Cvoice24.com

মোবাইল ব্যবহারে ‘না’ করায় শিক্ষা বোর্ডের সচিবকে ‘আচরণ’ শিখতে বললো পুলিশ

সিভয়েস প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৮:২৫, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২২
মোবাইল ব্যবহারে ‘না’ করায় শিক্ষা বোর্ডের সচিবকে ‘আচরণ’ শিখতে বললো পুলিশ

উখিয়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়। ছবি: সংগৃহীত

কেন্দ্র সচিব বাদে পরীক্ষা কেন্দ্রে মোবাইল ফোন ব্যবহার নিষিদ্ধ দায়িত্বরত সবার। তবে কেন্দ্র সচিবের কক্ষের সামনেই মোবাইল ব্যবহার করছিলেন প্রশ্নপত্রের প্যাকেটে স্বাক্ষরের দায়িত্বে থাকা দুই পুলিশ সদস্য। তা দেখে তাদের মোবাইল ফোন কেন্দ্র সচিবের কাছে জমা রাখার নির্দেশ দেন পরিদর্শনে যাওয়া চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের সচিব। কথামতো তাৎক্ষণিক তারা মোবাইল ফোন জমা দিলেও ঘণ্টাখানেক পরে দলবল নিয়ে জটলা বাধান কেন্দ্র সচিবের কক্ষে। ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণের সঙ্গে বলতে থাকেন, ‘আমাদের ওসি সাহেব বলছে আপনাদেরকে ট্রেনিং দেওয়ার জন্য।’

মঙ্গলবার (২০ সেপ্টেম্বর) এমন ঘটনা ঘটে  কক্সবাজারের উখিয়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে।

জানা গেছে, আজ মঙ্গলবার ইংরেজী দ্বিতীয় পত্রের পরীক্ষা শুরু হয় সকাল ১১টার দিকে। ঘণ্টাখানেকের মধ্যে হল পরিদর্শনে যান চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের সচিব অধ্যাপক আব্দুল আলীম। তিনি গিয়েই দেখতে পান দায়িত্বরত দুই পুলিশ সদস্য মোবাইল ফোন ব্যবহার করছেন। তাৎক্ষণিক তাদের পরীক্ষা বিধি জানিয়ে কেন্দ্র সচিবের কাছে মোবাইল ফোন জমা রাখার পরামর্শ দেন। তারা মোবাইল ফোন জমাও দেন। পরীক্ষা শেষে দুপুরের দিকে চার থেকে পাঁচ জন পুলিশ সদস্যকে সঙ্গে নিয়ে কেন্দ্র সচিবের কক্ষে প্রবেশ করেন তারা। সেখানে বোর্ডের সচিব ও কেন্দ্র সচিবের সঙ্গে বাদানুবাদে জড়িয়ে নানা ধরনের খারাপ আচরণ করতে থাকেন। একপর্যায়ে বোর্ড সচিবের নাম, ঠিকানা জানতে চেয়ে ওসির বরাত দিয়ে বলতে থাকেন—

“আমার পড়ার দরকার নাই। আপনার ঠিকানা কী? নাম কী বলেন? আমাদের ওসি সাহেব বলছে আপনাদেরকে ট্রেনিং দেওয়ার জন্য।” 

চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের সচিব অধ্যাপক আব্দুল আলীম বলেন, ‘আমি যখন কেন্দ্রে প্রবেশ করি তখন দুইজন পুলিশ সদস্য মোবাইল ব্যবহার করছেন। আমি তখন বলি যে আপনারা রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা ও পরীক্ষা কেন্দ্রের নিরাপত্তার দায়িত্বে আছেন। পরীক্ষা কেন্দ্রের ভেতর মোবাইল ব্যবহার নিষিদ্ধ। আপনারা কেন্দ্র সচিবের কাছে মোবাইল জমা দেন। আমরা কেউই মোবাইল নিয়ে ভেতরে প্রবেশ করিনি। এরপর পরীক্ষা শেষে বিপ্লব নামের একজন পুলিশ সদস্যের নেতৃত্বে চার থেকে পাঁচজন পুলিশ সদস্য এসে আমার সঙ্গে অসৌজন্যমূলকমূলক আচরণ করেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘বিপ্লব নামের সেই পুলিশ সদস্য আমাকে বলেন  আপনারা জানেন পুলিশের সঙ্গে কীভাবে আচরণ করতে হয়? মোবাইল আনছি তো কী হইছে? তখন আমি ১৯ নম্বর ধারার কথা বললে ওই পুলিশ সদস্য বলেন, “আমার পড়ার দরকার নাই। আপনার ঠিকানা কী? নাম কী বলেন? আমাদের ওসি সাহেব বলছে আপনাদেরকে ট্রেনিং দেওয়ার জন্য।” যেসকল পুলিশ সদস্য এই কেন্দ্রের দায়িত্বে ছিলেন প্রায় সবাই আমার সঙ্গে ও কেন্দ্র সচিবের সঙ্গে ওদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করেছেন। 

ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে উখিয়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও কেন্দ্র সচিব রোকেয়া খানম সিভয়েসকে বলেন, ‘আজকে পরীক্ষা কেন্দ্রে দুইজন পুলিশ সদস্যের ডিউটি ছিল। তাদের কাছে মোবাইল থাকায় স্যার (বোর্ড সচিব) বলছেন যে আপনারা কেন্দ্র সচিবের কাছে মোবাইলগুলো জমা দেন। শুধু এইটুকই কথা হয়েছে পুলিশের সঙ্গে। তারাও মোবাইল জমা দিয়ে দেয়। এরপর যথারীতি পরীক্ষা শেষ হয়। স্যার অন্যান্য কেন্দ্র ঘুরে এখানে এলে কয়েকজন পুলিশ জড়ো হয়ে বলেন যে ওসি স্যার নাকি তাদেরকে পাঠিয়েছেন। মোবাইল কেন নিলো, এভাবে নিতে পারে না এইসব বলে বলে জেরা করতে থাকেন। মোবাইল নিয়ে নেওয়াকে কেন্দ্র করে আমাদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করেন।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে উখিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মোহাম্মদ আলী সিভয়েসকে বলেন, ‘আমি এ ধরনের কথা বলিনি। আমি কাউকে সেখানে পাঠাইনি। আমিতো কিছুক্ষণ আগে ঘটনাটা জানলাম। উনাদের তরফ থেকে এখনো আমাকে কিছুই জানানো হয়নি। আমার নলেজে আসার পর আমি খোঁজ নিয়েছি। এখন যদি আমাদের অফিসার ভুল করে থাকে তবে আমি অবশ্যই তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবো’

উখিয়া উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা ইমরান হোসাইন সজীব বলেন, ‘আমি ঘটনা সম্পর্কে অবহিত হয়েছি কিন্তু ঘটনা সম্পর্কে বিস্তারিত নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারি না। এখন তদন্ত করে দেখতে হবে। পরে সে মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়