চট্টগ্রামেও বেড়েছে ডেঙ্গু’র প্রকোপ, আক্রান্ত ৪৮ 

সিভয়েস প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৫:২৮, ২০ জুলাই ২০২২
চট্টগ্রামেও বেড়েছে ডেঙ্গু’র প্রকোপ, আক্রান্ত ৪৮ 

প্রতীকি ছবি

সাধারণত জুন থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত ডেঙ্গু জ্বরের মৌসুম। আর এই মৌসুমেই চট্টগ্রামে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত নতুন নতুন রোগী শনাক্ত হচ্ছে। যদিও ঢাকার তুলনায় হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা কম। তবে গত কয়েকদিনে চট্টগ্রামে ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে মোট ৪৮ জন। এরমধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় শনাক্ত হয়েছে ৩ জন ডেঙ্গু রোগী। তবে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের হার হিসেব করলে এই সংখ্যা অনেক কম হলেও বেশির ভাগ জ্বর আক্রান্ত রোগীই ডেঙ্গু টেস্টের আওতায় আসছে না। ফলে প্রকৃত সংখ্যাও জানা যাচ্ছে না। 

এরপরও চট্টগ্রামে হঠাৎ করে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়তে শুরু করেছে। এ বছরের মার্চে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ার আভাস দেয়া হলে প্রথম দিকে কর্তৃপক্ষ সরব ভূমিকায় থাকলেও দিন যেতে যেতে অনেকটা নীরব ভূমিকায় নাম লিখিয়েছে কর্তৃপক্ষ। কীটতত্ত্ববিদরা বলছেন— দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে ডেঙ্গু বেশ কয়েকগুণ বাড়বে। যদিও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের দাবি, ডেঙ্গু সচেতনতার কাজ চলমান রয়েছে। এমনকি ডেঙ্গু সচেতনতায় সভা বসছে আগামী ২১ তারিখ। 

সিভিল সার্জন সূত্রে জানা গেছে, গত বছর মোট ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ছিল ২৭১ জন। আর চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত ৪৮ জন রোগী শনাক্ত হয়। তারমধ্যে জানুয়ারিতে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয় ৫ জন, ফেব্রুয়ারিতে ১ জন। জুন মাসে ১৭ জন শনাক্ত হলেও জুলাই মাসের ২০ দিনেই শনাক্ত হয়েছে ২৫ জন। গত চারদিনেই ৮ জন রোগী শনাক্ত হয়। শনাক্ত হওয়া ৪৮ জনের মধ্যে পুরুষ ২০ জন, মহিলা ১১ জন, এবং শিশু রোগী ১৭ জন। তবে হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ১ জন। 

এদিকে, ঢাকায় ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী শনাক্তের খবর শুনতে শুনতে নগরবাসীর মনে অনেকেটা সয়ে গেছে। তাই তোলপাড় নেই ডেঙ্গু নিয়ে। সচেতন নাগরিকের কেউ কেউ প্রশ্ন তুললেও "ঢাকায় বেশি চট্টগ্রামে নেই" এই ভাবনায় থেমে রয়েছে সংশ্লিষ্টরা। এমনকি চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে ১৮ দিনের কর্মসূচি নিয়ে মশক জরিপ করা হলেও সে রির্পোট এখনো হাতে পায়নি স্বাস্থ্য বিভাগ।

অন্যদিকে, ডেঙ্গু সচেতনতায় চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক) কর্তৃপক্ষ নগরের ৪১ ওয়ার্ডে ক্রাশ প্রোগ্রাম, লিফলেট বিতরণ, মাইকিং শুরু করেছে জানালেও এ বিষয়ে জানে না ঘুমন্ত নগরবাসী।

বেসরকারি চাকরিজীবি মোস্তফা হক সিভয়েসকে বলেন, ‘চসিক মশা মারার জন্য যে ওষুধ ব্যবহার করছে এসব ওষুধের কার্যকারিতা নিয়ে বারবারই সমালোচনা হয়েছে। আমরা আশা করবো বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিয়ে ‘মশা যাতে মরে’ এমন ওষুধ আনা হোক। বর্ষা মৌসুম এলেই কেবল খাল আর নালা পরিষ্কার নিয়ে কথা হয় অথচ বছরের বাকিটা সময় এমনিই ফেলে রাখে। পরিষ্কার না করলে এখানে মশার বংশবিস্তার না হয়ে আর কোথায় হবে?’ 

