খাগড়াছড়ির সাত খুনের তিন মামলা যাচ্ছে পিবিআইতে

প্রকাশিত: ১৪:৪৭, ২৩ মার্চ ২০১৯
খাগড়াছড়ির সাত খুনের তিন মামলা যাচ্ছে পিবিআইতে

খাগড়াছড়ির সাত খুনের তিনটি মামলায় বিজ্ঞ আদালত চলতি মাসের ১০ মার্চপুলিশ ব্যূরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)’-কে দিয়ে তদন্তের নির্দেশে দিয়েছেন। এখন মামলার নথিপত্র সংগ্রহ করে পিবিআইতে প্রেরণের প্রক্রিয়া চলছে বলে জানান খাগড়াছড়ি সদর থানার ওসি সাহাদাত হোসেন টিটো।

আদালত সূত্রে জানা গেছে, ২০১৮ সালের ১৮ আগস্ট সকালে দিনের আলোতেই খাগড়াছড়ি শহরের স্বনির্ভর বাজারের সকাল সাড়ে ৮টার দিকে এবং দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে খাগড়াছড়ি শহরের স্বনির্ভর এবং পেরাছড়ায় সশস্ত্র দুর্বৃত্তদের দুই দফা হামলায় জনের প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। সেই ঘটনার সময় স্বনির্ভর বাজার এলাকায় ঘটনাস্থলে জেলা পুলিশের দুটি সিসি ক্যামেরাও সক্রিয় ছিল। সাত হত্যাকান্ডের পর জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের একজন সদস্যের নেতৃত্বে ঘটনাস্থল পরিদর্শন ছাড়াও জেলা প্রশাসনের গঠিত একটি তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন সরকারের উচ্চ পর্যায়ে প্রেরণ করা হয়। সেই ঘটনায় প্রথমে পুলিশ বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা দুর্বৃত্তদের দায়ী করে একটি মামলা (জিআর-৩২৯/১৮) দায়ের করা করা হয়। এই মামলার পর পর প্রসিত খীসা নেতৃত্বাধীনইউপিডিএফ পক্ষ থেকে জনসংহতি সমিতি (এম এন লারমা) অংশের শীর্ষনেতাসহ ৫৬ জনের সুনির্দিষ্ট নাম-ঠিকানা উল্লেখ করে গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম সহ-সভাপতি উচিং শৈ চাক (সিআর-২৯৭/১৮) এবং পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার কোষাধ্যক্ষ মিটন চাকমা (সিআর-২৯৮/১৮) বাদী হয়ে আরো দুটি মামলা দায়ের করেন খাগড়াছড়ি কগনিজেন্স আদালতে।

গত বছরের ১৮ আগস্ট সকালে খাগড়াছড়ি শহরের স্বনির্ভর বাজারে সংঘটিত ঘটনায় গঠিত তদন্ত প্রতিবেদনের সূত্র ধরে খাগড়াছড়ির জেলা প্রশাসক মো. শহিদুল ইসলাম জানান, আমি খাগড়াছড়ি জেলায় দায়িত্ব নেয়ার অল্প দিনের মাথায় জেলা শহরে আঞ্চলিক দলের সশস্ত্র দুর্বৃত্তদের হামলায় জনের মৃত্যু ঘটে। অনাকাঙ্খিত এই ঘটনার তদন্তে জেলা প্রশাসন, পুলিশসহ অন্যদের নিয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।

তিনি জানান, সেই তদন্ত কমিটি সন্ত্রাস অপরাধরোধে ৫টি সুপারিশসহ একটি প্রতিবেদন সরকারের সংশ্লিষ্ট উচ্চ পর্যায়ে প্রেরণ করা হয়। তাতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর যাতায়াত সহজ দ্রুত করার জন্য জন অধ্যুষিত অথচ চলাচলের কষ্টসাধ্য এলাকায় প্রয়োজনীয় রাস্তা, ব্রিজ, কালভার্ট নির্মাণ, সন্ত্রাসী বা সহিংস ঘটনাবলী সংঘটনের পূর্বাভাস সম্পর্কে খবর সংগ্রহের ব্যাপারে গোয়েন্দা সংস্থা সমূহের কার্যক্রম আরো ব্যাপকতর করার পাশাপাশি সংগৃহীত তথ্যমতে জরুরি ভিত্তিতে কার্যক্রম গ্রহণের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়।

