Cvoice24.com


মেজর সিনহা হত্যা, তদন্তের ‘মূল শক্তি’ সিফাত ও শিপ্রার সাক্ষ্য

প্রকাশিত: ১২:২৫, ১০ আগস্ট ২০২০
মেজর সিনহা হত্যা, তদন্তের ‘মূল শক্তি’ সিফাত ও শিপ্রার সাক্ষ্য

মেজর সিনহা হত্যার ঘটনা তদন্তে ‘মূল শক্তি’ বা অন্যতম স্বাক্ষী হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে কারামুক্ত সাহেদুল ইসলাম সিফাত ও শিপ্রা রানী দেব। বিশেষ করে নিহত সিনহার গাড়িতে থেকে ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী সিফাত কি তথ্য দিচ্ছে, সে তথ্যের ভিত্তিতে র‌্যাবের তদন্ত প্রক্রিয়া এগুবে। বের হবে চাঞ্চল্যকর হত্যাকাণ্ডটির আসল রহস্য -এমনটি মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

আদালতের আদেশে শিপ্রা রবিবার (৯ আগস্ট) ও সিফাত সোমবার (১০ আগস্ট) কক্সবাজার জেলা কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন।

এ বিষয়ে কথা হয় র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)এর আইন ও গণমাধ্যম শাখার মুখপাত্র লে. কর্নেল আশিক বিল্লাহর সাথে।

সোমবার (১০ আগস্ট) মুঠোফোনে তিনি বলেন, মেজর সিনহা হত্যার ঘটনার জন্য গুরুত্বপূর্ণ স্বাক্ষী সাহেদুল ইসলাম সিফাত। সোমবার তাকে জামিন দিয়েছে আদালত। 

র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার এই মুখপাত্র বলেন, তদন্তকারী কর্মকর্তা প্রথমে সিফাতের সাথে পুরো বিষয়টি নিয়ে নিয়ে কথা বলবে। পরে অন্যান্য আসামিদের সাথে আলাপ আলোচনা করবে। 

তিনি মনে করেন, এ মামলার জন্য তারা গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষী। শিপ্রা রানী দেব বয়সে ছোট। তাই আপাতত পরিবার পরিজনের সাথে আছে। আমাদের সাথেও যোগাযোগ রয়েছে। 

লে. কর্নেল আশিক বিল্লাহ বলেন, গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষীদের নিরাপত্তা দায়িত্ব দায়িত্ব তদন্ত সংস্থার। সে হিসেবে বিষয়টি আমরা দেখভাল করছি। 

সুত্র জানায়, মেজর (অব.) সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যাকাণ্ডের পর পুলিশ তিনটি মামলা দায়ের করে। এর মধ্যে মাদক নিয়ন্ত্রণ ও পুলিশের কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে দুটি মামলা হয়েছে টেকনাফ থানায়। মাদক আইনে অন্য মামলাটি দায়ের হয়েছে রামু থানায়। পুলিশের এই তিন মামলায় ঢাকার স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থী সাহেদুল ইসলাম সিফাত ও শিপ্রা রাণী দেবকে আসামি করা হয়েছে। 

সাবেক সেনা কর্মকর্তা সিনহা প্রামাণ্যচিত্র তৈরির জন্য ৩ জুলাই কক্সবাজার এসেছিলেন। এই কাজে তার সহযোগী ছিলেন সিফাত, শিপ্রা এবং তাদের সহপাঠী তাহসিন রিফাত নুর। প্রামাণ্যচিত্রের প্রযোজক ছিলেন সিনহা। তারা সবাই উঠেছিলেন হিমছড়ি সৈকত তীরের নীলিমা রিসোর্টে।

গুলিতে সিনহার মৃত্যুর পর পুলিশ দুটি মামলা দায়ের করে। দুটি মামলার বাদি এসআই নন্দ দুলাল রক্ষিত। দুটি মামলাতেই একমাত্র আসামি করা হয়েছে সিফাতকে। একটি মামলা করা হয়েছে ২০১৮ সালের মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে। 

মামলায় বলা হয়েছে, মেজর সিনহা ও সিফাতের গাড়ি থেকে ৫০টি ইয়াবা ট্যাবলেট উদ্ধার করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হয়েছে সরকারি কর্মচারীদের দায়িত্ব পালনে বাধা দেওয়ার অভিযোগে। দুটি মামলায় সিফাতকে কারাগারে পাঠানো হয়।

সিনহা হত্যার সময় নীলিমা রিসোর্টে অবস্থান করছিলেন শিপ্রা ও তাহসিন। ঘটনার কিছু সময় পর পুলিশ ওই রিসোর্টে অভিযান চালায়। পুলিশ সেখান থেকে তাদের আটক করে রামু থানায় নিয়ে যায়। 

নীলিমা রিসোর্ট রামু থানা এলাকায় হওয়ায় রামু থানার পুলিশ সেখানে অভিযান চালায়। থানা থেকে তাহসিনকে তার অভিভাবকের জিম্মায় ছেড়ে দেওয়া হলেও শিপ্রার বিরুদ্ধে মাদক নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা দায়ের করে পুলিশ।
 
পুলিশ শিপ্রার কক্ষ থেকে পাঁচ বোতল বিদেশি মদ, এক লিটার বাংলা মদ এবং এক পোটলা গাঁজা উদ্ধারের দাবি করেছে মামলায়। তবে পুলিশের এসব ভাষ্য নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে ব্যাপক। 

উল্লেখ্য, গত ৩১ জুলাই ঈদুল আজহার আগের রাতে কক্সবাজারের মেরিন ড্রাইভ রোডে টেকনাফের বাহারছড়া চেকপোস্টে তল্লাশির সময় পুলিশের গুলিতে নিহত হন সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান।  ৫ আগস্ট নিহত সিনহার বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস বাদি হয়ে কক্সবাজার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ৯ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন। 

৬ আগস্ট বরখাস্ত হওয়া ওসি প্রদীপসহ সাত আসামি কক্সবাজার সিনিয়র জুডিশিয়াল আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। মামলার শুনানিতে র‌্যাবের পক্ষে প্রত্যেক আসামির ১০ দিন করে রিমান্ডের আবেদন করলে আদালত লিয়াকত, প্রদীপ ও নন্দ দুলাল রক্ষিতকে সাত দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন। 

বাকি চারজনকে দুই দিন কারাফটকে জিজ্ঞাসাবাদের আদেশ দেন। অন্য দুই আসামির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত।

বাদির আবেদনের প্রেক্ষিতে র‌্যাবকে মামলাটির তদন্তভার দেয়া হয়। ৭ কর্মদিবসের মধ্যে তারা আদালতে প্রতিবেদন জমা দিবে। ঘটনা তদন্তে গত ২ আগস্ট চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (উন্নয়ন) মো. মিজানুর রহমানকে আহবায়ক করে ৪ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে দেয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্ত্বা বিভাগ। 

৪ আগষ্ট থেকে তদন্ত শুরু হয়েছে। ৭ কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেয়ার নির্দেশনা রয়েছে।

কক্সবাজার প্রতিনিধি

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়