মুক্তিযোদ্ধা ইউনুছই নতুন সিডিএ চেয়ারম্যান!

রবিউল রবি, সিভয়েস২৪

প্রকাশিত: ১৯:৪১, ১৭ এপ্রিল ২০২৪
মুক্তিযোদ্ধা ইউনুছই নতুন সিডিএ চেয়ারম্যান!

চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) চেয়ারম্যান জহিরুল আলম দোভাষের মেয়াদ আছে আর সপ্তাহখানেক। ঈদের আগে গুঞ্জন শোনা গিয়েছিল সংস্থাটির পরবর্তী চেয়ারম্যান হচ্ছেন নগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি খোরশেদ আলম সুজন! তবে ঈদের পর সেই গুঞ্জন হাওয়ায় মিলিয়ে গেছে। শেষ মুহূর্তের আলোচনায় এলেন আওয়ামী লীগের জাতীয় কমিটির সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ ইউনুছ। বড় ধরনের কোনো ‘তদবিরে পরিবর্তন’ না এলে ইউনুছই বসছেন সিডিএ চেয়ারম্যানের চেয়ারে!

বুধবার (১৭ এপ্রিল) সিডিএ সংশ্লিষ্ট একাধিক বিশ্বস্ত সূত্রে বিষয়টি জানা গেছে।

গুঞ্জন রয়েছে, খোরশেদ আলম সুজনকে ‘ঠেকাতে’ একটি বলয় ‘নির্ঝঞ্ঝাট’ নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ ইউনুছকে সামনে এনেছেন। তাঁকে সিডিএ’র চেয়ারে বসাতে চলছে জোর তৎপরতা।  যদিও খোরশেদ আলম সুজন ছাড়া সিডিএতে যাওয়ার ‘দৌঁড়ে’ ছিলেন চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সিডিএর সাবেক বোর্ড সদস্য মফিজুর রহমান এবং উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের নেতা ও সিডিএর সাবেক বোর্ড সদস্য ইউনুছ গণি চৌধুরী।

নিয়োগ প্রসঙ্গে কথা বলতে মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ ইউনুছের মোবাইল ফোনে বুধবার সন্ধ্যায় একাধিকবার কল করা হয়। প্রতিবারই তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

তবে বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ ইউনুছই পরবর্তী সিডিএ চেয়ারম্যান হচ্ছেন জানিয়ে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান সিভয়েস২৪-কে বলেন, ‘আমি সিডিএ চেয়ারম্যান পদে নিয়োগ পেতে কোনো তদবির করিনি কখনো। বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এখন আমাকে দলের যে দায়িত্ব দিয়েছেন, তা আমার জন্য অনেক বড় পাওনা। তিনি যখন যে দায়িত্ব দেবেন, তাতেই আমি সন্তুষ্ট।’

চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মধ্যকার সম্পর্কের ‘বৈরিতা’ এবার কাটবে কিনা—এমন প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগ নেতা মফিজ বলেন, ‘মেয়র সাহেবের সাথে মুক্তিযোদ্ধা ইউনুছ সাহেবের ভালো সম্পর্ক। আশা করি দুই সংস্থাই যেহেতু স্বায়ত্তশাসিত সেহেতু তারা তাদের বিধি অনুযায়ী কাজ করবে। আগের চেয়ারম্যানের সাথেও মেয়র সাহেবের ভালো সম্পর্ক ছিল।’

আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা বলছেন, খোরশেদ আলম সুজনকে ঠেকাতে ‘মরিয়া’ একটি বলয়। ওই বলয়ের কেউ চান না সুজন সিডিএর চেয়ারম্যানের চেয়ারে বসুক! যার কারণে তাঁর চেয়েও ‘হাইপ্রোফাইল’ হিসেবে আনা হয়েছে চট্টগ্রামের মুক্তিযুদ্ধের বিজয়মেলা পরিষদের মহাসচিব  মোহাম্মদ ইউনুছকে। রাজনৈতিক অঙ্গনে ‘নির্ঝঞ্ঝাট’ নেতা হিসেবে পরিচিত তিনি।

