Cvoice24.com

মশার উপদ্রবে ভেজাল কয়েলের ব্যবসা রমরমা 

শুভ্রজিৎ বড়ুয়া

প্রকাশিত: ১৬:২৫, ১৬ মার্চ ২০২১
মশার উপদ্রবে ভেজাল কয়েলের ব্যবসা রমরমা 

মশার উপদ্রবে ভেজাল কয়েলের ব্যবসা রমরমা।

‘মশা কামড় দিয়ে হয়েছে লাশ, এটাই নিত্য ইতিহাস।’—লোকমুখে মশা নিয়ে এমন নানা ছন্দ ও প্রবাদ আছে আমাদের জীবনে। কিন্তু এর চেয়ে বেশি ভোগান্তি হলো মশার কামড়। তার উপর সকলের ভয় ডেঙ্গুবাহী এডিস নিয়ে। সেই সাথে তো আছে ম্যালেরিয়াও। তাই সবাই মশা মারতে মরিয়া। এজন্য তারা ব্যবহার করছেন কয়েল, এন্টি ইনসেক্টস ওয়েল বা ইলেক্ট্রিক ব্যাট। এতে ব্যবসায়ীরাও পোয়াবারো।

আর এ ফাঁকে সুযোগ নিচ্ছেন কিছু অসাধু ব্যবসায়ী। যারা অনুমোদনহীন নকল মশার কয়েল উৎপাদন করে লুটছেন ফায়দা। এ নিয়ে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের কাজে ধীরগতি থাকায় অসন্তোষ প্রকাশ করছেন নগরবাসী। অন্যদিকে জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর এসব মশার কয়েলের মান ও বাজার মনিটরিংয়ের দায়িত্ব যাদের কাঁধে সেই বিএসটিআই—ও অপেক্ষায় আছে ক্ষতিগ্রস্থ কোনও নাগরিক কখন অভিযোগ করেন সেই আশায়। যদিও গতবছর ভেজাল মশার কয়েল কারাখানায় অভিযান চালিয়েছিল আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।  
 
নগরবাসী জানান, সন্ধ্যা নামতে না নামতেই মশার প্রকোপ বাড়তে থাকে। রাতে মশারি ছাড়া ঘুমানোর সুযোগ পান না তারা। মশারিতেও ঢুকে পড়ছে মশা। এছাড়াও সন্ধ্যা থেকে জ্বালাতে হচ্ছে মশার কয়েল। বেশ কয়েকটি ওয়ার্ডে দিনের বেলাও মশার উপদ্রব বেড়ে যাওয়ায় মশারির পাশাপাশি মশার কয়েল ব্যবহার করতে হয়। 

১৫ নম্বর বাগমনিরাম এলাকার বাসিন্দা শফিকুল বলেন, ‘মশা নিয়ে সমস্যা শুধু আমাদের এলাকায় না। সব এলাকাতেই সমস্যা হচ্ছে। মশার জন্য ঘরে-বাইরে কোথাও শান্তি পাচ্ছি না। অবস্থা এমন আজকাল মশার উপরই মশা বসে থাকে। হয়তো মশার ওষুধও ভেজাল।’  

মশার উপদ্রব বাড়ার কারণে মশার কয়েল বিক্রি বাড়ার কথা জানান ব্যবসায়ীরা। রিয়াজউদ্দীন বাজারের এক দোকানদার বলেন, ‘মশার যন্ত্রণায় তো আমরাও বাঁচতে পারছি না। মানুষ কয়েল ছাড়াতো থাকতেই পারছে না। তাই মশার কয়েলের চাহিদা এখন বেশি। তবে ঘাটতি নেই। চাহিদার মতো সরবরাহ থাকায় বাজারে কয়েলের দাম বাড়েনি।’

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নগরের মুরাদপুর ও জেলার পটিয়ায় বেশ কয়েকটি বাসা-বাড়িতে কয়েল বানিয়ে বাজারে বিক্রি করছেন। এর মধ্যে কেউ কেউ নামসর্বস্ব নাম ব্যবহার করছে, আবার কেউ কেউ প্রসিদ্ধ নাম ব্যবহার করে নিজেদের বানানো নকল মশার কয়েল বিক্রি করছে। এরমধ্যে বাজারে বেশি পরিমাণে বিক্রি হচ্ছে মোরগ, বুস্ট, এরোসল নামের কয়েকটি নামের মশার কয়েল। এছাড়াও বাজারে ইলেক্ট্রিক ব্যাট বিক্রিও বেড়েছে। 

