বড় জাহাজ ভিড়লে কমবে লাইটারেজ জাহাজ নির্ভরতা

সিভয়েস প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২২:০০, ১৫ জানুয়ারি ২০২৩
বড় জাহাজ ভিড়লে কমবে লাইটারেজ জাহাজ নির্ভরতা

১৩৫ বছর পর বড় জাহাজ ভেড়ানোর সক্ষমতা অর্জন করেছে চট্টগ্রাম বন্দর। আগামীকাল থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে বন্দর জেটিতে নোঙর করবে ১০মিটার গভীরতা ও ২০০ মিটার দৈর্ঘ্যের বড় জাহাজ। ফলে এখন থেকে বহিনোঙরে বড় জাহাজের মালামাল আর লাইটারেজ জাহাজে খালাস করতে হবে না। এতে করে লাইটারেজ জাহাজ নির্ভরতা কমার পাশাপাশি কমবে আমদানি ব্যয়। যদিও লাইটার জাহাজ মালিকদের দাবি, বড় জাহাজ ভেড়ানোর সুফল পেতে হলে জেটির সংখ্যা বাড়াতে হবে। তাই এখনই কমছে না জাহাজ নির্ভরতা।

বন্দর কর্তৃপক্ষ বলছে, বন্দর জেটিতে সরাসরি ২০০ মিটার দৈর্ঘ্যের জাহাজ ভেড়ানোর ফলে কনটেইনার জাহাজের ক্ষেত্রে ১১শ টিইইউএস কনটেইনার বেশি পরিবহন করা যাবে। পাশাপাশি, বাল্ক কার্গো জাহাজে ১৫ থেকে ২০ হাজার মেট্রিক টন খোলা পণ্য বেশি পরিবহন করা যাবে। ফলে আমদানিকারকরা সরাসরি জেটিতেই পণ্য খালাস করে নিতে পারবে। ৯ থেকে ১৩ নম্বর জেটি, সিসিটি ও এনসিটি জেটিতে সরাসরি বড় জাহাজগুলো ভিড়তে পারবে। এতে জাহাজ জটের কোন শঙ্কা থাকছে না।

অন্যদিকে লাইটার জাহাজ সংশ্লিষ্টদের শঙ্কা জাহাজ জটের। তাদের দাবি পরিস্থিতি অনুযায়ী বন্দরের ২৫টি জেটি দিয়ে বড় জাহাজের চাপ সামলানো সম্ভব হবে না। জাহাজ জট এড়িয়ে বড় জাহাজ ভেড়ানোর পুরোপুরি সফলতা পেতে হলে বন্দরের আরও অনেক জেটি প্রয়োজন হবে।

জানা গেছে, দীর্ঘ সময় ধরে বন্দর চ্যানেলে গভীরতা কম থাকায় সাড় ৯ মিটারের বেশি গভীরতার জাহাজ বন্দরের মূল জেটিতে ভিড়তে পারতো না। তাই এতদিন খোলা পণ্যবাহী বিশেষ করে বিভিন্ন শিল্পের কাঁচামাল, গম, সার, সিমেন্ট ক্লিংকার, পাথর, চিনি, সার, খাদ্য পণ্য, স্ক্র্যাপ, কয়লা সহ বিভিন্ন পণ্য বহিনোঙরে ছোট আকৃতির (লাইটার) জাহাজে পণ্য খালাস করতে হতো।

বন্দরের বহিনোঙর থেকে বছরে প্রায় ৫ কোটি টন পণ্য পরিবহন হয়। এরমধ্যে ৭০ ভাগ পণ্য বাল্ক জাহাজ থেকে ছোট ছোট লাইটারেজ জাহাজে খালাস করে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পাঠানো হয়। বাল্ক জাহাজে একসঙ্গে ৫০ থেকে ৫৫ হাজার টন পণ্য পরিবহন হয়। আর লাইটার জাহাজের ধারণ ক্ষমতা ১ হাজার থেকে ২ হাজার টন পর্যন্ত। একটি বড় জাহাজ থেকে পণ্য নিতে ২০ থেকে ২৫টি লাইটারের প্রয়োজন। বর্তমানে প্রায় ১ হাজার ৮০০ লাইটার জাহাজ পণ্য পরিবহনে নিয়োজিত রয়েছে। এছাড়া বাকি ৩০ ভাগ কনটেইনার পণ্য টাগবোটের সাহায্যে সরাসরি আনা হয় বন্দরের জেটিতে। আগামীকাল আনুষ্ঠানিকভাবে বন্দরে ১০ মিটার গভীরতার জাহাজ চলাচল শুরু হবে। বন্দরের ৯ থেকে ১৩ নম্বর জেটি এবং এনসিটি ও সিসিটি জেটিতে ভেড়ানো যাবে এসব জাহাজ। 

