Cvoice24.com

মুখে লাগাম দেওয়া বাবুল আক্তার আবারও রিমান্ডে?  

সিভয়েস প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২০:৩২, ১৬ মে ২০২১
মুখে লাগাম দেওয়া বাবুল আক্তার আবারও রিমান্ডে?  

বাবুল আক্তার।

মাহমুদা খানম মিতুকে হত্যায় কারা কীভাবে জড়িত সেই বিষয়ে নিশ্চিত হয়েছে তদন্ত সংস্থা পিবিআই। তদন্তের মাস্টার মাইন্ড যে বাবুল আক্তার সেটাও নিশ্চিত তারা। তবে গত চার দিনের রিমান্ডেও মুখ খুলছেন না বাবুল আক্তার। ফলে তিনি কি সরাসরিই আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দেবেন নাকি আবার তাকে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে সেটার জন্য আগামীকাল সোমবার পর্যন্ত অপেক্ষায় থাকতে বলছে পিবিআই। 

তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, বাবুল আক্তার গত চার দিনের রিমান্ডে মুখ খুলেননি। হালকা তথ্য দিলেও তার অনেক কিছু বিভ্রান্তিমূলক। বাবুল আক্তারের বিষয়ে আগাম কোনও মন্তব্য করা সম্ভব হচ্ছে না। তাই তিনি কি দায় স্বীকার করে স্বীকারোক্তি দিবেন নাকি তাকে আবারও রিমান্ডে আনা হবে তার জন্য শেষ মুহুর্ত পর্যন্ত অপেক্ষায় থাকতে হবে। তবে শেষ পর্যন্ত তাকে ফের রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হতে পারে।  

এরআগে গত ১২ মে থেকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে পিবিআই হেফাজতে রয়েছেন সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তার। যিনি তার শ্বশুরের দায়ের করা স্ত্রী হত্যা মামলায় প্রধান আসামি। 

পিবিআই প্রধান বনজ কুমার মজুমদার বলেছেন, বাবুল আক্তার তদন্ত দলকে তেমন সহযোগিতা করছেন না। তাই তদন্তের স্বার্থে তদন্ত দল যদি মনে করে বাবুল আক্তারকে আবার রিমান্ডে আনা দরকার তাহলে সেটা করা হবে। 

অন্যদিকে তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই পরিদর্শক সন্তোষ কুমার চাকমা সিভয়েসকে বলেন, ‘বাবুল আক্তার খুবই কম কথা বলছেন। তিনি দোষ স্বীকার করে স্বীকারোক্তি দিবেন নাকি তাকে আবার রিমান্ডে আনতে হয় তা এখনই বলা কঠিন। কেননা, অন্য আসামি হলে সেটা বলা সম্ভব। বাবুল আক্তার বলে তা অসম্ভব। সেজন্য আগামীকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।’ 

এরআগে গত ১২ মে বনজ কুমার মজুমদার এক টিভি টকশোতে যুক্ত হয়ে একই কথা বলেছিলেন পিবিআই প্রধান বনজ কুমার মজুমদার। তিনি বলেছিলেন, ‘বুধবার মামলার প্রধান আসামি বাবুল আক্তার দোষ স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিতে রাজি হলেও আগ মুহূর্তে গিয়ে তা করলেন না। ফলে মামলাটি আরও পাঁচ দিন বিলম্ব হলো। তাকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে আনতে হলো। আর কজন আসামি বাইরে আছে, তাদেরও ধরতে হবে। কিছু কাগজপত্র জোগাড় করা বাকি, তা করে দ্রুত সময়ের মধ্যে মামলার চার্জশীট দেওয়া হবে। সময় নির্ধারণ করে বলতে না পারলেও দ্রুত সময়ের মধ্যে এ মামলার তদন্ত নিষ্পত্তি করা হবে।’

এদিকে বাবুলের সঙ্গে ভারতীয় নাগরিক গায়েত্রী অমর সিংয়ের পরকীয়ার যে অভিযোগ মিতুর বাবা মোশাররফ হোসেন মামলার এজহারে করেছেন তা তদন্তে বেশ গুরুত্ব পাচ্ছে। তারই ধারবাহিকতায় গায়েত্রীর অবস্থান ইউরোপে হওয়ায় এখন গায়েত্রীর কক্সবাজারের বাসার গৃহকর্মীর সঙ্গেও কথা বলতে চায় পিবিআই। ইতোমধ্যে ওই গৃহকর্মীর খোঁজ পেয়েছে তদন্ত সংস্থা। যে কোনও সময়ে গায়েত্রী-বাবুলের পরকীয়া সম্পর্কে জানতে চাইবে পিবিআই। 

