উপজেলা প্রকৌশলী জয়শ্রী দে’র বিরুদ্ধে ইউএনওর আদেশ উপেক্ষার অভিযোগ
ছবি : সিভয়েস
চট্টগ্রাম কর্ণফুলীতে ফেরদৌসী বেগম নামে এক মহিলার ব্যক্তি মালিকানাধীন জমিতে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) কতৃক জমির পিলার ভেঙে জোরপূর্বক রাস্তা নির্মাণের অভিযোগ উঠেছে।
গত ২৯ অক্টোবর সরেজমিনে গিয়ে তদন্ত পুর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে কর্ণফুলী উপজেলা প্রকৌশলী জয়শ্রী দে’কে অফিস আদেশের চিঠি দিলেও তা উপেক্ষা করছে বলে ক্ষতিগ্রস্তরা জানান। এমনকি তাঁরা আরো জানান, ক্ষমতার অপব্যবহার করে অন্যপক্ষ থেকে সুবিধা নিয়ে অনেকটা নীরব রয়েছেন উপজেলা প্রকৌশলী জয়শ্রী দে।
এ ব্যাপারে চরলক্ষ্যা ইউনিয়নের ঐ ভোক্তভোগী মহিলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন। কিন্তু ৭ মাস অতিবাহিত হলেও প্রতিকারের আশায় তিনি এখনো অফিসে অফিসে ঘুরছেন।
অভিযোগ প্রাপ্তির বিষয়টি নিশ্চিত করে কর্ণফুলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) সৈয়দ শামসুল তাবরীজ জানান, ‘মহিলার অভিযোগ পেয়ে অনেক আগেই তিনি এসিল্যান্ডকে তদন্তপূর্বক প্রতিবেদন প্রেরণের নির্দেশ দেন এবং প্রকৌশলীকে বিষয়টি জানানো হয়েছে।’
পরবর্তীতে সহকারি কমিশনার (ভূমি) মারুফা বেগম নেলীর নির্দেশক্রমে উপজেলা ভূমি অফিসের সার্ভেয়ার মো. রফিকুল ইসলাম বিষয়টি সরেজমিনে তদন্ত করে প্রতিবেদন দেন এবং ঘটনার সত্যতা মিলে। প্রতিবেদন সূত্রে জানা যায়, ‘আবেদনকারী ফেরদৌসী বেগম এর অভিযোগ ছিল রাস্তার জন্য তাঁরা সম্মিলিতভাবে ৮ ফুট জায়গা দিয়েছে কিন্তু তা জোরপূর্বক ১৪ ফুট করা হয়েছে।’
স্থানীয়রা জানায়, রাস্তাটি আগে ছোট ছিলো বর্তমানে বড় হয়েছে। পাশাপাশি এলাকাবাসী সুত্রে জানা গেছে, বিরোধীয় ভূমি উপজেলার চরলক্ষ্যা ১নং ওর্য়াডের মৃত মোহাম্মদ শফির খরিদকৃত জমি। তার মৃত্যুর পর অপরাপর ওয়ারিশগণ দখলদারের স্থিতি দখলীয় জমি।
সূত্রে জানা গেছে, বিগত কয়েক মাস আগে চরলক্ষ্যা ইউনিয়ন পরিষদের ১নং ওয়ার্ডে উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) অফিস হতে সড়ক উন্নয়নে কাজ শুরু করে কন্ট্রাকটর খায়ের আহমেদ। কন্ট্রাকটর ধুপপুল সংলগ্ন শাহসূফী আব্দুল আজিজ সড়কের পাশের জমির মালিককে অবহিত না করে সীমানা পিলার ভেঙে জোরপূর্বক অন্যের জমিতে কাজ করে বলে অভিযোগ উঠে।
এতে জমির মালিক তাদের অপুরণীয় ক্ষতি দাবি করে প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন। স্থানীয়রা আরো জানান, গুটি কয়েক ব্যক্তির সুবিধার্থে কেন রাস্তা তৈরি করছে তা তাদের বোধগম্য নয়। এতে জমির মালিক ফেরদৌসী বেগম প্রতিবাদ করতে গেলে তাকে মারধরের হুমকি ও দেওয়া হয়।
ভুক্তভোগী মহিলা ফেরদৌসী বেগম বলেন, ‘আমি সমস্যাটি নিয়ে উপজেলা ইঞ্জিনিয়ার ম্যাডাম এর সাথে অনেকবার দেখা করেছি কিন্তু এখনো পর্যন্ত তিনি কোন ব্যবস্থা দেননি।’
উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মারুফা বেগম নেলী বলেন, ‘ইউএনও স্যারের নির্দেশ অনুযায়ী সরেজমিনে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য গত ২৯ জুলাই স্মারকমূলে প্রতিবেদন নির্বাহী অফিসার বরাবর প্রেরণ করা হয়েছে। শুনেছি পরে তা সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠানো হয়েছে।’
কিন্তু ৭ মাস অতিবাহিত হলেও কার্যকর কোন ব্যবস্থা নেয়নি কর্ণফুলী উপজেলা প্রকৌশলী। এমনকি এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত সরেজমিনে রাস্তা পরিদর্শন কিংবা ক্ষতিগ্রস্ত অভিযোগকারীকে ডাকা হয়নি বলে সূত্রে জানায়।
ক্ষতিগ্রস্ত মহিলার ছেলে আসিফ মোহাম্মদ ইমরান মুঠোফোনে সিভয়েসকে বলেন, ইউএনও আদেশ দিলেও তা প্রকৌশলী ম্যাডাম লঙ্ঘন করেছেন। আমরা ন্যায় বিচার না পেলে প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে কনডেমপ্ট অব কোর্টের আর্জি পেশ করব।
বিষয়টি অবগত করে জানতে চাইলে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) কর্ণফুলী উপজেলা প্রকৌশলী জয়শ্রী দে সিভয়েসকে বলেন, ‘ওদিকে রাস্তা করার আমার কোন এ্যালাইনমেন্টে নেই।’ তাহলে অন্যের ব্যক্তি মালিকানাধীন জমিতে কে রাস্তা তৈরি করেছে জানতে চাইলে তিনি কোন সদুত্তর দিতে পারেননি।
এ প্রসঙ্গে কর্ণফুলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) সৈয়দ শামসুল তাবরীজ সিভয়েসকে বলেন, এ বিষয়ে তদন্ত করে অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পেয়ে উপজেলা প্রকৌশলীকে বিষয়টি সরেজমিনে গিয়ে বিধি মোতাবেক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।
-সিভয়েস/জেজে/এসসি
সিভয়েস প্রতিবেদক: