধাক্কা আঘাত হানে।

দলীয় সূত্র জানায়, করোনার দ্বিতীয় ঢেউ ভয়াবহ রূপ নিয়ে কিছুটা কমলেও এখনো নিয়ন্ত্রণে আসেনি। তাই এর গতি-প্রকৃতি কী হয় সেটা নিয়ে এখনো উদ্বেগ আছে। পরিস্থিতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। বিশেষ করে ভারতীয় ধরন শঙ্কা বাড়াচ্ছে। এ কারণেই আওয়ামী লীগ আরও কিছুদিন বড় ধরনের জনসমাবেশ এড়িয়ে চলতে চাইছে। 

আবার তৃণমূল পর্যন্ত দলকে ঢেলে সাজানোর কাজও একেবারে বন্ধ রাখতে চায় না ক্ষমতাসীনরা। তাই সীমিত পরিসরে জনসমাবেশ এড়িয়ে করা যায় এমন কাজগুলোই কেবল চালিয়ে যাওয়া হবে।

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়