Cvoice24.com

মাস্ক উৎপাদনে আগ্রহ কমেছে চট্টগ্রামের পোশাক কারখানায়

সিভয়েস প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২০:৩৭, ২৩ জানুয়ারি ২০২২
মাস্ক উৎপাদনে আগ্রহ কমেছে চট্টগ্রামের পোশাক কারখানায়

বিভিন্ন কারখানায় তৈরি করা হচ্ছে মাস্ক। -ছবিঃ সংগৃহীত

গত দু’বছর পোশাকের পাশাপাশি মাস্ক উৎপাদন ও বিদেশে রপ্তানি করে কোটি কোটি টাকা বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করেছে পোশাক কারখানাগুলো। চলতি বছরও করোনার সংক্রমণ বাড়লেও মাস্ক উৎপাদনে যায়নি চট্টগ্রামের অধিকাংশ পোশাক কারখানা। এদিকে করোনার সংক্রমণ ও জ্বরের প্রকোপ বাড়ায় নগরের বিভিন্ন পাইকারি ও খুচরা দোকানে বেড়েছে মাস্কসহ বিভিন্ন সুরক্ষাসামগ্রীর দাম।

চট্টগ্রামের পোশাক কারখানা মালিকরা বলছেন, গত বছরের আগস্টের পর থেকে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ ও কানাডায় মাস্কের ব্যবহার কমে আসছে। যেহেতু ওই দেশগুলোতে সকল নাগরিককে করোনার টিকার আওতায় নিয়ে আসা হয়েছিল তাই মাস্ক পরাও দিন দিন কমে গিয়েছিল। ব্যবসায়ীরা ভেবেছে করোনার সংক্রমণ কমে যাওয়ায় মাস্কের আর চাহিদা থাকবে না। তাই তারা আর মাস্কের উৎপাদন ও কার্যাদেশের দিকে জোর দেয়নি। তাই কারখানাগুলো মাস্ক উৎপাদনে যায়নি বলে জানান তারা। 

বিজিএমইএ জানায়, বর্তমানে তাদের তালিকাভুক্ত ৭শ’ পোশাক কারখানা রয়েছে। এরমধ্যে সচল রয়েছে ৩৫০টির মত কারখানা। এদের মধ্যে আগে পোশাকের পাশাপাশি অনেক কারখানা মাস্ক উৎপাদন করলেও এবার তা দেখা যাচ্ছে না। গুটিকয়েক কারখানা মাস্ক উৎপাদন করলেও অধিকাংশ কারখানা মাস্ক উৎপাদন করছে না বলে জানায় সংগঠনটি। 

অপরদিকে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর তথ্যমতে, গত বছর দুই কোটি ৩০ লাখ ডলারের মাস্ক বিদেশে রপ্তানি হয়েছে। তবে সবচেয়ে বেশি রপ্তানি হয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাতে। দেশটিতে ৩ কোটি ১৭ লাখ ডলারের (প্রায় ২৮৫ কোটি টাকা) ফেস কভার, ওভেন ও সার্জিক্যাল মাস্ক রপ্তানি করা হয়েছে। অপরদিকে ২০২০ সালেও ৩ কোটি ৫০ লাখ ডলারের উপরে মাস্ক রপ্তানি করা হয়েছিল। 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিজিএমইএ’র প্রথম সহ-সভাপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম সিভয়েসকে বলেন, ‘বিজিএমইএর তালিকাভুক্ত পোশাক কারখানাগুলোতে শীতের পোশাকসহ বিভিন্ন ধরনের পোশাক পণ্য তৈরি করা হচ্ছে। মাঝখানে করোনার সংক্রমণ কমে যাওয়ায় ও ব্যবসায়ীদের পূর্ব প্রস্তুতি না থাকায় বর্তমানে অধিকাংশ কারখানাগুলোতে রপ্তানির উদ্দেশ্যে মাস্ক তৈরি করা হচ্ছে না। কিছু কিছু কারখানা তৈরি করলেও তা বড় আকারে নয়। বর্তমানে করোনার সংক্রমণ বেড়ে গেছে। কার্যাদেশ আসবে কিনা, কোন কার্যাদেশ বাতিল হয়ে যায় কিনা তা নিয়েই রীতিমত শঙ্কায় সময় পার করছি আমরা।’ 

এদিকে চট্টগ্রামে ক্রমশই বাড়ছে করোনার সংক্রমণ। আর এই পরিস্থিতিতে সচেতনমহলে তৈরি হয়েছে বাড়তি সতর্কতা। নিজে ও পরিবারকে সুস্থ রাখতে কিনছেন মাস্ক, হ্যান্ডস্যানিটাইজার, হ্যান্ডরাবসহ বিভিন্ন সুরক্ষাসামগ্রী। আর এ চাহিদাকে পুঁজি করে উৎপাদন পর্যায়ে দাম না বাড়লেও পাইকারি ও খুচরা বাজারে দাম বেড়েই চলেছে।