জানা যায়, গাছের গুড়ি, আঠা ও রং মিশিয়ে তুলসী পাতা, জনতা, টাইগার, এসটিসি এন্টি ডেঙ্গু, সুপার কিং, ডলফিন, সুপার ফাইটার, নীম, ঈগলু ম্যাক্সসহ নানা নামে ভেজাল কয়েল বিক্রির মাধ্যমে বাজারে ছড়ানো হচ্ছে। শুলকবহর মাদরাসা গলির ভেতরে একটি টিন সেড বাসায় ভেজাল মশার কয়েল তৈরি করছে বেশ কয়েকজন শ্রমিক। এর আগে ২০২০ সালের ৮ অক্টোবরে পটিয়া পৌরসভার আমজুর হাটের জিএম কেমিক্যাল নামের একটি কারখানায় ৪ ভুয়া প্রতিষ্ঠানের ৭ ব্রান্ডের মশার কয়েল তৈরির অপরাধে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেছিল বিএসটিআই বিভাগীয় অফিস ও পটিয়া উপজেলা প্রশাসন।  

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বেশ কয়েকজন দোকানদার বলেছেন, আসল নকল সবই বিক্রি করা হচ্ছে। দামের ওপর নির্ভর করে আর কাস্টমার বুঝে তারা এসব ভেজাল নকল কয়েল বিক্রি করে থাকেন। বিশেষ করে এসব ভেজাল কয়েল বিক্রি হয়, নিম্ন আয়ের মানুষের বসবাস যেখানে সেই সব এলাকায়। এছাড়া উপজেলাগুলোতে তদারকি কম বলে সেখানেও দেদারসে বিক্রি হয় এসব নকল মশার কয়েল। 

এদিকে মশার কয়েল উৎপাদনে ভেজাল করার কারণে মানুষের শ্বাসতন্ত্রেরসহ মাথা ব্যথার মতো নানা রকম সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। যা নিয়ে বিশেজ্ঞরাও তাদের মতামত প্রকাশ করছেন বিভিন্ন গণমাধ্যমে। এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সিনিয়র কনসালটেন্ট ডা. আব্দুর রব সিভয়েসকে বলেন, ‘মশার কয়েল এমনিতেই ক্ষতিকর। ভেজাল হলে তো ক্ষতি আরো বেশিই হওয়ার কথা। কয়েলের ধোঁয়া যেহেতু নাক দিয়ে যায়, সেহেতু মূল সমস্যাটা হয় শ্বাসতন্ত্রে। শিশু, বৃদ্ধ ছাড়াও যারা দীর্ঘমেয়াদি জটিল রোগে ভুগছেন, তাদের জন্য এ ধোঁয়া নিঃসন্দেহে ক্ষতিকর। কিন্তু মশা উপদ্রব বেড়ে যাওয়ার কারণে মানুষ পরবর্তীতে কি ক্ষতি হবে তা নিয়ে ভাবছেন না।’

ভেজাল মশার কয়েল উৎপাদন বন্ধ করার বিষয়ে বিএসটিআই কোনো প্রকার উদ্যোগ নিচ্ছে কিনা জানতে চাইলে প্রতিষ্ঠানটির চট্টগ্রাম উপ-পরিচালক শওকত ওসমান সিভয়েসকে বলেন, ‘মশার কয়েল বাজারজাত করার জন্য অবশ্যই যে কোনো প্রতিষ্ঠানের বিএসটিআই অনুমোদন প্রয়োজন। কেউ যদি অনুমোদন না নিয়ে নিজেদের বানানো কয়েল বাজারজাত করে, আমরা অবশ্যই তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। আমরা মূলত গোপন তথ্য ও অভিযোগের প্রেক্ষিতে অভিযান পরিচালনা করি। মশার কয়েল উৎপাদনের জালিয়াতি নিয়ে আমরা গত বছরও অভিযান পরিচালনা করেছি। এবারও আমরা অভিযান পরিচালনা করবো।’

-সিভয়েস/এসবি

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়