Cvoice24.com

বিদায়ে মিন্টুর ‘হাসি’তে কাঁদলো অজস্র চোখ

সিভয়েস প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২১:৩৯, ১৮ মার্চ ২০২১
বিদায়ে মিন্টুর ‘হাসি’তে কাঁদলো অজস্র চোখ

চকবাজার মোড়ে শোকাহত ব্যানারের ছবি দেখে থমকে দাঁড়ালেন শাহিনা আক্তার। চোখ জ্বল জ্বল। অপলক তাকিয়ে আছেন ব্যানারে। কিছু সময় যেতে আশপাশের মানুষের কাছে জানতে চাইলেন, কমিশনার মিন্টু ভাই না? প্রতিউত্তরে, হ্যাঁ। চোখে অঝর ধারায় অশ্রু বইতে শুরু করলো। মূহুর্তেই বাক শক্তি হারিয়ে ফেললেন তিনি। কত কথা বলতে চেয়েও বলতে পারছেন না। অশ্রুসিক্ত চোখে হাঁটছেন মিন্টু কমিশনারের জয় নগরের বাসভবনের দিকে।

বৃহস্পতিবার (১৮ মার্চ) কাউন্সিলর মিন্টুর মৃত্যুর খবরে তাঁর বাসার দিকে যেতে যেতেই কথা হয় শাহিনা আক্তারের সঙ্গে। মানুষের বাসা-বাড়িতে কাজ করে সংসার চালান তিনি। সংসারের নানা প্রয়োজন মেটাতে যেতেন কাউন্সিলরের কাছেই। তিনিও জনপ্রতিনিধি হিসেবে নানা সাহায্য-সহযোগিতা পৌঁছে দিতেন শাহিনার কাছে।

মিন্টু কমিশনারের ব্যাপারে প্রথম জিজ্ঞাসাতেই তিনি বলেন, ‘হগলের লগে তার ভালা সম্পক আছিল। ধনী-গরীব চিহ্ন আছিল না। সালাম দিলেই কেমন আছি জানতে চাইতেন। কতবার যে বিপদে পইরা মিন্টু ভাইয়ের কাছে গেছি। হে কিছু না দিয়া ফিরায় দেয় নায়। এমন মানুষ আমি জীবনে দেখছিনা। এ এলাকার এমন কুনো লোক নায় যে মিন্টু ভাইয়ের নুন খাইছে না ‘

শুধু শাহিনা নয় অশ্রুসিক্ত এমন হাজারো লোক জড়ো হয়েছেন সায়েদ গোলাম হায়দার মিন্টু বা মিন্টু কমিশনারের বাসভবনের সামনে। শেষবারের মত প্রিয় জনপ্রতিনিধিকে দেখতে ভীড় জমিয়েছিলেন তারা। 
‘জনপ্রতিনিধি শব্দটি মিন্টু কমিশনারের সাথে যায় না। তিনি ছিলেন একজন প্রকৃত মানুষ। চট্টগ্রমি সিটি করপোরেশন নির্বাচনের কিছুদিন আগে ব্রেইন টিউমারের অপারেশন করিয়েছিলেন। তিনি নির্বাচনে পিছু হটেননি। তিনি সবসময় এলাকার উন্নয়নের জন্য অপ্রতিরোধ্য ছিলেন।’— বলছিলেন চাচাত ভাই সায়েদ তারেক খলিল। 

তিনি বলেন, মিন্টু ভাইয়ের মেরুদণ্ডের রোগ ছিল। এ রোগের চিকিৎসায় ১৮ ফেব্রুয়ারি থেকে প্রায় ১২ দিন নগরের একটি প্রাইভেট হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। চিকিৎসায় গিয়ে তিনি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হন। সকল রোগ থেকে মোটামোটি সুস্থ হলে বাসায় ফেরেন তিনি। গত ১৩ মার্চ মেরুদণ্ডের চিকিৎসার জন্য রাজধানী নিয়ে যাওয়া হলে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটে। এতে অক্সিজেন সেচ্যুরেশন কমে গেলে রাজধানীর প্রায় ৭ থেকে ৮ টি হাসপাতাল ঘুরে ইম্পালস হসপিটালে আইসিইউ ব্যবস্থা করা হয়। পরবর্তীতে আজ ভোর সাড়ে ৪টা বাজে  চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।

চকবাজার এলাকার বাসিন্দা মোশারফ হোসেন বলেন, মিন্টু ভাই ছিলেন সহজ সরল একজন মানুষ। জীবনে ভাল কিছু শেখার ইচ্ছা থাকলে তার লাইফ স্টাইল ফলো করা যায়। তার ব্যবহারে কেউ কোনদিন কষ্ট পেয়েছে বলে আমার মনে হয়না। মারা যাওয়ার আগেও শেষ বারের মত তিনি কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছেন। হাটতে হাটতে এলাকার মানুষের সুখ দুঃখের খোজ রাখতেন তিনি। 

শিশির দত্ত নামে তাঁর বাড়িতে আসা এক ব্যক্তি বলেন, মিন্টু ভাইয়ের সাথে মূক ও বধির বিদ্যালয়ে শিক্ষকতার সূত্রে পরিচয়। ওনার সাথে পাঁচ বছর আগে পরিচয় হয়েছে। ওনার সাথে কাটানো সময়ে দেখেছি, তিনি অত্যন্ত সাদাসিধে ও সহজ সরল জীবনযাপনে অভ্যস্ত। শত ব্যস্ততার মাঝেও কোনদিন আন্তরিকতার অপূর্ণতা ছিল না। আমার মনে হয়, এলাকাবাসী তার আন্তরিকতার প্রেমে পড়ে বার বার কাউন্সিলর হিসেবে নির্বাচিত করেছেন।   

জয়নগর এলাকার সাহাবুদ্দিন বলেন, মিন্টু ভাই এলাকার নিবেদিত প্রাণ। বিপদ আপদে তিনি সবসময় মানুষের পাশে থাকতেন। তিনি শুধু পরিবারের অভিভাবক ছিলেন না। তিনি ছিলেন চকবাজারবাসীর অভিভাবক। তার মত দ্বিতীয় মিন্টু ভাই চকবাজারে আর হবে না। আমি শুনেছি তিনি সিটি করপোরেশন থেকে প্রাপ্ত কাউন্সিলরভাতা দিয়েই দৈনন্দিন জীবন অতিবাহিত করতেন।

১৯৭৭ সালে চট্টগ্রাম পৌরসভার কমিশনার নির্বাচিত হন কাউন্সিলর মিন্টু। দায়িত্ব পালন করেন ৮১ সাল পর্যন্ত। পরের বার জাতীয় পার্টির শাসনামলে ১৯৮৮ সালে আওয়ামী লীগ নির্বাচন বর্জন করলে তিনিও নির্বাচনে অংশ নেননি। ১৯৯৪ সালে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাথে নতুন করে যাত্রা শুরু করেন তিনি। এরপর থেকে তাঁকে আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি। সেই থেকে এখন পর্যন্ত তিনিই এই এলাকার কাউন্সিলর। প্রতিবার বিপুল ভোটে নির্বাচিত হন তিনি।
 

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়