গাউসেভাণ্ডার হযরত মতিয়র রহমান শাহ্ (ক.) ফরহাদাবাদী
ড. মোহাম্মদ আবদুল আজিম শাহ্
মজজুবে সালেক, কাশফ ও কারামতের খনি, গাউসেভাণ্ডার হযরত মতিয়র রহমান শাহ্ (ক.) ফরহাদাবাদী প্রকাশ শাহসাহেব কেবলা চট্টগ্রাম-ফটিকছড়ি উপজেলার নাজিরহাট পৌরসভাধীন পূর্বফরহাদাবাদ গ্রামে ২৪ ফাল্গুন ১৮৯৮ খ্রিস্টাব্দের ৮ মার্চ সোমবার মাতৃগর্ভ আউলিয়া হিসেবে পৃথিবীতে আগমন করেন। পিতা- হযরত শাহ সুফি আহমদ আলী (রহ.),মাতা - মোছাম্মৎ আলিমুন্নেছা । পিতা -মাতা উভয়েই সুফি ছিলেন।
শিক্ষা: স্থানীয় মক্তব ও (তৎকালীন) ব্রজমোহন স্কুল থেকে প্রাথমিক শিক্ষা সম্পন্ন করে ফরিদপুর ভাঙ্গা হাই স্কুল থেকে ১৯১৯ সালে প্রথম বিভাগে মেট্রিকুলেশন ও ফেনী কলেজ থেকে প্রথম বিভাগে ইন্টারমিডিয়েট -এ কৃতিত্বের সহিত উত্তীর্ণ হন। এরপর ডিগ্রিতে অধ্যয়নের জন্য কলকাতার বিখ্যাত সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজে ভর্তি হন। ডিগ্রিতে অধ্যয়নকালীনই আধ্যাত্মিক জজবা প্রকাশ পায়। বাংলা, আরবি, ইংরেজি, উর্দু, ফার্সি সহ বিভিন্ন ভাষায় তাঁর অসাধারণ পান্ডিত্য ছিল।
কর্ম: ছাত্রবস্থায় বেলায়েতী শক্তির প্রকাশ হলেও বছরখানে চট্টগ্রামের প্রসিদ্ধ দারুল উলুম মাদ্রাসায় ফার্সি বিভাগের শিক্ষক হিসেবে নিয়োজিত হন। ফার্সি ভাষায় অসাধারণ দক্ষতার কারণে সমসাময়িক আলেমগণ তাঁকে 'ফার্সি সাহেব' বলে সম্বোধন করতেন। এছাড়া আদালত ভবনে শেষ ভ্যালুয়েশন বিভাগেও কিছুদিন কর্মরত ছিলেন।
বিবাহ:- পার্শ্ববর্তী বাবুনগর গ্রাম নিবাসী আহমদুল হকের কন্যা মোসাম্মৎ মরিয়ম বেগমের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন।
বেলায়ত বিকাশ: -ডিগ্রিতে অধ্যয়নরত অবস্থায় বিভিন্ন অলৌকিক ঘটনার মাধ্যমে বেলায়ত প্রকাশ হলেও মূলত মাতৃগর্ভে থাকাকালীন বিভিন্ন কারামতের মাধ্যমে এর বহিঃপ্রকাশ ঘটে। তিনি চার প্রকারের বেলায়ত অর্জন করে আধ্যাত্মিকতার সর্বোচ্চ আসনে অধিষ্ঠিত হয়েছেন। পীরানে পীর হযরত সৈয়দ আবদুল কাদের (ক.) জিলানী যেভাবে মাতৃগর্ভ থেকে মা'কে সাপের দংশন হতে রক্ষা করেন। একইভাবে শাহ সাহেবও মাতৃগর্ভ থেকে মা'কে হারাম মাছ খাওয়া থেকে রক্ষা করেন। অর্থাৎ প্রকৃতিগত অলি (বেলায়তে বিল আছালত) হিসেবে আবির্ভাব হয়। তিনি যে মাতৃগর্ভ আউলিয়া হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন মাতৃগর্ভে থাকাকালীন একটি ঘটনার মাধ্যমে এর প্রমাণ পাওয়া যায়।