রোববার (২৩ জানুয়ারি) নগরের পাইকারি বাজার হাজারি গলি, নিউমার্কেট, চকবাজার, জিইসি ও বহদ্দারহাটসহ বিভিন্ন খুচরা দোকান ঘুরে দেখা যায়, আগে ৬ টাকায় বিক্রি হওয়া প্যাকেট ভর্তি ৩ পিস সার্জিক্যাল মাস্ক ১০ টাকায়, আগে মানভেদে ৭০ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি হওয়া প্রতিবক্স সার্জিক্যাল মাস্ক বর্তমানে ১৫০ থেকে ১৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পাশাপাশি আগে ৯০ টাকায় বিক্রি হওয়া ২৫০ মিলিলিটারের হ্যান্ডরাব বর্তমানে ২০ টাকা বেড়ে ১১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সেই সঙ্গে কাপড়ের মাস্ক ১০ থেকে ২০ টাকা বেড়ে মানভেদে ৩০ থেকে ১৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

নগরের দেওয়ানহাট এলাকার বাসিন্দা নুরুল আমিন সিভয়েসকে বলেন, ‘করোনা বাড়ি গিয়ি, এতেল্লাই এহন মাস্কর দামও বাড়ি গিয়ি। আগে এক্কান লইলি ৫ টিঁয়া দি পাইতাম, এহন ইয়েন ১০ টিঁয়া দি কিনন পরের। ওধু মাস্ক নো; ওষুধর দামও বাড়ি গিয়ি। (করোনা বেড়ে যাওয়ায় মাস্কের দাম বেড়ে গেছে। আগে একটি মাস্ক ৫ টাকা দিয়ে পেলেও এখন তা ১০ টাকা দিয়ে কিনতে হচ্ছে। শুধু মাস্ক নয়; ওষুধের দামও বেড়ে গেছে)।’

তিনি আরও বলেন, ‘হালিয়াত্তুন জ্বর আইস্সে। তিন চাইরগান দোয়ানত যাইয়্যেরে নাপা এক্সটেন্ড নো ফাই। দোয়ানদার অক্কলে ওষুধ ইবার সাপ্লাই নাই বলি হর। যারো এক দোয়ানত ফাই, ইতারা আগেত্তুন টিঁয়া বাড়তি লর। হদিন আগেও এক পাতা লইদি ২০ টিঁয়া দি, আজিয়া এই পাতা ৩০ টিঁয়াদি লন ফইজ্জে। (গতকাল থেকে জ্বর আসছে। তিন চারটি দোকানে গিয়েও নাপা এক্সটেন্ড পাইনি। দোকানদাররা ওষুধটির সাপ্লাই নেই বলছে। তবে এক দোকানে পেলেও দাম বাড়তি বলছে। কিছুদিন আগেও এক পাতা নিয়েছি ২০ টাকা দিয়ে। আজ তা ৩০ টাকা দিয়ে কিনেছি)।’

আগ্রাবাদ এলাকার সততা ফার্মেসির মালিক মোহাম্মদ ইদ্রিস আলী বলেন, ‘পাইকারদের কাছ থেকে আমাদের বাড়তি দরে কিনতে হয় তাই আমরা বাড়তি দামে মাস্ক, হ্যান্ড স্যানিটাইজার বিক্রি করছি। আর কোম্পানি থেকে নাপা এক্সটেন্ডের সরবরাহ কমে গেছে। অন্যদিকে মানুষ খুব বেশি জ্বরে আক্রান্ত হওয়ায় ওষুধটির চাহিদা বেড়ে গেছে। তাই ওষুধটি কোথাও কোথাও বাড়তি দরে বিক্রি হচ্ছে।’

এ ব্যাপারে উৎপাদন পর্যায়ে জানতে চাইলে অপসোনিন ফার্মার চট্টগ্রাম অঞ্চলের মার্কেটিং এক্সিকিউটিভ মোহাম্মদ জাহিদ সিভয়েসকে বলেন, ‘হ্যান্ড স্যানিটাইজার, মাস্ক, হ্যান্ড রাবসহ বিভিন্ন সুরক্ষাসামগ্রীর দাম উৎপাদন পর্যায়ে বাড়েনি। ওমিক্রন সংক্রমণ ও জ্বরের প্রকোপ বাড়ায় পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীরা বাড়তি দামে বিক্রি করছেন।’

-সিভয়েস/টিএম/এমএম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়