Cvoice24.com

চট্টগ্রামে দর্শক টানতে পারেনি `রেহেনা মরিয়ম নূর`

সিভয়েস প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২১:১০, ২৩ নভেম্বর ২০২১
চট্টগ্রামে দর্শক টানতে পারেনি `রেহেনা মরিয়ম নূর`

১২ নভেম্বর দেশে সিনেমাটি মুক্তি পেয়েছে

‘রেহানা মরিয়ম নূর’ চলচ্চিত্র দুনিয়ার সবচেয়ে বড় উৎসব কান ফেস্টিভ্যালে অংশ নিয়ে ব্যাপক আলোচিত হয়। এটিই প্রথম বাংলাদেশী সিনেমা যেটি কানের অফিসিয়াল সিলেকশনে নির্বাচিত হয়েছিল। এই সিনেমায় অভিনয় করে অস্ট্রেলিয়ার ‘এশিয়া প্যাসিফিক স্ক্রিন অ্যাওয়ার্ডস’-এ সেরা অভিনেত্রীর খেতাব অর্জন করেন আজমেরী হক বাঁধন।

নেটিজেনদের মধ্যেও এই সিনেমা নিয়ে আগ্রহের কমতি ছিল না।  ১২ নভেম্বর থেকে দেশের প্রেক্ষাগৃহে দেখানো হচ্ছে এই সিনেমাটি। কিন্তু চট্টগ্রামের সুগন্ধা সিনেমা হলে গিয়ে দেখা গেল উল্টো চিত্র। তিন শিফটে দেখানোর পরও প্রদর্শনের ১২তম দিনে এসে টিকেট বিক্রি হয়েছে মাত্র ৬০০টি।

মঙ্গলবার (২৩ নভেম্বর) বিকাল চারটায় চট্টগ্রামের কাজীর দেউড়ি এলাকার সুগন্ধা সিনেমা হলে গিয়ে পাওয়া গেল মাত্র কয়েকজন দর্শককে। সিনেমাকে কেন্দ্র করে সেই উৎসবের আমেজ কোথাও নেই।

এর আগে সাত মাস ধরে বন্ধ থাকার পর গত অক্টোবরে সিনেমা হল খুলে দেওয়া হয়। সে সময়ও এমন দর্শক খরা ছিল। হল মালিকরা আশা করেছিলেন ভাল সিনেমা আসলেই ব্যবসায় ক্ষতিপূরণ কাটিয়ে উঠা যাবে।

দুই দশক আগেও সিনেমা ছিল বিনোদনের অন্যতম মাধ্যম। নতুন সিনেমা মুক্তি পেলেই মানুষ পরিবার-পরিজন নিয়ে হলে ছুটে যেত। ঈদ-পূজা, পালা-পার্বণে গ্রাম ও শহরের মানুষের ভিড় লেগে থাকতো সিনেমা হলে। টিকেট কাউন্টারের সামনে থাকত দীর্ঘ লাইন। কিন্তু এমন দৃশ্য সবশেষ কবে দেখা গেছে মনে করতে পারছেন না কোন হল মালিক।

সুগন্ধা সিনেমা হলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. সাইফ হোসেন জানান, ভাল ছবি না থাকায় দর্শক আর হলে আসে না। এছাড়া এখন ওটিটি (ওভার দা টপ) অ্যাপের যুগ। ইন্টারনেটের কল্যাণে মানুষ হলে এসে আর সিনেমা দেখতে চায় না। এই সিনেমা হল ৫ বছর বন্ধ থাকার পর গেল বছর ডিসেম্বরে আবার চালু করি। কিন্তু ভাল ছবি আসলেও এখন আর দর্শকরা হলমুখো হতে চান না। 

তিনি বলেন, এই সিনেমা হলের আগের নাম ছিল ঝুমুর। পরে এটি সুগন্ধ নামে পরিচালিত হচ্ছে। করোনা মহামারীর কারণে আমাদের ব্যবসা পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। পরে সিনেমা হল খুলে দেওয়ার পর আমরা হলে দর্শক আনার জন্যে বিভিন্ন অলিগলিতে লিফলেট ও ব্যানার বিতরণ করছি। তবুও দর্শকের কোন সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না।