মাতৃ গর্ভজাত আউলিয়া হযরত মতিয়র রহমান শাহ্: তিনি মাতৃগর্ভে থাকাকালিন তাঁদের গৃহকর্মী অন্যের বরশি থেকে চুরি করে একটি মাছ গৃহে নিয়ে আসেন। ওই সময় জমিতে একটু, আধটুকু পানিতে সবাই বড়শি ফেলতো। ওই রকম বড়শিতে একটি মাছ ধরা ছিল। গৃহকর্মী বড়শি থেকে মাছটি নিয়ে শাহ সাহেব কেবলার আম্মাকে দেন। যেহেতু মাছটি চুরি করে এনেছে তাই এটি হারাম। বাবাজানের আম্মাজান মাছটি কাটার সময় লাফাতে থাকে। এটি কাঁটতে যতই চেষ্টা করুক না কেন হাত থেকে ছিটকে পড়ে। একপর্যায়ে তিনি মাথা ঘুরে পড়ে যান। মাছটি কাটতে ব্যর্থ হয়ে মাচায় রেখে দেন। ওখান থেকে চুরি করা মাছ অদৃশ্য হয়ে যায়। আর খুঁজে পায়নি। শাহ সাহেব কেবলার জন্মের সাত থেকে আট বছরে, ঘরে একই রকম মাছ রান্না হলে, বালক শাহ সাহেব সহ অন্যান্য ভাইয়েরা একসঙ্গে খেতে বসেন। মা যখন সকলের পাতে মাছের টুকরা তুলে দিচ্ছেন, এমন সময় পূর্বের ঘটনাটি মনে পড়লে উপস্থিত সন্তানদেরকে খুলে বলেন। তখন বালক শাহ সাহেব কেবলা মুচকি মুচকি হাসছেন। একপর্যায়ে তিনি মা'কে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘কলিজার হ্যাচকা কেমন লেগেছিল মা?' একথা শোনার পর মা অবাক হয়ে সন্তানের দিকে তাকিয়ে থাকেন। কারণ কলিজার হ্যাচকার বিষয়ে তিনি তো কাউকে বলেননি। অথচ সন্তান মতি কী করে জানেন? তখন মা মন্তব্য করেন- অ-পুত তুই হন ফইর হবিনি? (তুমি ফকির হবে না কি)। তখন বালক শাহ্হসাহেব প্রসঙ্গ পাল্টে ভাত খেয়ে অন্যত্রে চলে যান। পীরানে পীর দস্তগীর(ক.) যেভাবে মাতৃগর্ভ থেকে মা'কে সর্পদংশন হতে রক্ষা করেন, তদ্রুপ গাউসেভান্ডার হযরত মতিয়র রহমান শাহ্ও মাতৃগর্ভ থাকা কালীন মা'কে হারাম মাছ খাওয়া থেকে বিরত রাখেন। এই অলৌকিক ঘটনা থেকে শাহ্সাহেব কেবলা জন্মগত অলি ছিলেন, এর প্রমাণ পাওয়া যায়।
তিনি চার প্রকারের বেলায়ত অর্জন করে অধ্যাত্মিকতার সর্বোচ্চ আসনে অধিষ্ঠিত হয়েছেন। নফস বা প্রবৃত্তির বিরুদ্ধচারণ করে (কঠোর সাধনার মাধ্যমে ) বেলায়েত (বিল মালামাত) অর্জন করেন। মাঘের কনকনে শীতে রাত-দিন দীর্ঘ সময় ধরে পানিতে ডুবে থাকতেন, শুধু নাক মোবারক দেখা যেত। কঠোর সাধনা দ্বারা প্রকৃতিতে নিমগ্ন থেকে এলমে লাদুনি অর্জন