আমদানিকারকদের বরাতে জানা গেছে, লাইটারেজ জাহাজ নির্ভরতা কমলে জাহাজ প্রতি দৈনিক ১৫ থেকে ২০ হাজার ডলার সাশ্রয় হবে। 

বাংলাদেশ লাইটারেজ শ্রমিক ইউনিয়নের সহ-সভাপতি নবী আলম সিভয়েসকে বলেন, আমরা তো খোলা পণ্য লাইটারিং করি। কনটেইনার পণ্য নয়। আর বন্দরের জেটিতে যত বড় জাহাজই ভেড়ানো হোক না কেন এর প্রভাব আমাদের উপর পড়বে না। 

তিনি বলেন, বন্দরের জেটি আছে এখন সর্বোচ্চ ২৫টি। আমদানিকারকদের লাইটারিং নির্ভরতা কমাতে গেলে বন্দরের কমপক্ষে ৩শ জেটি লাগবে। এরকম করতে গেলে ১ নম্বর জেটি থেকে কর্ণফুলী ব্রিজ পর্যন্ত জেটিই বানাতে হবে। এটা হলো শত বছর পরের কথা। কাজেই লাইটারেজ জাহাজ নির্ভরতা কমবে না। বলা যত সহজ বাস্তবটা অনেক ভিন্ন।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মো. ওমর ফারুক বলেন, বড় জাহাজ ভেড়ানোর সক্ষমতা অর্জন করায় চট্টগ্রাম বন্দর নতুন যুগে প্রবেশ করছে। ১৯৭৫ সালে সাড়ে ৭ মিটার গভীরতার জাহাজ ভেড়ানো শুরু হয়। ধাপে ধাপে ২০১৪ সালে এসে আমরা সাড়ে ৯ মিটার গভীরতার জাহাজ ভেড়াতে সক্ষম হই। চ্যানেলের গভীরতা বাড়ানোর কারণে বন্দর জেটিতে এখন ১০ মিটার গভীরতার জাহাজ ভেড়ানো যাবে। আগে বেশি ড্রাফটের জাহাজ জেটিতে ভিড়তে পারতো না বলে বহিনাঙরে পণ্যগুলো লাইটারিং করতে হয়। এতে করে শিপিং এজেন্টদের বাড়তি অর্থ ব্যয় হতো। এখন সেটা আর হবে না। 

উল্লেখ্য, আগামীকাল সোমবার (১৬ জানুয়ারি) সকালে চট্টগ্রাম বন্দরের সিসিটি (চট্টগ্রাম কন্টেইনার টার্মিনাল)-এর ১ নম্বর জেটিতে ভিড়ানো হবে ১০ মিটার দৈর্ঘ্যের ‘কমন এটলাস’ নামের কার্গো জাহাজ।  মেঘনা গ্রুপের আমদানি করা ৬০ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন চিনি নিয়ে মার্শাল আইল্যান্ডসের পতাকাবাহী জাহাজটি বর্তমানে চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙ্গরে রয়েছে। ব্রাজিলের সন্তোস বন্দর থেকে গত ১০ জানুয়ারি চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙ্গরে পৌঁছায় জাহাজটি। বন্দরের বার্থিং ক্ষমতা বাড়ানোর এই প্রচেষ্টা কন্টেইনার হ্যান্ডেলিংয়ের পাশাপাশি পরিবহন খরচ কমিয়ে আনবে বলে মনে করছে বন্দর কর্তৃপক্ষ।

সিভয়েস/টিএম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়