Cvoice24.com

চবি উপাচার্য কন্যার বিরুদ্ধে টাকা আত্মসাতের অভিযোগ!

সিভয়েস প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৭:৩০, ২২ মার্চ ২০২৩
চবি উপাচার্য কন্যার বিরুদ্ধে টাকা আত্মসাতের অভিযোগ!

আড়াই লাখ টাকা ধার নিয়ে ১৪ মাস ধরে পরিশোধ না করার অভিযোগ উঠেছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতার কন্যা রিফাত মোস্তফা টিনার বিরুদ্ধে। পাওনা টাকা ফেরত চেয়ে ভুক্তভোগী শিক্ষক শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইআর) সাবেক সহযোগী অধ্যাপক মো. আসহাব উদ্দিন খালেদ দুই দফা চিঠিও দিয়েছেন। তবে টাকা ধার নেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করছেন উপাচার্যের কন্যা টিনা।

জানা যায়, গত বছরের ১৯ জানুয়ারি উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতারের অনুরোধে ও ড. উদিতি দাশের সুপারিশে উপাচার্য কন্যা রিফাত মোস্তফা টিনাকে ২ লক্ষ টাকা ধার দেন শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইআর) অবসরপ্রাপ্ত সহযোগী অধ্যাপক মো. আসহাব উদ্দীন খালেদ। এরপর ২৪ এপ্রিল তাকে আরও ৫০ হাজার টাকা ধার দেন তিনি। 

কিন্তু টাকা ধার নেয়ার ১৪ মাসের মধ্যেও টাকা ফেরত দিচ্ছেন না বলে অভিযোগ তুলছেন পাওনাদার মো. আসহাব উদ্দীন খালেদ। এজন্য গত ২ জানুয়ারি টাকা চেয়ে কন্যা রিফাত মোস্তফা টিনা বরাবর একটি চিঠি পাঠান তিনি। এর তিনদিন পর ৫ জানুয়ারি মো. আসহাব উদ্দীনকে ডেকে চিঠি প্রত্যাহার করতে বলেন উপাচার্য। ৮ জানুয়ারি আইইআরের ড. উদিতি দাশসহ ৬ জন শিক্ষক তার বাসায় এসে তাকে উপাচার্য অফিসে নেওয়ার জন্য চাপ দেন। এর মধ্যে ২-১ জন তাকে নানা ভয়ভীতি ও হুমকি দেন— এমনটাই অভিযোগ শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অবসরপ্রাপ্ত সহযোগী অধ্যাপক মো. আসহাব উদ্দীন খালেদের। এসব অভিযোগ এনে দ্বিতীয়বারের মতো পাওনা টাকা চেয়ে গত ১৪ মার্চ উপাচার্য কন্যা রিফাত মোস্তফা টিনা বরাবর এবং ২১ মার্চ শিক্ষক সমিতি বরাবর চিঠি পাঠান তিনি।

এদিকে উপাচার্য কন্যা রিফাত মোস্তফা টিনাকে পাঠানো আসহাব উদ্দিনের দু’টি চিঠি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মকর্তাদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে। এরপরই এ নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে তোলপাড়-কানাঘুষা।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, ‘অবৈধ প্রক্রিয়ায়’ আত্মীয়করণের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাবরেটরি স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে নিয়োগ পাওয়ায় আইইআরের শিক্ষকরা বেশ কিছু বছর ধরে টানাপোড়নে ছিলেন। একবার তাঁদের পুনরায় কলেজে ফিরিয়ে নেওয়া হয়। এরপর আন্দোলনে নামেন এই শিক্ষকরা। শিরীণ আখতার উপাচার্য হওয়ার পর তাঁদের বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরিয়ে আনা হয়। এই দীর্ঘ প্রক্রিয়ায় আইইআরের শিক্ষকদের আইনি মোকাবিলাসহ বিভিন্ন দেনদরবারের খাতে প্রচুর টাকা খরচ হয়। ওদিকে অবসরের অপেক্ষায় থাকা আসহাব উদ্দিনের কাছে গ্রামের জমি বিক্রী করা বাবদ বেশ কিছু টাকা ছিল। তাঁর কাছ থেকে চার সহকর্মী কয়েক লাখ টাকা ধারও নেন। আসহাব উদ্দিনের কাছে টাকা থাকার বিষয়টি জানতেন আইইআরের আরেক শিক্ষক উদিতি দাশও।

