প্রিপেইড মিটার না নিলে গ্যাসলাইন বিচ্ছিন্ন, কঠোর হচ্ছে কেজিডিসিএল
শাহরুখ, সিভয়েস২৪

আবেদন করেও এখন পর্যন্ত যেসব গ্রাহক প্রিপেইড মিটার বসায়নি তাদের বিরুদ্ধে হার্ডলাইনে যাচ্ছে কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (কেজিডিসিএল)। তাদের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার পথে হাঁটছে সংস্থাটি। আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই এ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আবাসিক গ্রাহকদের প্রিপেইড মিটার স্থাপনের প্রকল্পের মেয়াদ জুনে শেষ হচ্ছে। ইতোমধ্যে প্রকল্পটির মেয়াদ এক দফা বাড়ানো হয়েছে। আবারো প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানোর সুযোগ নেই। ফলে মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তেই কঠোর হতে হচ্ছে সংস্থাটিকে।
জানা গেছে, প্রিপেইড মিটার স্থাপনে এখন পর্যন্ত ১ লাখ ৩০ হাজার আবেদন জমা পড়েছে। ১ লাখ মিটারের বিপরীতে এখন পর্যন্ত ৬৩ হাজার গ্রাহক প্রিপেইড মিটার বসিয়েছে। বাকিদের বেশিরভাগের সাড়াশব্দ নেই। তাদের দৃষ্টিগোচর করে নিয়মিত পত্রিকায় বিজ্ঞাপন, মোবাইলে ক্ষুদে বার্তা, চিঠি দেওয়া হচ্ছে। এমনকি কখনো কখনো ছুটে যাচ্ছেন খোদ প্রকল্প সংশ্লিষ্টরাই।
প্রিপেইড মিটার স্থাপন প্রকল্পের পরিচালক ও কেজিডিসিএলের উপ-মহাব্যবস্থাপক মো. নাহিদ আলম সিভয়েস২৪’কে বলেন, ‘সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সবাইকেই প্রিপেইড মিটার নিতে হবে। আমাদের নীতিমালায়ও মিটারের কথা বলা আছে। মিটারের মাধ্যমেই গ্যাস দিতে হবে। যারা আবেদন করেও এখন পর্যন্ত প্রিপেইড মিটার স্থাপন করছেন না আমরা দুই এক মাসের মধ্যে তাদের বিরুদ্ধে হার্ডলাইনে যাবো। সোজা কথা যারা মিটার নিবে না আমরা তাদের লাইন কেটে দিবো।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অন্যান্য গ্রাহকদের পর্যায়ক্রমে প্রিপেইড মিটারের আওতায় আনতে পরিকল্পনা চলছে। শিগগির তাদেরও প্রিপেইড মিটারের আওতায় আনা হবে।
পয়সা খরচে নারাজ গ্রাহকরা
প্রিপেইড মিটার স্থাপনের আগে গ্রাহকের নিজস্ব খরচে রাইজার থেকে রান্নাঘর পর্যন্ত পৃথক লাইন নিতে হবে। ভবনে নতুন করে পাইপ লাইন স্থাপনসহ একেকটি চুলার পেছনে ৪ থেকে ১২ হাজার টাকা খরচ হতে পারে। বিরাট অংকের এ টাকা খরচে নারাজ বেশিরভাগ গ্রাহক। ফলে শুরুতে প্রিপেইড মিটার স্থাপনে আগ্রহী হলেও পরে খরচের ভারে ঝিমিয়ে পড়েছেন তারা।
যদিও কেজিডিসিএল মনে করছে, খরচ ছাড়াও গ্যাস চুরিও একটি কারণ হতে পারে। নাম প্রকাশে কেজিডিসিএলের কয়েকজন কর্মকর্তা বলছেন, অনেকে সরকার নির্ধারিত পরিমাণের চেয়ে বেশি গ্যাস ব্যবহার করেন। বর্তমানে আবাসিকে দুই চুলায় ৬০ ঘনমিটার গ্যাসের দাম ১০৮০ হাজার টাকা। এটাই সরকার নির্ধারিত লিমিট যে আপনি ১০৮০ টাকা দিয়ে ৬০ ঘনমিটার গ্যাস ব্যবহার করেন। এখন অনেক গ্রাহক এর চেয়ে বেশি গ্যাস ব্যবহার করছেন। তাই অনেক গ্রাহক চিন্তা করছেন আমরা যদি মিটার লাগাই আমাদের যে গ্যাসের ব্যবহার তা ৬০ ঘনমিটারের চেয়ে বেশি হবে। বিল বেশি যাবে এই কারণেই অনেক গ্রাহক মিটার নিতে চায় না।’
এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক গ্রাহক বলেন, ‘আমার ভবনে ২৬টি ফ্ল্যাট। সব ফ্ল্যাটের জন্য রাইজার থেকে আলাদা ২৬টি লাইন টানতে হবে। একেকটি লাইন টানতে ৪ থেকে ১২ হাজার টাকা খরচ হবে। এই মুহুর্তে এ টাকা খরচ করা সম্ভব না।’
আরেকজন গ্রাহক বলেন, ‘গ্যাস বিল সাশ্রয় হবে ঠিক আছে। কিন্তু বিল তো দেয় ভাড়াটিয়া। আমার লাভ কি?। উল্টো এখন আলাদা করে নতুন লাইন টানতে অনেক খরচ সেটা কে দিবে? পরে প্রত্যেকমাসে মিটার ভাড়াও কাটবে।’
আবাসিক সংযোগে ১ লাখ প্রিপেইড মিটার স্থাপনের ২০২১ সালের ১৮ মে এ প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়। ২৪১ কোটি ৬১ লাখ টাকা ব্যয়ে ২০২৩ সালের জুনে প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। পরে দুই বছরের মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়।
অর্থ-বাণিজ্য সব খবর