অনেকটা একই মন্তব্য জামালখান ওয়ার্ডের বাসিন্দা ব্যাংক কর্মকর্তা আতিকুর রহমানের। তিনি বলেন, 'এসব নানামুখী উদ্যোগ কেবল টিভি আর পত্রিকার পাতায় দেখি। চোখে দেখি না! আমার বাড়ি পরিস্কার হলে কি হবে? নির্মাণাধীন ভবন, ড্রেন বা আশেপাশের পরিবেশ পরিস্কারের দায়-দায়িত্ব কার? বুঝছেন, ফগার মেশিনের ধোঁয়া নাকের ডগায় ঝুলে আছে তাই আমরা সাধারণ মানুষেরা দেখতে পাইনা। এসব বলতেও মন চায় না আর।’

জানতে চাইলে সিভিল সার্জন কার্যালয়ের কীটতত্ত্ববিদ এনতেজার ফেরদৌস সিভয়েকে বলেন, ‘চলতি বছরের জুনের শুরু থেকেই বলে আসছি ডেঙ্গু বাড়বে। আমরা ডেঙ্গুর যে চিত্র দেখতে পাচ্ছি সেটা পুরোপুরি নয়। রোগী আরও বেশি। সবাই কিন্তু হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে না। কেউ কেউ টেস্ট করালেও অনেকেই টেস্টের বাইরে থেকে যাচ্ছে। যারা টেস্ট করছেন তাদের চিত্রই মূলত আমরা পাচ্ছি।’

মশা বৃদ্ধির কারণ হিসেবে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের অবহেলা আর জনসচেতনতার অভাবকে দায়ী করছেন কীটতত্ত্ববিদরা। তারা বলছেন, বছরজুড়ে যেখানে মশকনিধন চলার কথা, সেখানে ডেঙ্গু কমার পর সিটি করপোরেশনে কোনও কাজই হয়নি। মশার ওষুধ নিয়ে প্রশ্ন উঠলেও অকার্যকর ওষুধ দিয়েই চলছে সিটি করপোরেশনের মশক নিধন।

ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে চসিকের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা স্ট্যান্ডিং কমিটির সভাপতি কাউন্সিলর মোবারক আলী সিভয়েসকে বলেন, ‘২১ তারিখ স্ট্যান্ডিং কমিটির মিটিং দেওয়া হয়েছে। মশক নিধনে যে অভিযান আছে সেটা জোরদার করা হচ্ছে। নিয়মিত ক্রাস প্রোগ্রাম চলছে। ২১ তারিখ মিটিংয়ের পর ক্যাম্পেইনের শিডিউল ঠিক করা হবে। ডেঙ্গু, চিকনগুনিয়া এগুলো বাসা বাড়ি, ছাদের আঙ্গিনায় হয়। আমরা পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা এবং ঝোপ ঝাড় পরিস্কারে কাজ করবো। একই সঙ্গে আরবান কমিটির ভলান্টিয়ারদের নিয়ে ক্যাম্পেইন হবে। লিফলেট বিতরণ করা হবে এবং প্রত্যেকটা ওয়ার্ডে হ্যান্ড মাইকিং করা হবে।’

মশার ওষুধ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘কেমিক্যাল জাতীয় মশকনিধন নির্দেশিকাতে স্পেসেপিক করা আছে; আপনারা যদি কোনো ওষুধ কেনেন; সেই ওষুধের নমুনা আইডিসিআরে পাঠাতে বলা আছে। আইডিসিআর যদি সেটার অনুমোদন করে তাহলে কার্যাকারের আদেশ দিবেন। সেই হিসেবে আমরা আইডিসিআরে স্যাম্পল পাঠিয়ে সেটার কার্যক্ষমতা যাচাইয়ের পরে ওষুধ পার্সেস করতেছি। ...এছাড়া কালো তেল যেটা সেটাও আমরা ব্যবহার করছি। আমাদের ওষুধের কোনো স্বল্পতা নেই। প্রতিদিন দিনের বেলা স্প্রে চলছে এবং সন্ধ্যায় মেশিন দিয়ে ফগিং করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে আমরা ৬০ লাখ টাকা মার্স্টার রোলে বর্জ্য অপসারণ ও নালা-নর্দমা থেকে মাটি উত্তোলনে কাজ চালু রাখছি।’

ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে কী ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে এমন প্রশ্নে সিভিল সার্জন ডা. মো. ইলিয়াছ চৌধুরী সিভয়েসকে বলেন, ‘এ বছর ১৮ দিনের একটা রিসার্চ হয়েছে মশা নিয়ে, সে রিপোর্টটা এখনো হাতে আসেনি আমাদের। রির্পোট হাতে পেলে তারপর সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া যাবে। এর বাইরে ডেঙ্গু সচেতনতায় আমরা স্বাস্থ্যকর্মীদের ভালোভাবে ট্রেইন করা হয়েছে। মানুষ যাতে দিনের বেলাতেও মশারি ব্যবহার করেন সেটাও জানানো হচ্ছে। তাছাড়া এখন যেহেতু সিজন, তার উপর থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে এইসব তো আমরা নিয়ন্ত্রণ করতে পারবো না। মানুষ সচেতন হলে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ করা সহজ কিন্তু মানুষ ডেঙ্গু দূরে থাক কোভিড নিয়েও খুব একটা সচেতন না। এই অবস্থার মধ্যেও আমরা চেষ্টা করছি যতটুকু সম্ভব ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়।’

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়