টিনার কাছে পাঠানো চিঠিতে আসহাব উদ্দিন উল্লেখ করেন, ‘আপনার মা অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতারের অনুরোধে ও উদিতি দাশের সুপারিশে আপনাকে প্রথমে দুই লাখ টাকা হাওলাত দিয়েছিলাম। পরবর্তীতে গত বছরের ২৪ এপ্রিল আপনার বাসায় গেলে আপনি আমার কাছ থেকে আরও ৫০ হাজার টাকা হাওলাত নেন। অর্থাৎ সর্বসাকুল্যে আপনি আমার কাছ থেকে আড়াই লাখ টাকা হাওলাত নেন। প্রথম দুই লাখ টাকা পুরাতন আইইআর ভবনে উদিতি দাশের সামনে আপনার হাতে তুলে দিয়েছিলাম। আর শেষ পঞ্চাশ হাজার টাকা আপনার বাসায় আপনার মায়ের সামনে দিয়েছিলাম।’

টিনার সঙ্গে কোনো পূর্ব পরিচয় ছিল না বলেও চিঠিতে উল্লেখ করেন আসহাব উদ্দিন। তবুও কি কারণে টাকা ধার দিলেন এমন প্রশ্নে আসহাব উদ্দিন বলেন, ‘আমার হাতে জমি বিক্রীর টাকা ছিল তখন। আমি তাই চার সহকর্মীকে কয়েক লাখ টাকা ধার দিয়েছিলাম। তখন উপাচার্যের অনুরোধে ও উদিতি দাশের সুপারিশে আমি টিনাকেও আড়াই লাখ টাকা ধার দিই। পাশাপাশি একই সময়ে উপাচার্যের মায়ের নামে প্রতিষ্ঠিত এতিমখানার জন্য এক লাখ টাকা দানও করেছিলাম। এর মধ্যেই আমার সহকর্মীরা টাকা ফেরত দিলেও টিনা এখনো দেননি। ফোন করলেও ধরেন না। টাকা ফেরত পেতে তাই চিঠি দিতে বাধ্য হয়েছি। টিনার বাসা চিনলেও ঠিকানা জানি না। সেজন্য তাঁর মায়ের ঠিকানায় দুই দফায় চিঠি পাঠাইছি।’

তিনি আরও বলেন, এর মধ্যে কয়েকজন শিক্ষকের মাধ্যমে আমাকে ভয়ভীতি ও হুমকিও দেয়া হয়। সর্বশেষ গত ১৪ মার্চ উপাচার্য প্রযত্নে রিফাত মোস্তফা টিনা বরাবর আরেকটি চিঠি পাঠিয়েছি। এর এক সপ্তাহ পেরোলেও কোন সমাধান না আসায় ২১ মার্চ শিক্ষক সমিতি বরাবরও একটি চিঠি পাঠাই। 

তবে এ বিষয়ে কোনকিছুই জানেন না বলে মন্তব্য করেছেন আইইআরের সহযোগী অধ্যাপক ড. উদিতি দাশ। তিনি বলেন, ‘যেহেতু আমি কিছু জানি না, তাই কোন মন্তব্য করতে রাজি নই।’

চবি উপাচার্যের কন্যা রিফাত মোস্তফা টিনা বলেন, ‘উনার অভিযোগটি সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট। এর কোন ভিত্তি নেই।’

চবি শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আবদুল হক বলেন, ‘এ বিষয়ে আমরা একটি সফট কপি পেয়েছি। হার্ডকপি পেলে প্রয়োজন অনুসারে শিক্ষক সমিতির পরবর্তী কার্যনির্বাহী সভায় এজেন্ডাভুক্ত করে আমরা এটি আলোচনায় আনব এবং সবার মতামতের ভিত্তিতে পদক্ষেপ নিব।’

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়