ওয়াসার নষ্ট মিটার যেন ‘সোনার হরিণ’

প্রকাশিত: ০৮:৪৯, ৭ আগস্ট ২০১৮
ওয়াসার নষ্ট মিটার যেন ‘সোনার হরিণ’

চট্টগ্রাম ওয়াসার নষ্ট মিটারগুলো দুর্নীতির বড় একটি ক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। যত বেশি নষ্ট মিটার, তত বেশি দুর্নীতি। মহানগরের চাহিদা অনুযায়ী পানি সরবরাহ করতে না পারলেও নানাভাবে পকেট ভারী করছেন ওয়াসার মিটার পরিদর্শক ও বিলিং শাখার কর্মীরা। তারা নানা অনিয়ম করেই যাচ্ছেন। দেখার যেন কেউ নেই। নষ্ট মিটারের বিল বেশি দেখিয়ে নানা কৌশলে নিজেদের পকেট ভর্তি করছেন এমন অভিযোগও রয়েছে। বাড়তি আয়ের সুযোগ থাকায় মিটার পরিদর্শক পদের জন্য চলে রীতিমতো প্রতিযোগিতা। নষ্ট মিটার তাদের কাছে যেন সোনার হরিণ।

নগরীতে বসবাস করে প্রায় ৫০ লাখ মানুষ। তাদের দৈনিক পানির চাহিদা রয়েছে প্রায় ৫০ কোটি লিটার। এর বিপরীতে ওয়াসা সরবরাহ করছে মাত্র ২১ কোটি লিটার। ২৯ কোটি লিটার ঘাটতির মধ্যে আবার প্রায় ৩ কোটি লিটার পানি অপচয় হচ্ছে। অপচয় হওয়া পানির বড় একটি অংশকে পুঁজি করে বাড়তি আয় করছেন ওয়াসার অসাধু কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারী। প্রতিনিয়ত তারা কারও না কারও ঘাড়ে চাপিয়ে দিচ্ছেন বাড়তি বিল। আবার কাউকে ধরিয়ে দিচ্ছেন নামমাত্র বিল।

 

ওয়াসার তথ্যে জানা গেছে, ওয়াসায় পানির সংযোগ রয়েছে ৬১ হাজার ৯১০টি। এর মধ্যে পানির বিল করা হয় ৫৬ হাজার ৬৫১টিতে। সংযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে ৫ হাজার ২৫৯টি। আর গড় বিল করা হয় ১২ হাজার ২২টিতে। মিটারই নেই এমন সংযোগ রয়েছে ২৬৫টি। 

অভিযোগ রয়েছে, মূলত বিচ্ছিন্ন সংযোগে গোপনে পানি সরবরাহ দিয়ে এবং নষ্ট ও চুরি হয়ে যাওয়া মিটারে গড় বিল দেখিয়ে গড়ে দুর্নীতি করছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কারণে হয়রানির শিকার হয়ে অনেক সময় ওয়াসায় অভিযোগ করেন গ্রাহকরা। অনেকে লিখিতভাবে অভিযোগ করলেও কেউ কেউ আবার মৌখিকভাবেও অভিযোগ করেন। এই নিয়ে প্রতিদিন গ্রাহক আসেন ওয়াসা অফিসে। তারা বিল কমানোর আবেদন জানান সংশ্লিষ্ট দফতরে। কিন্তু বিল কমানো হয় না। এতে হতাশ হয়ে ফিরে যান গ্রাহকরা। 

আরও দেখা গেছে, ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে সংযোগ বিচ্ছিন্ন হলেও মাঠ পর্যায়ে ওয়াসার কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী অর্থের বিনিময়ে গ্রাহকদের সংযোগ পুনঃস্থাপন করেন। নগরীর মতিঝর্ণা, বায়েজিদ ও শেরশাহ এলাকাসহ বিভিন্ন স্থানে বিচ্ছিন্ন সংযোগে পানি সরবরাহ দেয়া হচ্ছে।

হয়রানির শিকার হয়ে ওয়াসায় অভিযোগ করেন নগরীর চকবাজারের বাসিন্দা ব্যবসায়ী মোহাম্মদ ইকবাল হোসেন। তিনি বলেন, ‘মেয়ে আর স্ত্রীকে নিয়ে আমার পরিবার। প্রতি মাসে মিটার রিডাররা আমাকে অতিরিক্ত বিল ধরিয়ে দিচ্ছেন। প্রায় সময় তারা মিটার না দেখেই বিল দিচ্ছেন। গ্রাহকদের কাছ থেকে টাকা আদায় করতেই তারা এমনটি করে থাকেন।’

 

বায়েজিদের রৌফাবাদ এলাকার মুন্সি কলোনির বাসিন্দা গৃহকর্মী লুবনা হায়দার সিভয়েসকে বলেন, প্রতিনিয়ত মিটার রিডাররা অতিরিক্ত বিল দিয়ে থাকেন। তবে তাদের হাতে কিছু টাকা দিলে বিল কমিয়ে দেন। প্রতি মাসেই এভাবে টাকা দিতে হচ্ছে। তাদের টাকা দিলে বিল কমিয়ে দেয়, আবার যে মাসে টাকা দেওয়া হয়না সে মাসে বিল বাড়তি লিখে দেয়। তাই বাধ্য হয়ে টাকা দিতে হচ্ছে।

চট্টগ্রাম ওয়াসার প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা মো. তহিদুল ইসলাম বলেন, বর্তমানে ওয়াসায় ৪০ জন মিটার রিডার রয়েছে। পর্যাপ্ত মিটার পরিদর্শক না থাকায় অন্য পদের কর্মচারীদের দিয়ে মিটার রিডিংয়ের কাজ চালাতে হচ্ছে। তবে পর্যাপ্ত লোকবল না থাকায় পুরোপুরি তা নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছে না। গ্রাহকের মিটার নষ্ট হলে কিংবা চুরি হলে সেক্ষেত্রে গড় বিল দেওয়া হয়। অন্য কোনভাবে গড় বিল দেয়া হয় না। কোন অভিযোগে গ্রাহকের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার পর সেই গ্রাহক যদি জরিমানার অর্থ কিংবা বকেয়া বিল পরিশোধ করেন, তখন আমরা দ্রুত সংযোগ পুনঃস্থাপন করি। পাশাপাশি পানির অপব্যবহার ও চুরি বন্ধে আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।

এ বিষয়ে চট্টগ্রাম পানি সরবরাহ ও পয়ঃনিষ্কাশন কর্তৃপক্ষের পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার এ কে এম ফজলুল্লাহ সিভয়েসকে বলেন,  মটিাররে বষিয়ে অভযিোগরে প্রক্ষেতিে পদক্ষপে নয়ো হচ্ছ।ে এছাড়া ওয়াসা কর্তৃপক্ষ ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে পানি চুরি বন্ধ ও বকেয়া বিল আদায়ে অভিযান পরচিালনা কর।ে অভিযানে পানি চুরি ও বিল পরিশোধ না করা হলে সংশ্লিষ্ট গ্রাহকের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয়। বিচ্ছিন্ন সংযোগে পানি সরবরাহ না থাকায় বিল করা হয় না। 

সিভয়েস/এসএ/এমএইচ

কে এম জাহেদ

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়