Cvoice24.com

যে ইচ্ছা পূরণ হলো না সৌখিন মিন্টুর

সিভয়েস প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২১:৩৬, ১৮ মার্চ ২০২১
যে ইচ্ছা পূরণ হলো না সৌখিন মিন্টুর

সাইয়েদ গোলাম হায়দার মিন্টু (৭১)।

সাইয়েদ গোলাম হায়দার মিন্টু (৭১)। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) ১৬ নম্বর চকবাজার ওয়ার্ড থেকে সাতবারের নির্বাচিত কাউন্সিলর। সারাজীবন পরেছেন সাদা খাদি কাপড়ের ঢোলা পাঞ্জাবি-পাজামা। হাঁটা কিংবা রিকশা ছিল তার চলার সঙ্গী। এসব কিছুর বাইরে তিনি সংগ্রহ করেছেন ৮০০ বছরের পুরোনো মুদ্রা ও ডাক টিকিট। যেগুলো আগামী শীতে দেশের কোনো এক আর্ট গ্যালারিতে প্রর্শদনের ইচ্ছে ছিল তার। কিন্তু সেই ইচ্ছে পূরণের আগেই না ফেরার দেশে চলে গেলেন সাদাসিধে এই রাজনীতিবিদ। 

করোনায় আক্রান্ত হয়ে তিনি গতকাল বৃহস্পতিবার ভোরে রাজধানীর একটি হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। পরে রাত সাড়ে ৮টায় প্যারেড মাঠে জানাজার নামাজ শেষে মিছকিন শাহ কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।

সাইয়েদ গোলাম হায়দার মিন্টু ১৯৯৪ সাল থেকে টানা ছয়বার চকবাজার ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নির্বাচিত হন। জয়রথের শুরুটা সেই ১৯৭৭ সালে। দীর্ঘ ৪৩ বছরের যাত্রাপথে চট্টগ্রাম নগরের চকবাজার ওয়ার্ডে ৭ বার কাউন্সিলরের দায়িত্ব পালন করেছেন। সাতবারে তার কাছে ধরাশায়ী হয়েছেন বিএনপি-জামায়াতের ‘বাঘা বাঘা’ প্রার্থীরা। তবে যাত্রাপথটা মোটেও সহজ ছিল না সাইয়েদ গোলাম হায়দার মিন্টুর জন্য। বিরোধী দল থেকে শুরু করে নিজ দলীয় (আওয়ামী লীগ) বিদ্রোহীদের সঙ্গেও লড়াই করতে হয়েছে। ‘বিজয়স্তম্ভ’ গড়ে তুলতে সামাল দিতে হয়েছে বহু ঝড় ঝঞ্ঝা।

ওয়ার্ডের প্রতিটি রাস্তা, সড়ক থেকে অলিগলি—তার অস্তিত্বের সাক্ষী। সত্তরোর্ধ্ব আওয়ামী লীগের এই নেতার চোখের সামনেই ধীরে ধীরে বদলেছে চকবাজারের নাড়ি নক্ষত্র। বদলেছে এই শহর। তাকে নিয়ে নগরীর বাসিন্দাদের আছে নানা মধুর স্মৃতি। প্রায় সাড়ে চার দশকের দীর্ঘ যাত্রায় আছে অভিযোগও, না পাওয়ার বেদনা। সমর্থকরা অবশ্য বলছেন, বিএনপি-জামায়াত অধ্যুষিত এলাকা হিসেবে পরিচিত চকবাজার ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়েও বারবার জিতেছেন মিন্টু। মূলত ‘স্বাতন্ত্র্য’ মনোভাবের কারণে দলমত নির্বিশেষে তাকেই বেছে নিয়েছেন এলাকার ভোটাররা।

মিন্টুর জীবন-চরিত্র সাজানো নানা রঙ আর বৈচিত্র্যে। জীবনের প্রায় সবটুকু সময় কেটেছে খদ্দরের পাঞ্জাবী ও ঢিলেঢালা পায়জামায়। জীবনটা সাদাসিধে হলেও জ্ঞান পিপাসু মানুষটি চোখ বুজেও বুঝতে পারতেন পৃথিবীর ‘নাড়ি নক্ষত্রের’ অবস্থান। আঁচ করতে পারতেন মহাসমুদ্রের গভীরতা। 

জীবনের দীর্ঘ পথচলায় তিনি কাজ করেছেন বধিরদের জন্য। তাদের নিয়ে গড়ে তুলেছেন সংগঠন। ভাষা শিখে ওদের সঙ্গে কথা বলতে পারতেন অনর্গল। শত ব্যস্ততার মাঝেও বধিরদের জন্য কাজ করছেন ১৯৭২ সাল থেকে। মানবিক এ কাউন্সিলর বধিরদের ৭২ সালে সংগঠিত করেছে। ১৯৭৪ সালে তাদের নিয়ে ক্লাব করেছে।

কথা হয় মিন্টুর ছোট ভাই সাইয়্যেদ তারেক খলিলের সাথে। তিনি বলেন, ‘এবারের নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার পর ভাই বলেছিলেন— তার প্রাণ চকবাজারের মানুষ আর বধির পরিবার, যাদের জন্য তিনি বেঁচে আছেন। এছাড়া তার শখের জমানো আছে ঐতিহাসিক মুদ্রা (কয়েন) ও ডাক টিকিট। তার ঝুঁড়িতে জমানো আছে বিভিন্ন দেশের ৮০০ বছরেরও পুরোনো মুদ্রা। এই শীতে নির্বাচনের জন্য সেগুলো প্রদর্শন করতে পারেননি। তাই আগামী শীতে ধাতব মুদ্রা ও ডাক টিকিটগুলো নিয়ে একটি প্রদর্শনী করার ইচ্ছে ছিল তার। তিনি বলতেন— তার কাছে মাটির ৭০০ থেকে ৮০০ বছরেরও পুরোনো মুদ্রা রয়েছে। আর সংগ্রহে যে মুদ্রা আছে তা কেউ একা বহন করতে পারবে না।’ তবে তার শেষ ইচ্ছেটুকু পূরণ করার আগেই না ফেরার দেশে চলে গেলেন।— যোগ করেন তিনি।

এদিকে মিন্টুর মৃত্যুর পর চসিকের প্যানেল মেয়র নির্বাচন স্থগিত করা হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার সকালে চসিকের সম্মেলন কক্ষে এ নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল। যেখানে মিন্টুও ছিলেন প্রার্থী। মাত্র ২৭ বছর বয়সে ১৯৭৭ সালে চট্টগ্রাম পৌর কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছিলেন গোলাম সাইয়েদ মিন্টু। এরপর ১৯৯৪, ২০০০, ২০০৫, ২০১০, ২০১৫ এবং সর্বশেষ গত জানুয়ারির সিটি নির্বাচনে কাউন্সিলর নির্বাচিত হন। 

তার মৃত্যুতে গভীর শোক জানিয়েছেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, চসিকের মেয়র এম. রেজাউল করিম চৌধুরী, সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন ও চসিকের সাবেক প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন।

-সিভয়েস/এমএম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়