করেও বেলায়ত (বিদ দারাছত)প্রাপ্ত হন। আবার- রুহানি উত্তরাধিকার সূত্রেও বেলায়ত(বিল বেরাছত)প্রাপ্ত হয়েছেন। শাহ সাহেব কেবলার জন্মের পর তাঁর বাড়ির দিকে ইঙ্গিত করে বেলায়তে ওজমার অধিকারী গাউসুল আজম হযরত সৈয়দ আহমদ উল্লাহ(ক.) মাইজভান্ডারী প্রকাশ -হযরত কেবলা ভবিষ্যৎবাণী করেন। বলেন, "হালদার তীরে আমার একটি ঘর উঠবে, আপনারা সেখানে যাবেন অন্যথায় ধরা হবেন"।হযরত কেবলার বেলায়তে ওজমার ধারাবাহিকতায় তিনিও যে এই ক্ষমতার উত্তরাধিকারী হবেন এটি তাঁর ভবিষ্যৎবাণী দ্বারা জগৎকে বুঝিয়ে দিয়েছেন। পরবর্তীতে হযরত সৈয়দ গোলামুর রহমান শাহ (ক.)মাইজভান্ডারী প্রকাশ বাবা ভান্ডারী কেবলার মাধ্যমে বেলায়তের পূর্ণ ক্ষমতা শাহসাহেব কেবলার নিকট স্থানান্তরিত হয়। তিনি ছোটকাল থেকেই মাইজভান্ডার শরীফ সহ অসংখ্য মাজার শরীফে গমন করে বিভিন্ন ওলী হতেও ফয়েজ হাসিল করেন।
বেলায়তে ওজমা অর্জন:- হযরত কেবলার বেলায়তে ওজমার ধারাবাহিকতায় তাঁরই পদাঙ্ক অনুসরণকারী শাহ সাহেবও বেলায়তের সর্বোচ্চ আসনে অধিষ্ঠিত হয়ে মজ্জুবে সালেক অলি হিসেবেআত্মপ্রকাশ ঘটে। তিনি প্রায় মাইজভান্ডার শরীফ গমন করতেন। কোনো সময় মজ্জুব হালত, কোনো সময় ছলুক অবস্থায়। অ্সিয়ে গাউসুল আজম সৈয়দ দেলাওর হোসাইন(ক.) মাইজভান্ডারী ও সমসাময়িক আউলিয়াগ তাঁকে মাইজভান্ডার শরীফের শরীফের' যুবরাজ 'বলে সম্মোধন করতেন। শাহসাহেব কেবলা মাইজভান্ডার শরীফ গমন করলে অসিয়ে গাউসুলআজম অতীব সম্মান সহকারে পাশে চেয়ারে বসাতেন এবং আপ্যায়ন করতেন। অনেক সময় দুজনের মধ্যে দীর্ঘক্ষণ কথোপকথন চলতো। তাকে সম্মান ও আপ্যায়ন করতে দেখে মাইজভান্ডার শরীফের মাওলানা শাহসুফি সৈয়দ মাহফুজুল করিম সাহেবের মনে প্রশ্ন উদয় হয় -কী তাঁর মর্যাদা। দরবারের সাথে কী এমন সম্পর্ক থাকলে তাঁকে এতটা সম্মান প্রদর্শন করেন? সেই রাতে মাওলানা সাহেব স্বপ্নে দেখেন- দরবার শরীফের ময়দানে মাহফিলের আয়োজন করা হয়। মঞ্চে একটি রাজকীয় সিংহাসন রয়েছে। মাঠভর্তি পাগড়ী পরা মানুষ। সবই উচ্চস্তরের আউলিয়া।উপস্থিত সকলে আলোচনা করছেন মাইজভান্ডার শরীফের ' যুবরাজ' আসবেন, তাই এই আয়োজন । এমতাবস্থায় মাওলানা সাহেব, অসিয়ে গাউসুল আজমকে জিজ্ঞেস করলেন, সবাই যে যুবরাজের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন তিনি কে? একথা বলতেই তিনি ইশারা করলেন -ওই দেখো যুবরাজ আসছেন। মাওলানা সাহেব দেখলেন, তিনি আর কেউ নয়;স্বয়ং হযরত মতিয়র রহমান শাহ।