ভিন্নমতের জন্য পিটিয়ে হত্যা গণতন্ত্রের জন্য ভয়ংকর : মেনন
ছবি : আকমাল হোসেন
ভিন্নমতের জন্য পিটিয়ে হত্যা গণতন্ত্রের জন্য ভয়ংকর বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন। মৌলবাদীরা যখন একই কাজ করে সেটা শুধু গণতন্ত্রের জন্য নয়, দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের জন্য আরও ভয়ংকর; বলেন তিনি।
মেনন বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে হত্যা-খুনের রাজনীতি, এটা বন্ধ করতে হবে। তার মানে এই নয়, ছাত্র রাজনীতি বন্ধ করতে হবে। আমরা ছাত্র রাজনীতির ফসল। আমি ছাত্র রাজনীতি করেছি। তোফায়েল আহমেদ, আমির হোসেন আমু ছাত্র রাজনীতি করেছেন। শেখ হাসিনা ছাত্র রাজনীতি করেই প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন।
শুক্রবার (১১ অক্টোবর) চট্টগ্রাম নগরীর আন্দরকিল্লায় জে এম সেন হলে ওয়ার্কার্স পার্টির চট্টগ্রাম জেলার ১৩তম সম্মেলন উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
আবরার হত্যাকে বিএনপি-জামায়াত রাজনীতিকরণ করছে দাবি করে মেনন বলেন, ছাত্রদের প্রতিবাদ স্বাভাবিক। সহপাঠীর জন্য বেদনাবোধ থেকে তারা রাস্তায় নেমেছে। কিন্তু যখন দেখি বিএনপি-জামায়াত আবরার হত্যাকে রাজনীতিকরণ আর ধর্মীয়করণ করছে, তখন বুঝতে হয় ডাল মে কুচ কালা হ্যায়। বিএনপি-জামায়াত আবরারকে আগ্রাসনের বিরুদ্ধে প্রথম শহীদ বলছে। আবরারের মৃত্যুর প্রতি শ্রদ্ধা ও শোক জানিয়ে বলতে চাই, এই ক্ষুদ্র রাজনীতি যেটা চিরকাল আপনারা করে এসেছেন, সেটা করবেন না।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে হত্যাকাণ্ড নতুন নয় মন্তব্য করে তিনি বলেন, এরশাদ শাসনের শেষদিকে ছাত্রমৈত্রী নেতা ফারুককে হত্যা করা হয়। শিবিরের ছেলেদের হাতে হাত কাটা পড়ে হামিদের। বিএনপি-জামাত যখন জোট বেঁধে ক্ষমতা নিল, এরপর থেকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম কলেজ চলে গেল শিবিরের দখলে। তখন বহু কথা বলেছি আমাদের কথা শোনা হয় নাই। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এ পরিস্থিতি একদিনের নয়। মৌলবাদীরা যখন ক্ষমতায় গিয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দখলে নিয়েছিল। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রমৈত্রীর নেতা রিমু চৌধুরীকে খুন করেছিল শিবির। রোজার মাস ছিল। রিমু রোজা রেখেছিল। সে অবস্থায় তাকে খুচিয়ে খুচিয়ে তারপর জোর করে মুখে চিড়া ও পানি ঢুকিয়ে শ্বাসরোধ করে মারে। গান পাউডার দিয়ে তারা আবদুল লতিফ হল পুড়িয়ে দেয়। তখন সংসদীয় দলের নেতা আবদুস সামাদ আজাদের নেতৃত্বে রাজশাহী গিয়েছিলাম। পার্লামেন্টে সমস্ত ঘটনার ভিডিও হস্তান্তর করে বলেছি জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধ করতে হবে। তৎকালীন বিএনপির উপনেতা বদরুদ্দোজা চৌধুরী বলেছিলেন সংবিধান অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পরে আর হয়নি। জামিল, আক্তার, রতন খুন হয়েছিল। দেবাশীষ, রুপম জাসদের জুয়েলসহ অনেককে আমরা হারিয়েছি। সেদিন সারাদেশের মানুষের কাছে আমরা বিচার চেয়েছি।’
তিনি বলেন, আজকে আবার দেখলাম ছাত্রলীগের হাতে বুয়েট এবং প্রত্যেকটা বিশ্ববিদ্যালয় জিম্মি। এরা শুধু রাতের নিশিথে আবরারকে পিটিয়ে মারেনি, এরপর তারা খেলা দেখেছে, খেয়েছে। কী অমানবিক ! ওদের পাপের ভার পূর্ণ হয়েছে। ছাত্রলীগের অপকর্মের সীমা ছাড়িয়েছে তবে শিবিরের সীমাকে ছাড়াতে পারেনি। শিবিরকে হালাল করার চেষ্টা হচ্ছে।
মেনন বলেন, মাথাব্যথার জন্য মাথা কেটে ফেলতে হবে-এর সঙ্গে আমি একমত নই। ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করার খেলা বন্ধ করতে হবে। ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ হলে দেশে মৌলবাদের উত্থান ঘটবে। কারণ অতীতেও এটি হয়েছে।
ওয়ার্কার্স পার্টির চট্টগ্রাম জেলা কমিটির সভাপতি আবু হানিফের সভাপতিত্বে সম্মেলনে আরও বক্তব্য রাখেন ওয়ার্কার্স পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য জাতীয় শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক আমিরুল হক আমিন, চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক হাসান ফেরদৌস, জাতীয় শ্রমিক ফেডারেশন চট্টগ্রাম জেলার সাধারণ সম্পাদক দিদারুল আলম চৌধুরী, যুব মৈত্রীর সভাপতি কায়সার আলম, ছাত্রমৈত্রীর সাধারণ সম্পাদক এস এম আলাউদ্দিন। সম্মেলনের দ্বিতীয় অধিবেশনে সঞ্চালনা করেন ওয়ার্কাস পার্টির চট্টগ্রাম জেলার ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক শরীফ চৌহান প্রমুখ।
-সিভয়েস/এসসি
সিভয়েস প্রতিবেদক