এর আগে গত ১২ মে পাঁচলাইশ থানায় দায়ের করা মামলায় মিতুর বাবা মোশাররফ হোসেন অভিযোগ করেছিলেন, ২০১৩ সালের কক্সবাজারে জাতি সংঘের শরণার্থী শিবিরে কর্মরত উন্নয়নকর্মী ভারতীয় নাগরিক গায়েত্রী সিংয়ের সঙ্গে পরকীয়ায় জড়িয়ে পথের কাটা সরাতেই স্ত্রী মিতুকে খুন করান বাবুল আক্তার। মিতু-বাবুল দম্পত্তির সুখের ঘরে আগুন লাগে মূলত এ গায়েত্রীর পরকীয়ার জেরে। তাদের পরকীয়ার জেরে পারিবারিক কলহে মাহমুদা খানম মিতুকে হত্যা করতে ভাড়াটে খুনিদের তিন লাখ টাকায় কিলিং মিশনের চুক্তি করেন তারই স্বামী সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তার। এ কিলিং মিশনে নেতৃত্ব দেন তারই ঘনিষ্ট সোর্স মুছা। আর চুক্তির তিন লাখ টাকা বাবুলের নিকটাত্মীয় সাইফুলের মাধ্যমে মুছার এক আত্মীয়ের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়। সাইফুলের সাথে বাবুলের মামুন নামে এক বন্ধুও ছিল। মূলত উন্নয়নকর্মী গায়েত্রী সিংয়ের সঙ্গে বাবুলের প্রেমের বিরোধ থেকেই স্ত্রী মিতুকে সরিয়ে দিতে এ কিলিং মিশনের পরিকল্পনা ও বাস্তাবায়ন করেন বাবুল আক্তার। 

গায়েত্রী জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক ইউএনএইচসিআর প্রতিষ্ঠানের বাংলাদেশে প্রতিরোধ শাখার একজন কর্মকর্তা হিসেবে কক্সবাজারে কর্মরত ছিলেন। ২০১৩ সালে তখন বাবুল আক্তার কক্সবাজার জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। বর্তমানে গায়েত্রী সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় কর্মরত। 

বর্তমানে মিতু হত্যা মামলায় বাবুল আক্তার ও সাইদুল ইসলাম সাকু মিতুর বাবার দায়ের করা মামলায় রিমান্ডে আছেন আর আগে থেকেই কারাগারে আছেন ওয়াসিম ও আনোয়ার। তবে এখনও পলাতক অস্ত্র সরবরাহকারী ভোলা, নেতৃত্বদাতা মুছা, কালু ও শাহজাহান। এদের গ্রেপ্তারে পিবিআই অভিযান চালাচ্ছে বলে জানা গেছে। 

১৬ সালের ৫ জুন সকালে চট্টগ্রামের জিইসি মোড়ের প্রকাশ্য সড়কে গুলিতে ও ছুরিকাঘাতে খুন হন মাহমুদা আক্তার মিতু। ওই দিন রাতে তার স্বামী তৎকালীন পুলিশ সদর দপ্তরে কর্মরত এসপি বাবুল আক্তার বাদি হয়ে পাঁচলাইশ থানায় একটি হত্যামামলা দায়ের করেন। অনেকবার আলোচিত এ মামলার চার্জশিট দেওয়ার গুঞ্জন শোনা গেলেও কোন অগ্রগতি ছিল না। বাবুল আক্তারের শ্বশুর মোশাররফ হোসেন ও শাশুড়ি সাহেদা মোশাররফ অব্যাহতভাবে হত্যাকাণ্ডের জন্য বাবুল আক্তারকে দায়ী করতে থাকেন। তবে পুলিশের তরফ থেকে কখনোই এ বিষয়ে স্পষ্টভাবে কিছু বলা হয়নি এতোদিন। গোয়েন্দা পুলিশ এরআগেও বাবুল আক্তারকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছিল। শুরু থেকে চট্টগ্রামের ডিবি পুলিশ মামলাটির তদন্ত করে। তারা প্রায় তিন বছর তদন্ত করেও অভিযোগপত্র দিতে ব্যর্থ হয়। পরে ২০২০ সালের জানুয়ারিতে আদালত মামলাটির তদন্তের ভার পিবিআইকে দেয়। 

গত মঙ্গলবার (১১ মে) দিনভর জিজ্ঞাসাবাদ শেষে এ হত্যা মামলায় সম্পৃক্ততা মেলায় বাবুল আক্তারকে হেফাজতে নিয়েছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। তবে আইনিভাবে বাদিকে গ্রেপ্তারের সুযোগ না থাকায় আদালতে তাকে হাজির করার পর তার পিতার মোশাররফ হোসেনের করা নতুন মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে পাঁচ দিনের রিমান্ডে নেয় পিবিআই। একই সাথে বাবুলের করা মামলাটির চূড়ান্ত প্রতিবেদন আদালতে জমা দেওয়া হয়। 

গত ১২ মে মিতুর বাবার করা মামলায় বাবুল আক্তার ছাড়াও মামলার অপর আসামিরা হলেন, কামরুল ইসলাম শিকদার ওরফে মুসা, এহতেসামুল হক ভোলা, মোতালেব মিয়া ওরফে ওয়াসিম, আনোয়ার হোসেন, খায়রুল ইসলাম, সাইফুল ইসলম সিকদার, শাহজাহান মিয়া। এদের মধ্যে ওয়াসিম ও আনোয়ার আগে থেকেই জেলে। সাকুকে ওই দিন রাতে র‌্যাব গ্রেপ্তার করে এবং বাবুল আগে থেকেই পিবিআইয়ের হেফাজতে ছিল। এদের মধ্যে মুছাকে ২০১৬ সালের ২২ জুন ডিবি পুলিশ পরিচয়ে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ থাকলেও পুলিশ তা অস্বীকার করেছে বারবার। অন্যদিকে শুরু থেকে কালু অধরা। এছাড়া ভোলা ও শাহাজাহান জামিনে মুক্তি পেয়ে পলাতক রয়েছেন। 

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়