তিনি মঞ্চে উঠে সিংহাসনে উপবেশন করলে উপস্থিত সকলে দাঁড়িয়ে তাঁকে সম্মান প্রদর্শন করেন। তিনিই মাইজভান্ডার শরীফের আধ্যাত্মিক পরিমন্ডলের যুবরাজ। পরবর্তীতে বাবাভান্ডারী কেবলার সোহবতের মাধ্যমে যুবরাজ থেকে আধ্যাত্মিক রাজসিংহাসনের (বেলায়েতে উজমা) অধিকারী হয়েছেন ।( যিনি যুবরাজ,তিনিই পরবর্তীতে রাজ সিংহাসনের বাদশা হন)।
একদা শাহসাহেব কেবলা, বাবা ভান্ডারীর নিকট গমন করলে তিনি তাঁর আসন মোবারকে থেকে কথাগুলো রান্না করা (গরু /মহিষের) নলা শাহসাহেবকে দান করেন। এই সময় হযরত কেবলার অন্যতম খলিফা, মহান অলি( শাহনগর নিবাসী ) হযরত রেজওয়ান শাহ (ক.) উৎফুল্লচিত্তে উপস্থিত সকলের উদ্দেশ্যে বলেন, "বাবাভান্ডারী কেবলার অনেক যোগ্যখলিফা থাকা সত্বেও মাইজভান্ডারী সিংহাসন মতিয়র রহমান শাহকে দিয়ে দিলেন"।
হযরত কেবলার রুহানি ফয়েজপ্রাপ্ত এবং বাবা ভান্ডারীর প্রত্যক্ষ ফয়েজ প্রাপ্ত হয়ে শাহসাহেব কেবলা বেলায়তি ক্ষমতার সর্বোচ্চ আসনে অধিষ্ঠিত হন। হযরত কেবলার বেলায়তে ওজমার ধারাবাহিকতা ও তাঁর পদাঙ্ক অনুসরণ করে সাহা সাহেবও এই বেলায়তের শক্তি ও ক্ষমতার অধিকারী ছিলেন, এটি তাঁর শান -মর্যাদা, অলৌকিকতা সহ রহস্যপূর্ণ কালামের মাধ্যমে বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছেন। তাইতো তিনি বলেন," আমার দরবার হতে কেউ খালি হাতে ফেরে না;কেননা আল্লাহর পক্ষ থেকে আমি সৃষ্টির কল্যাণে নির্ধারিত "।এজন্য এই দরবার সৃষ্টিকুলের মিলন কেন্দ্র। তাঁর শান বর্ণনা করে গিয়ে হযরত আজিজুল হক(রহ.) শেরে বাংলা (দিওয়ানে আজিজ কিতাবে) বলেছেন, "হযরত মতিযর রহমান শাহ হলেন মজজুবে সালেক, আরিফ বান্দাদের আদর্শ, আউলিয়াগনের চোখের মনি, কাশফ ও কারামতের খনি,যুগশ্রেষ্ঠ বুজুর্গ। এবং তাঁর মাজার শরীফ সৃষ্টিকুলের মিলন কেন্দ্র ও জান্নাতের বাগান"।
