Cvoice24.com

অচল চবিতে নাছির গ্রুপের ‘সঙ্গ’ নিলেন নওফেল অনুসারীরা

চবি প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১৫:০৯, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২২
অচল চবিতে নাছির গ্রুপের ‘সঙ্গ’ নিলেন নওফেল অনুসারীরা

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি বর্ধিত করার দাবিতে চলমান অবরোধে সংহতি জানিয়েছে শিক্ষা উপমন্ত্রীর অনুসারীদের উপ-গ্রুপ ‘বিজয়’। যদিও শিক্ষা উপ-মন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বারবার জানিয়ে আসছেন তাঁর কোন গ্রুপ নেই। 

সোমবার (১৯ সেপ্টেম্বর) দুপুর দেড়টার দিকে বিজয়ের অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী মূল ফটকে অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করে।

এর আগে সকাল সাড়ে ৭টা থেকে নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আজম নাছির উদ্দীনের অনুসারী ছয়টি গ্রুপ ভিএক্স, বাংলার মুখ, রেড সিগনাল, কনকর্ড, এপিটাফ ও উল্কার নেতাকর্মীরা লাগাতার অবরোধের ডাক দেয়।

অবরোধে সকাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শাটল ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে। ক্যাম্পাস থেকে শিক্ষকদের কোনো বাস শহরে যেতে পারেনি। স্থগিত করা হয়েছে বিভিন্ন বিভাগের ক্লাস ও পরীক্ষা। এতে কার্যত অচল হয়ে পড়েছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। পরে বেলা ১২টার দিকে মূল ফটক খুলে দেয় বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা। তবে দেড়টার দিকে বিজয় গ্রুপের নেতাকর্মীরা এসে ফের মূল ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেয়।

বিজয় গ্রুপের নেতা ও ছাত্রলীগের উপ-আপ্যায়ন বিষয়ক সম্পাদক নয়ন চন্দ্র মোদক বলেন, ‘পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে যোগ্যদের মূল্যায়ন না করে অছাত্র, মাদকসেবী ও বিবাহিতদের পদায়ন করা হয়েছে। আমরা চাই কমিটি বর্ধিত করে যোগ্যদের মূল্যায়ন করা হোক। না হয় আমাদের আন্দোলন চলমান থাকবে।’

আরেক নেতা দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘প্রথম থেকে আমরা কমিটি বর্ধিত করার দাবি জানিয়ে আসছি। কিন্তু শাখা ছাত্রলীগের দুই নেতা প্রহসনমূলক হল-ফ্যাকাল্টি কমিটি গঠনের প্রেস বিজ্ঞপ্তি দিয়ে ছলচাতুরি ও প্রতারণা করছেন। সবকিছু মিলিয়েই আন্দোলনের ডাক দিয়েছেন পদবঞ্চিতরা।’

প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালের ১৪ জুলাই চবি শাখা ছাত্রলীগের দুই সদস্যবিশিষ্ট কমিটি ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। কমিটির মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার ছয় বছর পর গত জুলাইয়ে ঘোষণা করে ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি। ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্র অনুসারে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের কমিটিতে মোট সদস্য হবেন ১৫১ জন। তবে গঠনতন্ত্র ভেঙ্গে চার শতাধিক সদস্যের বিশাল কমিটি গঠন করা হলেও সন্তুষ্ট হননি নেতাকর্মীরা। কমিটি পুনর্গঠনের দাবিতে মানববন্ধন, বিক্ষোভসহ নানা কর্মসূচি পালন করে আসছেন শাখা ছাত্রলীগের উপ-গ্রুপগুলো।

এমনকি কমিটি বর্ধিত না করলে সেপ্টেম্বরে ‘সহিংস’ আন্দোলনের হুশিয়ারি দেয় নেতাকর্মীরা। তাদের দাবি পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে অনেকেরই ছাত্রত্ব নেই, কেউ বিবাহিত, কেউবা চাকরিজীবী। কারো নামে আবার আছে একাধিক মামলাও। অনেকের বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে চাঁদাবাজি টেন্ডারবাজির। ছাত্রী হেনস্তায় বহিষ্কার হওয়া কয়েকজনও পদ পেয়েছেন কমিটিতে। এমন বিতর্কিত নেতাদের নিয়ে ‘ঢাউস কমিটি’ গঠনের প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন সাবেক ছাত্রলীগের নেতারাও।

এদিকে আন্দোলনের কোনো অর্থ খুঁজে পাচ্ছেন না বলে জানিয়েছেন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন টিপু। তিনি বলেন, ‘কমিটি বর্ধিত করা একটি আলোচনার বিষয়। বিশ্ববিদ্যালয়কে জিম্মি করে আন্দোলন করার বিষয় না। সাধারণ শিক্ষার্থীদের হয়রানি করে এ ধরনের আন্দোলন গ্রহণযোগ্য নয়। আর কেউ চাইলে তো কমিটি বর্ধিত করতে পারবে না। আমি নিজে থেকে তাদের দাবি দাওয়া কেন্দ্রে জানিয়েছি। নাছির ভাইকে জানিয়েছি। এখন হুট করে অহেতুক অবরোধের কোনো অর্থ খুঁজে পাচ্ছি না।’

শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি রেজাউল হক রুবেল ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ কর্মী আছে কয়েক হাজার। যতোই চেষ্টা করি সবাইকে তো কমিটিতে সুযোগ দেওয়া সম্ভব নয়। আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি যোগ্যতার ভিত্তিতে কমিটি দিতে। হ্যাঁ কিছু নেতাকর্মী বাদ পড়েছে। তাদের বিষয়ে আলোচনা হচ্ছে। এখন এটা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়কে জিম্মি করবে কেন? এছাড়া যোগ্য ও ত্যাগীদের মূল্যায়ন করতে হল ফ্যাকাল্টি কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথাও জানান ছাত্রলীগের এ নেতা।

সহকারী প্রক্টর শহীদুল ইসলাম বলেন, ‘কোনো পূর্বঘোষণা ছাড়াই তারা ভোর থেকে অবরোধ করছেন। তাদের দাবি সংগঠনের কাছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের এখানে কী করার আছে? তাদের কমিটি সংক্রান্ত দাবির জন্য বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ রাখা দুঃখজনক। আমরা তাদের সঙ্গে কথা বলে সমাধানে চেষ্টা করছি।’

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়