Cvoice24.com


দুই বছর পর ময়নাতদন্তের রিপোর্ট দেওয়া মানবাধিকারের লঙ্ঘন

প্রকাশিত: ১২:৪৮, ৩ ডিসেম্বর ২০২০
দুই বছর পর ময়নাতদন্তের রিপোর্ট দেওয়া মানবাধিকারের লঙ্ঘন

দুই বছর পর ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন জমা দেওয়ায় মানবাধিকার লঙ্ঘন হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের পরিচালক আল মাহমুদ ফায়জুল কবীর।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যু হওয়া চিত্র পরিচালক রফিক সিকদারের মা রওশন আরার ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পেতে দুই বছর সময় লাগার কারণ তদন্ত করছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন।

বিষয়টি তদন্তে বৃহস্পতিবার দুপুরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডা. সোহেল মাহমুদের কার্যালয়ে যান মানবাধিকার কমিশনের পরিচালক (অভিযোগ ও তদন্ত) আল মাহমুদ ফায়জুল কবীর ও উপপরিচালক এম রবিউল ইসলাম। সেখানে এই মন্তব্য করেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের পরিচালক আল মাহমুদ ফায়জুল কবীর।

আরও পড়ুন: চমেক হাসপাতাল : ২৪ দিনেও মিলছে না ২৪ ঘণ্টার পোস্টমর্টেম রিপোর্ট

এক ঘণ্টা বৈঠকের পর বেরিয়ে যাওয়ার সময় মানবাধিকারের পরিচালক আল মাহমুদ ফায়জুল কবীর বলেন, “২০১৮ সালের ৩ নভেম্বর ময়নাতদন্তের জন্য মৃতদেহটি ঢাকা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগে আসে। আর সেই মৃতদেহের ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন শাহবাগ থানায় পাঠানো হয় গত মাসের ৭ তারিখ। অথচ ১৮ সালের ৩১ ডিসেম্বর মধু নামে এক নারীর ময়নাতদন্তের পর প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয় ১৯ সালের ২১ জুলাই। এখানেই দেখা যায় রওশন আরার মৃতদেহের পর ময়নাতদন্ত করা লাশেরও প্রতিবেদন পেয়ে যায় অনেক আগে।”

“কিন্তু রওশন আরার প্রতিবেদন পেতে ২ বছরেরও বেশি সময় লেগেছে। আমরা ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডা. সোহেল মাহমুদের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বললাম। তিনি বলছেন, ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পুলিশের এখানে এসে তদবির করে নিয়ে যেতে হয়। তা ছাড়া প্রতিবেদনটি মিসিং হওয়া সম্ভাবনা থাকে। আমরা তদন্ত করে দেখছি পুলিশ কেনইবা এত দিন প্রতিবেদনটি নিল না, আর ফরেনসিক বিভাগই কেন নিজ দায়িত্বে পাঠালেন না। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনটি দিতে সিরিয়াল মেইনটেন হয় নাই। ফরেনসিক বিভাগের চিকিৎসকদের ব্যাখ্যাটাও আমরা বিবেচনা করবো, দেরি হওয়ার কারণ থানা-পুলিশের নাকি ফরেনসিক বিভাগের তাও খতিয়ে দেখবো।”

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মানবাধিকার কমিশনের পরিচালক বলেন, ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনটি দিতে সিরিয়াল মেইনটেন করা হয়নি। ফরেনসিক বিভাগের চিকিৎসকদের ব্যাখ্যাটাও আমরা বিবেচনা করব। দেরি হওয়ার কারণ থানা পুলিশের নাকি ফরেনসিক বিভাগের তাও খতিয়ে দেখব।

ময়নাতদন্তর প্রতিবেদন পেতে তদবির কেন করতে হবে—এমন প্রশ্নের জবাবে মানবাধিকার কমিশনের পরিচালক বলেন, এটা ওনাদের বক্তব্য, এটা সরকারি বিধিমালা বা এমন কোনো নিয়ম নেই। সরকারি কোনো কাজ রিসিভ করলে তা পাঠানোর দায়িত্ব তার। প্রাথমিকভাবে ফরেনসিক বিভাগ তাদের লোকবলের দোহাই দিচ্ছে। আমরা সবকিছুই তদন্ত করে দেখব।