উল্লেখযোগ্য একটি কেরামত: মৃত্যুশয্যা থেকে প্রাণ রক্ষা -চট্টগ্রামের বোয়ালখালী নিবাসী (গোমদন্ডী) অঘোর চন্দ্র আইচ নামক জনৈক ডাক্তার, হাটহাজারীর কাটিরহাট বাজারে চেম্বার করতেন। বাড়ি থেকে টেলিগ্রাফ আসে যে-তার স্ত্রী খুবই অসুস্থ, তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। টেলিগ্রাফ পেয়ে ডাক্তার অঘোর চন্দ্র অতিসত্বর চেম্বার বন্ধ করে বাড়ি যাওয়ার উদ্দেশ্যে ট্রেন ধরতে রওনা হবেন, এমন সময় শাহসাহেব কেবলা বিদ্যুৎগতিতে এসে তার চেম্বারে প্রবেশ করে ডাক্তার সাহেবকে বলেন, "আমার জ্বর আসতেছে, ইনজেকশন দেন"। ডাক্তার সাহেব দেখলেন, বাবা জানের কোনো জ্বর নেই। কেন তিনি ইনজেকশন দিতে বলছেন? আর দেওয়ার মতো ডিস্ট্রিল ওয়াটার ছাড়া কিছুই নেই। ডাক্তার সাহেব ভাবনায় পরে যান। একদিকে স্ত্রীর অসুস্থতার দরুন বাড়ি যাওয়া, অপরদিকে শাহ সাহেব কেবলা বিনা অসুস্থতায় ইনজেকশন দিতে বলা,সব মিলে তিনি ভাবনায় পড়ে যান। তিনি চিন্তা করলেন শাহশা্হেব বাবাজান যখন ইনজেকশন দেওয়ার জন্য বলছেন নিশ্চয়ই কোনো না কোনো কারণ আছে। ডাক্তার সাহেব ইঞ্জেকশন পুশ করার জন্য বাবা জানকে বিছানায় শয়ন করতে বললে তিনি বলেন, জামাইয়ের স্বয়ংস্থলে শশুরের শয়ন গ্রহণ অনুচিত, তাই বেঞ্চিতে শয়ন করেন। এরপর ডাক্তার সাহেব বাবাজানের আদেশে তাঁর বাহুতে ডিস্ট্রিল ওয়াটার পুশ করেন। ইনজেকশন দেওয়ার পর একটু ভাল লাগতেছে বলে চলে যান। এরপর ডাক্তার সাহেব প্রথম ট্রেন ধরে বোয়ালখালির গুমদন্ডী চলে আসেন। ঘরে পৌঁছে দেখেন -তার স্ত্রী স্নান শেষ করে ঘরে বসে আছেন। তখন তিনি তার ভাইকে অহেতুক টেলিগ্রাফ প্রেরণ করে এই দু'দিনে দু'পয়সা রোজগারে বিঘ্ন সৃষ্টির জন্য বিরক্ত হন। তখন ভাই বিনয় সহকারে বলেন - তিনি অসুস্থ ছিল ঠিকই এবং মন্ত্র পাঠদান শেষে তুলসীতলে শয়ন করিয়ে করিয়ে নৈতিক দোষ এড়ানোর জন্য টেলিগ্রাফ প্রেরণ করেছি।তিনি মুমূর্ষু অবস্থায় ছিলেন, কিন্তু ভগবানের কৃপায় সুস্থ হয়ে যান। পরবর্তীতে স্ত্রীর সাথে কথোপকথনে তিনি জানতে পারেন যে - যখন তুলসীধামে শয়ন করানো হয় এমতাবস্থায় তার বাহুতে অনুভব হলো যে, কে যেন আমার বাহুতে একটা ইনজেকশন পুশ করেন। এর পরপরই আমি সুস্থ হয়ে উঠি। তখন ডাক্তার সাহেব ভাবছেন ওই সময় তো আমি শাহসাহেব বাবাজানকে ইনজেকশন পুশ করেছি। তিনি বুঝতে পারেন নিজের শরীরে ইনজেকশন পুশ করে আমার স্ত্রীকে দয়া করেন এবং প্রাণ ভিক্ষা দিয়েছেন। (বর্ণক- প্রবীণ সংবাদিক- ওবায়দুল হক। সভাপতি, চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব)।