সাইফ হোসেন আরো বলেন, ‘রেহানা মরিয়ম নূর’ সিনেমাটি নিয়ে আমরা আশাবাদী ছিলাম। তিন শিফটে এই ছবিটি দেখাচ্ছি। কিন্তু নয় দশজনের বেশি দর্শক পাওয়া যাচ্ছে না। আমাদের প্রতিদিনের খরচ চালানোই এতে কঠিন হয়ে যাচ্ছে।

তিনি বলেন  ‘১২ নভেম্বর থেকে আজকের দিন পর্যন্ত (২৩ নভেম্বর পর্যন্ত) মাত্র ৬০০টি টিকেট বিক্রি করতে পেরেছি আমরা। 

ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যাবে, চট্টগ্রামের সিনেমা হলের তালিকা বেশ দীর্ঘ। নব্বই দশকেও সাগরিকা, বনানী, সানাই, আকাশ, উপহার, রিদম, মেলোডি, সঙ্গীত, রঙ্গম, নূপুর, চাঁদনী, কর্ণফুলী, গুলজার, উজালাসহ ছিল ২৭টি। আর তাতেই বোঝা যায়, বন্দর এই নগরীতে কেমন ছিল চলচ্চিত্র ব্যবসা। কিন্তু রূপালী পর্দার সেইসব আজ সোনালি অতীত। সংখ্যাটা কমতে কমতে এখন যেন শূন্যের কাছাকাছি। বর্তমানে মাত্র দুটি সিনেমা হল চালু আছে- নগরীর কে সি রোডের সিনেমা প্যালেস ও কাজীর দেউরীর ঝুমুর (সুগন্ধা)। এগুলোর অবস্থাও ভালো নয়, বন্ধ হওয়ার প্রহর গুনছে। অথচ বছর কয়েক আগেও পাঁচটি সিনেমা হল চালু ছিল চট্টগ্রামে- আলমাস, দিনার, পূরবী সিনেমা ও চালু দুই সিনেমা হল। এর মধ্যে পূরবী সিনেমা হলটি বন্ধ রয়েছে দুই বছর ধরে। 

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দর্শক ও ভালো চলচ্চিত্রের অভাবেই মূলত নগরীর গুলজার মোড়ের গুলজার; জেলখানা রোডের রঙ্গম; লালদীঘির খুরশিদ মহল; পাহাড়তলীর আকাশ ও অলঙ্কার; ঝাউতলার নূর জাহান; আতুরার ডিপুর সঙ্গীত; মোহরার কর্ণফুলী; অক্সিজেনের চাঁদনী; দুই নম্বর গেটের রূপালী; হালিশহরের স্যারিসন; টাইগার পাসের নেভি সিনেমা; আগ্রাবাদের সাগরিকা, সানাই, বনানী, উপহার ও রিদম; স্টেশন রোডের উজালা, নূপুর, মেলোডি, জলসা; সদরঘাটের লায়ন; নিউমার্কেটের জলসা; পতেঙ্গার শাহীন সিনেমা হল বন্ধ হয়ে গেছে। 

এর মধ্যে লালদীঘির খুরশিদ মহল সিনেমা হল ভেঙে তৈরি করা হয়েছে মহল মার্কেট, স্টেশন রোডের উজালা ভেঙে করা হয়েছে এশিয়ান এসআর হোটেল, আগ্রাবাদের বনানী সিনেমা হল ভেঙে বনানী কমপ্লেক্স, নিউমার্কেটের জলসা গুড়িয়ে দিয়ে হয়েছে জলসা মার্কেট। এ ছাড়া লায়ন, নূপুর ও রঙ্গম সিনেমা হল ভেঙেও করা হয়েছে বহুতল বিপণী বিতান।