সেই প্রতিবেদনে প্রতিটি সংঘটিত অপরাধেরই বিচার নিশ্চিতের লক্ষ্যে সংঘটিত অপরাধের বিষয়ে মামলা দায়েরর জন্য উদ্বুদ্ধকরণ সভা, জনসংযোগ মত বিনিময় সভা করার কথা উল্লেখ করা হয়।

পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশের শেষ দিকে থানাসহ প্রতিটি পুলিশ ফাঁড়ি পুলিশ বক্সে জনবল সুবিধা বৃদ্ধি এবং অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে প্রয়োজনীয় কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগ কামনা করা হয়।

কিন্তু সেই প্রতিবেদনের খুব বেশি অগ্রগতি না হওয়ায় একের পর এক দুর্ধর্ষ হত্যাকান্ড চলেছেই। এরমধ্যেই চলতি বছরের ১৯ ফেব্রুয়ারি (মঙ্গলবার) সন্ধ্যা ৬টার দিকে খাগড়াছড়ি জেলা শহরের নারানখাইয়া এলাকার রেড স্কোয়ারে দুর্বৃত্তদের গুলিতে তুষার চাকমা (১৯) নামে এক যুবককে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। তাঁর বাড়ি লক্ষীছড়ি উপজেলার।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ঘটনার সময় নারানখাইয়া এলাকায় খাগড়াছড়ি-পানছড়ি মূল সড়ক লাগোয়া জিনা ইঞ্জিনিয়ারিং নামক মোটরসাইকেল গ্যারেজেই বসে কয়েকজনের সাথে গল্প করছিল তুষার চাকমা। হঠাৎ করে একটি মটর সাইকেলে দুইজন অস্ত্রধারী এবং কয়েকজন পায়ে হেঁটে এসে তুষার চাকমার নাম জানতে চায়। পরিচয় নিশ্চিত হবার পার পরই তুষার চাকমাকে ওয়ার্কশপ সংলগ্ন স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) কার্যালয়ের দ্বিতীয় গেইটের পাশে এনে তাঁকে খুব কাছ থেকে কয়েকটি গুলি করলে সাথে সাথেই তুষার চাকমা মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। জিনা ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপ বসা অন্যরা বলেন, তুষারসহ আমরা একসাথে গল্প করছিলাম। এসময় একদল অস্ত্রধারী দোকানে এসে চুপ থাকার নির্দেশ দেন। এক পর্যায়ে তুষারের নাম-ঠিকানা জিজ্ঞেস করে দোকানের পাশে নিয়ে গুলি করে। মৃত্যু নিশ্চিত হবার পর দুর্র্বৃত্তরা ফাঁকা গুলি করতে করতে এলজিইডি পেছনের সড়ক ধরে চলে যান।

খাগড়াছড়িরর সেভেন মার্ডার ঘটনার সাত মাসের মাথায় গত ১৮ মার্চ সন্ধ্যায় রাঙামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলার নয় কিলো এলাকায় আবারও সন্ত্রাসীদের বেপরোয়া ব্রাশ ফায়ারে নির্মম হত্যার শিকার হন আরো জনের। সর্বশেষ গত ১৮ জানুয়ারি বাঘাইছড়ি উপজেলার কিলো এলাকায় সন্ধ্যায় নির্বাচনী দায়িত্ব পালন শেষে ফেরার পথে সন্ত্রাসীদের ব্রাশফায়ারে নিহত হন প্রিজাইডিং অফিসার আব্দুল হান্নান, পোলিং অফিসার আল-আমিন, মো: আমির হোসেন, গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদস্য (ভিডিপি) সদস্য বিলকিস আক্তার, আসনার সদস্য-মিহির কান্তি দত্ত, জাহানারা বেগম এবং গাড়ীর হেলপার মন্টু চাকমা

হামলার সময় তিনটি গাড়ীতে প্রায় ২৪ জন দায়িত্বরত কর্তকর্তা,পুলিশ আনসার সদস্য ছিল বলে জানায় আহত পুলিশ সদস্য।

২০১৮ সালের ১৮ আগস্ট সেই ঘটনায় নিহতরা হলেন- ইউপিডিএফ সমর্থিত পিসিপি খাগড়াছড়ি শাখার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি তপন চাকমা, সহ সাধারণ সম্পাদক এলটন চাকমা, গণতান্ত্রিক যুবফোরামের সহ সভাপতি পলাশ খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়