Cvoice24.com

চট্টগ্রামের কোরবানিতে ঘাটতি মেটাবে পাবনা সিরাজগঞ্জের গরু

আসিফ পিনন

প্রকাশিত: ১৮:০৮, ১৫ জুন ২০২১
চট্টগ্রামের কোরবানিতে ঘাটতি মেটাবে পাবনা সিরাজগঞ্জের গরু

কোরবানির পশু নিয়ে জবরদোস্তি রশি টানাটানি চলেছিল গতবারের কোরবানি পশুর বাজারে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গেল বারে প্রায় ৮৫ হাজার কোরবানি পশু চট্টগ্রামের বাইরের জেলা থেকে আসার কথা ছিল। কিন্তু করোনার সংক্রমণের মধ্যে সেই গরু নিয়ে চট্টগ্রামে ঢোকার অনুমতি না পাওয়া কিংবা বিক্রি না হওয়ার শঙ্কায় চট্টগ্রামমুখী হয়নি বেপারিরা। এবারও কোরবানির যোগ্য পশুর ঘাটতি আছে চট্টগ্রামের কোরবানি বাজারে। তবে এবার নাটোর কুষ্টিয়া নয় কোরবানি পশুর ঘাটতি মেটাতে পাবনা ও সিরাজগঞ্জকে টার্গেটে রেখে প্রস্তুতি নিচ্ছে চট্টগ্রাম জেলা প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তর।

চট্টগ্রাম জেলা প্রাণী সম্পদ অধিপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, গতবার শেষের দিকে চট্টগ্রামের কোরবানি বাজারে যখন টানাপোড়েন শুরু হয়েছিল ঠিক সেই মুহূর্তে রাজশাহীর সিরাজগঞ্জ থেকে প্রায় ৩৫ হাজার গরু এনে পরিস্থিতি সামাল দিতে হয়েছিল।

চট্টগ্রাম জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ রেয়াজুল হক বলেন, ‘গতবার কোরবানিতে ৮৫ হাজার গরু চট্টগ্রামে আসার কথা ছিল। কিন্তু করোনা পরিস্থিতিতে সেই গরু বিক্রি হয় কি না কিংবা চট্টগ্রামে ঢোকার অনুমতি পাওয়া যায় কি না— বিভিন্ন বিষয় মাথায় রেখে ব্যবসায়ীরা আসেনি। ৮৫ হাজারের জায়াগায় মাত্র ১০ হাজার গরু এসেছিল। পরে ৩৫ হাজার গরু সিরাজগঞ্জ থেকে আনা হয়েছিল।’

প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, চট্টগ্রামে এবারের বাজারে সম্ভাব্য কোরবানি পশুর চাহিদা রয়েছে ৮ লাখ ৯ হাজার। যার বিপরীতে আনোয়ারা, সাতকানিয়া, ফটিকছড়িসহ বিভিন্ন উপজেলা মিলে চট্টগ্রাম জেলায় স্থানীয় উৎপাদন ৭ লাখ ৫৬ হাজার ৩৩৪টি। যার মধ্যে গবাদি পশু আছে ৫ লাখ ১০ হাজার ৪০টি, মহিষ আছে ৬৩ হাজার ১৩৬টি, ছাগল ও ভেড়া আছে ১ লাখ ৮৩ হাজার ৬৩টি ও অন্যান্য পশু আছে ৯৫টি।

প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, চট্টগ্রামের গত ৫ বছরে চট্টগ্রাম জেলার বছর ওয়ারী পশু জবাই ও উৎপাদনের সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। ২০১৫ সালে চট্টগ্রামের স্থানীয় উৎপাদন ছিল ৩ লাখ ২০ হাজার। যার বিপরীতে জবাই হয়েছে ৪ লাখ ৯২ হাজার ২৫০টি পশু। ২০১৬ সালে স্থানীয় উৎপাদন ছিল ৩ লাখ ৩৬ হাজার ১১৯টি। যার বিপরীতে জবাই হয়েছে ৫ লাখ ১৬ হাজার ৮৫২টি। ২০১৭ সালে স্থানীয় উৎপাদন ছিল ৩ লাখ ৫৬ হাজার ১৬৩টি। যার বিপরীতে জবাই হয়েছে ৫ লাখ ৯৫ হাজার ৮৩১টি। 

২০১৮ সালে স্থানীয় উৎপাদন ছিল ৫ লাখ ৮১ হাজার ৬৩৪টি। যার বিপরীতে জবাই হয়েছে ৬ লাখ ৫৫ হাজার। ২০১৯ সালে স্থানীয় উৎপাদন ৬ লাখ ১০ হাজার ২১৯টি। যার বিপরীতে জবাই হয়েছে ৭ লাখ ৩০ হাজার ৭৮৯টি। সবশেষ ২০২০ সালে স্থানীয় উৎপাদন হয়েছে ৬ লাখ ৮৯ হাজার ২২টি।

দেশের অন্যতম প্রধান কৃষি এলাকা নাটোর, নওগাঁ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ। প্রতিবছর এসব এলাকা থেকে উল্লেখযোগ্য সংখ্যায় কোরবানির পশু নিয়ে বেপরিরা চট্টগ্রামে আসে। খুলনার কুষ্টিয়া থেকেও চট্টগ্রামে আনা হয় কোরবানির পশু। প্রতিবছর স্থানীয় উৎপাদনে ঘাটতি থাকার কারণে অন্য জেলা থেকে আনা হয় কোরবানির পশু। তবে রাজশাহী খুলনার সীমান্তবর্তী এলাকায় করোনার ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট ছড়িয়ে পড়ায় কোরবানি পরিস্থিতিতে কেমন হবে— তা এখনই নিশ্চিতভাবে বলা যাচ্ছে না।

ডা. মোহাম্মদ রেয়াজুল হক সিভয়েসকে বলেন, ‘কোরবানির আরও কিছুদিন বাকি আছে। আমরা আশা করছি, কোরবানির আগ মুহূর্তে পরিস্থিতি ভালো হতে পারে। জীবন-জীবিকা দুটোই বাঁচাতে হবে।’ সিভয়েসের এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘চট্টগ্রামে ৫২ হাজারের মতো কোরবানির পশু ঘাটতি আছে। আমাদের নাটোর ও কুষ্টিয়ার গরু প্রয়োজন নেই। এবার সিরাজগঞ্জ থেকে গরু এলে ঘাটতি পুষিয়ে নেওয়া যাবে। তাছাড়া বেপারিরা বাঁচতে চায়। পাবনা থেকে তো ৩০-৪০ হাজার গরু এমনিতেই আসে। যেখান থেকেই আসুক, চট্টগ্রামে আসার সময় স্বাস্থ্যবিধি মানার ব্যাপারে জোর দেওয়া হবে।’

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়