আল মাহমুদ ফায়জুল কবীর বলেন, মৃত নারীর ছেলে আমাদের কাছে তার জবানবন্দিতে বলেছেন—তিনি বারবার ফরেনসিক বিভাগে এসেছেন। কিন্তু বিভিন্ন অজুহাত দেখানো হয়েছে তাকে। আমরা আগামী রবি বা সোমবার শাহবাগ থানায় যাব, থানা পুলিশের বক্তব্য শুনব। প্রতিটা সরকারি কাজে প্রতিবেদন, চিঠি যথাসময়ে পাওয়ার অধিকার প্রতিটা নাগরিকের রয়েছে। এই ভুক্তভোগীর পরিবার যেহেতু যথাসময়ে ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনটি পায়নি তাহলে অবশ্যই এখানে তাদের মানবাধিকার লঙ্ঘন হয়েছে বলে আমি প্রাথমিকভাবে মনে করছি।

ময়নাতদন্তের রিপোর্ট দিতে কেন দুই বছরেরও বেশি সময় লাগলো এ বিষয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডা. সোহেল মাহমুদ বলেন, রওশন আরা নামের ওই নারীর মরদেহটি আমাদের কাছে যখন আসে ময়নাতদন্ত শেষে তখনই আমরা মৃতের পরিবার ও সাংবাদিকদের ব্রিফিং করেছিলাম। মরদেহে কী পাওয়া গেছে ও কী পাওয়া যায়নি তা সবাইকে জানিয়েছিলাম। মরদেহে একটি কিডনিও পাইনি। আমরা যদি মিডিয়ার সামনে তখনই সব বলে দিতে পারি তাহলে আমাদের এখানে লুকানোর কী থাকবে? আমি মনে করি আমাদের দেওয়া রিপোর্ট সংক্রান্ত কোনো সমস্যা হওয়ার কথা না। তবে সমস্যা এটা যে, রিপোর্টটা দিতে দেরি হয়েছে। এখানে আমাদের বিভাগে লিমিটেশন আছে, আমরা সারা দেশের ময়নাতদন্ত করি, রিপোর্ট দেই। ছাত্রদের পড়াতে হয়, পরীক্ষা নিতে হয়। সারা দেশে কোর্টে গিয়ে আমাদের বিভাগের চিকিৎসকদের সাক্ষী দিতে হয়। অল্পসংখ্যক লোক দিয়ে কাজ করি।

ডা. সোহেল মাহমুদ আরও বলেন, রিপোর্টটি দিতে আমাদের চেষ্টায় কোনো ত্রুটি ছিল না। ডা. কবির সোহেল, ডা. প্রদীপ বিশ্বাস ও আমিসহ ৩ সদস্যের কমিটি করে ময়নাতদন্ত করি। পরবর্তীতে ২০১৯ সালে ডা. কবির সোহেল বরিশালে বদলি হয়ে যান। আর হিস্টোপ্যাথলজি থেকে রিপোর্ট আসতে এক বছর দেরি হয়। হিস্টোপ্যাথলজি থেকে রিপোর্ট আসতে দেরি হওয়ায় আমাদের প্রতিবেদনটি দিতে দেরি হয়। পরে নিয়ম অনুযায়ী আমরা প্রতিবেদনটি প্রস্তুত করে রেখেছি, পুলিশ আসার পর পুলিশের কাছে দিয়েছি।

মৃত রওশন আরার ছেলে বারবার ফরেনসিক বিভাগে ঘুরেও প্রতিবেদন পাননি—এ প্রসঙ্গে ডা. সোহেল বলেন, আমরা রিপোর্টটি পুলিশের কাছে দেই। পরিবারের কাছে দেই না। সব মিলিয়ে এই রিপোর্টের বিষয়ে আমাদের কোনো গাফিলতি ছিল না, সিস্টেমের জন্য দেরি হয়ে গেছে। হিস্টোপ্যাথলজি পেতে দেরি হওয়া, ডাক্তার বদলি হয়ে যাওয়া ও পুলিশ রিপোর্টটি নিতে দেরি করে ফেলেছে।

ময়নাতদন্তের রিপোর্ট প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ময়নাতদন্তে মরদেহে দুইটা কিডনির অস্তিত্ব ছিল, সার্জিক্যালি অ্যাবসেন্স ছিল কিডনি দুইটা। মাথায় টিউমার ছিল। টিউমারটি আমরা হিস্টোপ্যাথলজিতে পাঠিয়েছিলাম। ভিসেরা সংগ্রহ করেছিলাম। ওই নারীর হার্ট সাধারণ আকারের চেয়ে বড় পেয়েছি। প্রতিবেদনে আমরা উল্লেখ করেছি ‘সার্জিক্যালি বোথ কিডনি অ্যাবসেন্স’।

সিভয়েস ডেস্ক

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়