Cvoice24.com

গয়না বিক্রিতে ভাটা স্বর্ণের দোকানে, বেড়েছে পুরনো সোনা বিক্রি

সিভয়েস প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৭:০৬, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২২
গয়না বিক্রিতে ভাটা স্বর্ণের দোকানে, বেড়েছে পুরনো সোনা বিক্রি

করোনার পর থেকেই অস্থিরতা শুরু হয়েছে সোনার বাজারে। দু’বছরের ব্যবধানে দরপতন তো দূরে থাক উল্টো গত পাঁচ মাসে দফায় দফায় বেড়েছে দাম। ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যাওয়ায় বিক্রি কমেছে প্রায় ৩০ ভাগ। তবে বাড়তি দামে পুরনো গয়না বিক্রি করে লাভের ফায়দা নিতে ক্রেতার ভিড় বেড়েছে দোকানে।

বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতির (বাজুস) তথ্যনুযায়ী বর্তমানে ভরিপ্রতি সোনা বিক্রি হচ্ছে ৮২ হাজার ৩৪৭ টাকায়। ২০ শতাংশ বাদ দিয়ে পুরনো গয়না পড়ছে ভরিতে ৬৫ হাজার ৮৭৮ টাকা। 

স্বর্ণ ব্যবসায়ীরা বলছেন, গত পাঁচমাসে দফায় দফায় স্বর্ণের দাম বেড়েছে। ফলে ২০ শতাংশ বাদ দিলেও ভালো দাম পাওয়ায় পুরনো গয়নাগাটি বিক্রিতে আগ্রহ বেড়েছে সাধারণ মানুষের।

চট্টগ্রাম নগরে মিমি সুপার মার্কেট, বিপণি বিতান (নিউমার্কেট), আখতারুজ্জামান, কেসিদে রোড, দিদার মার্কেট, চকবাজার, বন্দর টিলা, ফ্রি পোর্ট, কাটগড়, স্টিল মিল বাজার, কালুরঘাট, সেন্ট্রাল প্লাজা, আলকরণ রোড, হাজারী লেইন, চিটাগাং শপিং কমপ্লেক্স, লাকি প্লাজা, আমিন সেন্টার, বায়েজিদ, সিডিএ অলংকার মার্কেটসহ বিভিন্ন জায়গায় ও মার্কেটে রয়েছে স্বর্ণের দোকান। 

বক্সিরহাট এলাকার চাঁদনী জুয়েলার্সের মালিক সাধন ধর সিভয়েসকে বলেন, আগে আমার দোকানে প্রতিদিন গড়ে ১০ থেকে ১২ জন ক্রেতা আসতেন। এখন এরচেয়েও বেশি আসছেন বিক্রি করতে। ২০ শতাংশ বাদ দিয়ে মোটামুটি ভালো লাভ পাওয়ার কারণে পুরনো গয়না বিক্রি করছেন বেশিরভাগ। এছাড়া যারা বিয়ের জন্য কেনাকাটা করতে আসছেন তাদের অধিকাংশই পুরো গয়নার সেট না কিনে শুধু নাক-কানের দুল, আংটি অথবা চুড়ি কিনে ফিরছেন।

নগরের বিপনি বিতানের কাঞ্চন জুয়েলার্সের মালিক দুর্জয় বণিক সিভয়েসকে বলেন, সোনার দুষ্প্রাপ্যতা, বেশি উপযোগিতা ও সৌন্দর্য থাকায় এবং নষ্ট না হওয়ায় স্বর্ণের কদর বেশি। সবমিলিয়ে স্বর্ণের প্রতি মানুষের আকর্ষণ বাড়লেও দাম বাড়ায় মানুষ কিনতে পারছে না। কেনার বদলে অনেকে আমাদের কাছে আসছেন স্বর্ণ বিক্রি করতে। যারা পুরনো স্বর্ণ বিক্রি করছেন তারা বেশ লাভবান হচ্ছেন।

বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতির (বাজুস) তথ্য অনুযায়ী, বর্তমান সময়ে ভরিপ্রতি সোনা বিক্রি হচ্ছে ৮২ হাজার ৩৪৭ টাকায়। সময়ের ব্যবধানে আকাশছোঁয়া হয়েছে স্বর্ণের বাজার। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় অর্থাৎ ১৯৭১ সালে স্বর্ণের ভরি ছিল ১৫৫ টাকা। ১৯৮০ সালে সোনার ভরি বিক্রি হয় ৩ হাজার ৭৫০ টাকা হয়। ১৯৯০ সালে সোনার ভরির দাম ঠেকে ৬ হাজার টাকায়। দশ বছর পর ২০০০ সালে ভরিতে ৯০৬ টাকা বেড়ে বিক্রি হয়েছিল ৬ হাজার ৯০৬ টাকায়। ২০১০ সালে ৪২ হাজার ১৬৫ টাকায় এবং ২০১২ সালে গিয়ে ভরিপ্রতি সোনার দাম ঠেকে ৬০ হাজার ১৬২ টাকায়।

এদিকে নভেম্বর ডিসেম্বর মাসে বিয়ের মৌসুম ধরে ব্যবসা ধরার স্বপ্ন দেখছেন ব্যবসায়ীরা। 

বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি চট্টগ্রাম জেলার সভাপতি মৃণাল কান্তি ধর সিভয়েসকে বলেন, সৌদি আরব, দুবাই, মালয়েশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপ-আমেরিকার তুলনায় আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে সহজে যাতায়াত ও খরচ কম হওয়ায় বর্তমানে ভারত হয়ে উঠেছে দেশিয় সোনার চাহিদা পূরণের প্রধান বাজার। এতে করে মার খাচ্ছে আমাদের দেশীয় বাজার। আমাদের দোকানগুলোতে ক্রেতার আনাগোনা নেই বললেই চলে। উল্টো বিভিন্ন দোকানে পুরনো গয়না বিক্রি করছেন অনেকে। তবে শীতকালে বিয়ের সিজন। তাই নভেম্বর-ডিসেম্বরে স্বর্ণ বিক্রি বাড়ার কথা। চট্টগ্রাম মহানগরে প্রায় পাঁচ হাজার ২শ জুয়েলারি দোকান আছে। যদি ভরা মৌসুমেও ব্যবসা করা না যায় তাহলে প্রায় ৩০ ভাগ দোকান বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। 

তিনি বলেন, আমাদেরকে ব্যবসা পরিচালনার জন্য ডিলিং লাইসেন্স গ্রহণ, নবায়ন ফি, ট্রেড লাইসেন্স, মেশিন সংগ্রহ করতে অর্থ ব্যয় করতে হয়। পাশাপাশি দোকান ভাড়া, কর্মচারির মজুরিসহ আরো খরচ রয়েছে। অথচ স্বর্ণের দাম বাড়ার পর থেকেই আমাদের বেচাবিক্রি তেমন একটা নেই। আমরাও দাম কমার কোন লক্ষণ দেখছি না। সবমিলিয়ে আমরাও শঙ্কায় সময় পার করছি।

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়