জানা গেছে, ছাত্রলীগের স্কুল সভাপতি থেকে নগর সভাপতি পর্যন্ত হয়েছেন মোহাম্মদ ইউনুছ। এ বীর মুক্তিযোদ্ধা ১৯৬৮ থেকে ১৯৬৯ সাল পর্যন্ত চট্টগ্রাম মিউনিসিপ্যাল হাই স্কুল ছাত্রলীগ সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৬৯ থেকে ১৯৭০ পর্যন্ত বৃহত্তর চট্টগ্রাম জেলা সর্বদলীয় মাধ্যমিক স্কুল ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি ছিলেন। ১৯৭০ থেকে ১৯৭১ পর্যন্ত চট্টগ্রাম শহর ছাত্রলীগের সহসাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭২-৭৩ সালে চট্টগ্রাম শহর ছাত্রলীগের প্রচার সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন।

১৯৭৩ থেকে ১৯৭৫ পর্যন্ত দুই মেয়াদে চট্টগ্রাম শহর ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি। ১৯৭৭ থেকে ১৯৭৮ পর্যন্ত চট্টগ্রাম কারাগারে বন্দি অবস্থায় চট্টগ্রাম শহর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ১৯৮০ থেকে ১৯৮২ সাল পর্যন্ত চট্টগ্রাম নগর ছাত্রলীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। এ সময় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন সাবেক সিটি মেয়র আজম নাছির উদ্দীন।

এরপর ১৯৮২ থেকে ১৯৮৪ সাল পর্যন্ত দুবার বাংলাদেশ ছাত্রলীগ জাতীয় কার্যকরী কমিটির সদস্য ছিলেন। ১৯৮৪ সালে আওয়ামী যুবলীগ কেন্দ্রীয় কার্যকরী কমিটি আন্তর্জাতিক বিষয়ক সহ সম্পাদক হন। ১৯৮৮ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগ কার্যকরী কমিটির সদস্য ছিলেন।

বীর মুক্তিযোদ্ধা ইউনুছ ১৯৫৫ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন। চট্টগ্রাম কারাগার থেকে বি.কম পরীক্ষায় অংশ নিয়ে তিনি ডিগ্রি পাস করেন। তিনি হাটহাজারীর নুর আলী মিয়ার হাট ফরহাদাবাদ গ্রামের হিম্মত মুহুরী বাড়ীর মরহুম নুর হোসেনের সন্তান। তাঁর বাবা ছিলেন বাংলাদেশ রেলওয়ের সাবেক উচ্চতর হিসাব কর্মকর্তা। বর্তমানে  তিনি চট্টগ্রাম মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলা পরিষদের মহাসচিব এবং বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিরোধ যোদ্ধা ফোরাম ‘৭৫ এর আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

এছাড়া তিনি চট্টগ্রাম মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও উচ্চ বিদ্যালয় শিক্ষা বোর্ড সদস্য, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য, চট্টগ্রাম মা ও শিশু জেনারেল হাসপাতালের আজীবন সদস্য, চট্টগ্রাম ডায়াবেটিক সমিতির আজীবন সদস্য, বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি, চট্টগ্রাম জেলার আজীবন সদস্য, বাংলাদেশ ভারত মৈত্রী সমিতির আজীবন সদস্য, চট্টগ্রাম শহর সমাজসেবা প্রকল্প সমন্বয় পরিষদ- ১ এর আজীবন সদস্য এবং পৌর জহুর হকার মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন।

এর আগে, গত ৪ এপ্রিল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সুজনের সিডিএ চেয়ারম্যান হওয়ার অভিনন্দন বার্তা ভেসে বেড়িয়েছিল। তবে সেটি ছিল স্রেফ গুজব। যদিও ওই সময় অনেকে সুজনের সিডিএ চেয়ারম্যান হওয়া নিয়ে বিরোধিতাও করেছেন।

২০০৯ সাল থেকে সরকারের যুগ্ম সচিব পদ মর্যাদার এই পদে চুক্তিভিত্তিক রাজনৈতিক নিয়োগ দিয়ে আসছে সরকার। সবার প্রথমে মহানগর আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ ও বর্তমানে বোয়ালখালী-চান্দগাঁও আসনের সংসদ সদস্য আবদুচ ছালাম ছিলেন চেয়ারম্যান হিসেবে। টানা ১০ বছর চেয়ারম্যান থাকার পর ২০১৯ সালের ১৮ এপ্রিল নিয়োগ দেওয়া হয় মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি জহিরুল আলম দোভাষকে। আগামী ২৪ এপ্রিল পর্যন্ত তাঁর মেয়াদ রয়েছে।

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়