সিনেমা হল মালিকরা বলছেন, ভালো ছবি না এলে এবং পাইরেসি রোধ না হলে ঐতিহ্যবাহী এই শিল্প হারিয়ে যাবে। আবার নতুন আধুনিক সরঞ্জাম ও যন্ত্রপাতি সংযোজন করতে অনেক অর্থের দরকার। এ বিষয়ে সরকারও আশ্বাস দিয়েছিল, সিনেমা হলগুলোতে সংস্কার আনবে। কিন্তু আজও সেই উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। তাই হলগুলো ভেঙে নির্মাণ করা হচ্ছে নানা স্থাপনা। কোনোটিতে মার্কেট, কোনোটি বহুতল ভবন, আবার কোনোটি হয়েছে গুদাম।

একটি বেসরকারি কলেজের ৩৭ বছর বয়সী শিক্ষিকা রেহানা মরিয়ম নূরকে কেন্দ্র করেই এ চলচ্চিত্রের চিত্রনাট্য তৈরি হয়। যেখানে রেহানা একজন সিঙ্গেল মা, মেয়ে, বোন ও শিক্ষিকা হিসেবে কঠিন জীবনযাপনে অভ্যস্ত। রেহানা মরিয়ম নূর ৬ বছর বয়সী এক কন্যার মা৷ মেয়েকে একা বড় করা, বাবা, মা ও ভাইয়ের দেখাশোনা, খরচ জোগাড়- সবই করতে হয় তাকে৷ কিন্তু রেহানা কতটা অবিচল তা বোঝা যায় যখন তিনি তার স্বামীর দেয়া ঘড়ি সবসময় পরে থাকেন৷ মেডিকেল কলেজের এই শিক্ষকের জেদ প্রমাণ করতে গিয়ে পরিচালক দেখান, যে তিনি ছাত্রীর নকল ধরার জন্য গিয়ে বসে থাকেন তার পাশে৷ সফলও হন৷ তিনি এক সন্ধ্যায় কলেজ থেকে বেরোনোর সময় অপ্রত্যাশিত ঘটনার সাক্ষী হন। এরপর থেকে সে তার মেডিকেল কলেজের ছাত্রীর পক্ষ হয়ে সহকর্মী অপর শিক্ষকের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে ঘটনার প্রতিবাদ জানান। আর এ প্রতিবাদ জানাতে গিয়ে তিনি ক্রমেই একরোখা হয়ে ওঠেন। পরবর্তীতে একই সময়ে রেহানা ৬ বছর বয়সী কন্যার সাথে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ রূঢ় আচরণ করেন। এমন অবস্থায় অনড় রেহানা বিদ্যালয়ের তথাকথিত নিয়মের বাইরে থেকে নিজ সন্তান ও ওই ছাত্রীর জন্য ন্যায়বিচারের খোঁজ করতে থাকেন।

১ ঘণ্টা ৪৭ মিনিট ব্যাপ্তির ছবিটিতে নাম ভূমিকায় অভিনয় করেন আজমেরী হক বাঁধন। এছাড়া বিভিন্ন চরিত্রে আছেন সাবেরী আলম, আফিয়া জাহিন জায়মা, আফিয়া তাবাসসুম বর্ণ, কাজী সামি হাসান, ইয়াছির আল হক, জোপারি লুই, ফারজানা বীথি, জাহেদ চৌধুরী মিঠু, খুশিয়ারা খুশবু অনি, অভ্রদিত চৌধুরী।

এটি ২০২১ সালে নির্মিত বাংলাদেশী চলচ্চিত্র। চলচ্চিত্রটি পরিচালনা করেছেন আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ সাদ এবং প্রটোকল ও মেট্রোর ব্যানারে প্রযোজনা করেছেন জেরেমি চুয়া। এছাড়াও সহ-প্রযোজনা করেছে সেন্সমেকারস প্রোডাকশন। 

আন্তর্জাতিকভাবে পরিবেশনের উদ্দেশ্যে চলচ্চিত্রটি জার্মানভিত্তিক বিক্রয় ও পরিবেশক সংস্থা ফিল্মস বুটিকের সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়। ২০২১ সালে এ চলচ্চিতটি ৭৪তম কান চলচ্চিত্র উৎসব আসরের আঁ সেরতাঁ র‍্যগার বিভাগে নির্বাচিত হয়।এটি এ বিভাগে স্থান পাওয়া প্রথম বাংলাদেশী চলচ্চিত্র।

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়