দর্শন: তিনি শুনিয়েছেন শান্তির বাণী। সব সময় বলতেন কী বুদ্ধি?উত্তরে বলতেন - সুবুদ্ধি। সুবুদ্ধির মধ্যেই শান্তি নিহিত। তিনি বলেন, "সুবুদ্ধিতে খোদা,সুবুদ্ধিতে রাসুল( দ.), সুবুদ্ধিতে কোরআন, সুবুদ্ধিতে ইসলাম, সুবুদ্ধিতে ঈমান, সুবুদ্ধিতে মানবতা"। সর্বত্রে যদি সুবুদ্ধির চর্চা হয়, তাহলে বিশ্বে শান্তি সুনিশ্চিত। কলুষিত আত্মা আলোকিত হয়। বর্তমান বিশ্ব অশান্তির অশান্তির আগুনে পুড়ছে,একমাত্র কারণ কুবুদ্ধির চর্চা। শাহসাহেব কেবলার নির্দেশিত সুবুদ্ধির দর্শন গ্রহণ করলে বিশ্ব থেকে হানাহানি,হিংসা মারামারি জঙ্গিবাদ দূর হবে। জাতি- ধর্ম -বর্ণ নির্বিশেষে সকলের মধ্যে ভ্রাতৃত্ববোধ প্রতিষ্ঠা হবে।বিশ্বে বইবে শান্তির সু-বাতাস।
দয়া বিতরণ :- তিনি না চাইতেই সকলকে দয়া করতেন। যিনি তারভ সান্নিধ্য পেয়েছেন,কিংবা দূর থেকে স্মরণ করেছেন তিনিই দয়া প্রাপ্ত হয়েছেন।মানুষের ঘরে ঘরে গিয়ে দয়া করেছেন, এরকম নজির ইতিহাসে বিরল। তাকে চেনে না,জানে না এদেরও দয়া করেছেন। সেটা হোক জাগতিক কিংবা আত্মিক। মৃত লোককে জীবিত, বিনামেঘে বৃষ্টি, এম পি -মন্ত্রী হওয়ার ভবিষ্যৎ বাণী, হাজারো কঠিন সমস্যা থেকে মুক্তি দেওয়া, ৭১ সালে স্বাধীনতার ভবিষ্যৎ বাণী, নাকেস বান্দাকে কামেল -এ পরিনত করাঅসংখ্য কারামতের নজির রয়েছে। তিনি ইশারা করলেই অঝোর ধারায় বিনামেঘে বৃষ্টি হতো। তিনি বলতেন -এই বৃষ্ট সেই বৃষ্টি নয়, এটি করুনার বৃষ্টি। একুশ মাঘ তাঁর ওরশ শরীফের দিন এখনো বৃষ্টি পড়ে। জীবদ্দশায় যেভাবে মানুষকে অকাতরে দয়া বিতরণ করেছেন, একইভাবে মাজার শরীফ থেকেও সমভাবে দয়া পেয়ে যাচ্ছে।
ওফাত : তিনি তাঁর বংশীয় উত্তরাধিকার (আওলাদ) হযরত শাহসুফি মাওলানা আবুল ফয়েজ শাহ( রহ.) কে রহমত -দয়া দান সহ সাজ্জাদানশিন(আধ্যাত্মিক উত্তরাধিকারী) মনোনীত করে ২১ মাঘ, ১৯৬৪ সাল ধরাধাম ত্যাগ করে আল্লাহর সাথে মহামিলনে গমন করেন। জানাজা শরীফের ইমামতি করেন তাঁর আওলাদ ও সাজ্জাদানশীন হযরত শাহসুফি মওলানা আবুল ফয়েজ শাহ্(রহ.)।এই মহান দিনে প্রতি বছর শাহসাহেব কেবলার ওরস শরীফ মহাসমারোহে গাউছিয়া রহমানিয়া ফয়েজিয়া মঞ্জিলের উদ্যোগে মতি ভান্ডার দরবারে শরিফে অনুষ্ঠিত হয়। এইবারও ২১ মাঘ, ৪ ফেব্রুয়ারি রবিবার, ৬০ তম বার্ষিক ওরশ শরীফ অনুষ্ঠিত হবে।
লেখক- ড. মোহাম্মদ আবদুল আজিম শাহ্
আধ্যাত্মিক উত্তরসূরি
মতি ভান্ডার দরবার শরীফ।