Cvoice24.com

ব্যস্ত সময় পার করছেন চট্টগ্রামের কামার শিল্পীরা

সিভয়েস প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৭:৫৪, ২ জুলাই ২০২২
ব্যস্ত সময় পার করছেন চট্টগ্রামের কামার শিল্পীরা

লোহায় হাতুড়ি পেটার টুংটাং শব্দে মুখরিত কামার পাড়া। চলছে হাঁপরের বাতাসে কয়লায় লোহা পুড়িয়ে হাতুড়ি পিটিয়ে তৈরি করছেন দা, বটি, ছুরিসহ মাংস কাটার বিভিন্ন সরঞ্জাম। আর সাতদিন পরেই পবিত্র ঈদুল আজহা তাই ব্যস্ত সময় পার করছেন চট্টগ্রামের কামার শিল্পীরা। 

বছরজুড়ে অলস সময় পার করলেও কোরবানের মৌসুমে বেড়ে যায় তাদের ব্যস্ততা। চাপাতি, ছুরি, চাকু, দা ও বঁটি বানানোর টুংটাং শব্দে নিরবতার খোলস ভেঙ্গে সরব হয়ে উঠেছে কামারপাড়া। তবে কয়লা আর কাঁচামালের দাম বেড়ে যাওয়ায় লাভের পরিমাণ কমে গেছে বলে জানান কামার শিল্পীরা। 

শনিবার (২ জুন) নগরের পাহাড়তলী, ফিরিঙ্গী বাজার এলাকার বেশকিছু কামারশালা ঘুরে দেখা যায়, পশু কোরবানির দা, ছুরি, চাপাতিসহ প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম কিনতে এখন থেকেই কামারপাড়ায় ঢুঁ মারছেন সাধারণ মানুষ। কেউবা আসছেন ঘরে থাকা দা-বটি-ছুড়িতে শান দিতে। শান দেওয়া নতুন দা, বঁটি, ছুরি ও চাকু সাজিয়ে রাখা হয়েছে দোকানের সামনে। দোকানের জ্বলন্ত আগুনের তাপে কামারদের কপাল থেকে ঝরছে ঘাম। চোখে মুখে ক্লান্তির ছাপ। তবুও থেমে নেই তারা। সকাল পেরিয়ে রাত পর্যন্ত চলছে হাতুড়ি পেটার কাজ। 

কামারদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ঈদকে ঘিরে গরুর বাজার এখনো ভালোভাবে জমে ওঠেনি। তবে যারা নতুন সরঞ্জাম বানাবেন তাদের কাছ থেকে অর্ডার পাওয়া যাচ্ছে। যাদের ঘরে সরঞ্জাম মজুদ আছে তারাও শান দিতে কামারশালায় আসছেন। তবে অধিকাংশ মানুষ কোরবানের গরু কিনে অথবা ঈদের এক সপ্তাহ আগে দা, ছুরি, বটিতে ধার দিতে চান। তখন ব্যস্ততা আরো বাড়বে। কয়লা, লবণের দাম বেড়ে যাওয়ায় খরচও বেড়ে গেছে। ফলে লাভের পরিমাণটা অনেক কমে গেছে বলে জানান তারা।

বর্তমানে পশুর চামড়া ছাড়ানো ছুরি ১৫০ থেকে ৩শ টাকা, দা ২৫০ থেকে ৬শ টাকা, বটি ৩শ থেকে ৫শ টাকা, পশু জবাইয়ের ছুরি মান ও আকারভেদে ৩শ থেকে ১ হাজার টাকা, হাঁসুয়া ১৫০, মাংস কাটার ডাসা ২ হাজার টাকা, কাটারি ২৫০ থেকে ৩শ টাকা, কুড়াল ৮শ থেকে ১ হাজার টাকা ও চাপাতি ৫শ থেকে ১২শ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

পাহাড়তলী এলাকার কামার অনীল নাথ সিভয়েসকে বলেন, হারা বছর ধরিয়েরে আঁরার দোয়ানত বেচা-কিনা কম। ডেইলি ৪-৫শ টিয়্যার বেশি ইনকাম ন অয়। ঈদের আর বেশি দিন নাই। অন আঁরা অর্ডারের মাল বানাইতন লাইগ্যি। করোনার লাই গত তিন বছর ধরিয়েরে ব্যবসা ভালা ন অয়। আশা গরি এবার ভালা ব্যবসা অইবো। (সারাবছর ধরে আমাদের দোকানে বেচাকেনা কম। প্রতিদিন ৪ থেকে ৫শ টাকা আয় হতো। ঈদের আর বেশি দিন নেই। এখন আমরা অর্ডারের মাল বানাচ্ছি। করোনার জন্য গত তিন বছর ভাল ব্যবসা হয়নি। আশা করছি এবার ভাল ব্যবসা হবে।)

ফিরিঙ্গী বাজারের কামার মো. টুকু মিয়া বলেন, কোরবানকে ঘিরে সরঞ্জাম মেরামতের কাজ এখন কম। যাদের বাসায় সরঞ্জাম মজুদ আছে তারা এখনো তা মেরামতের জন্য আসা শুরু করেননি তবুও যারা নিয়ে আসছেন আমরা প্রতিটা ছুরিতে ধার দেয়ার জন্য মানভেদে ৫০ থেকে ১৫০ টাকা পর্যন্ত দাম নিচ্ছি। পাশাপাশি আমরা ভালো কাজের অর্ডার পাচ্ছি। তবে ছুরি, বটি আর দায়ের অর্ডার বেশি আসছে। অর্ডার আসলেও লবণ আর কয়লার দাম বেড়ে গেছে। বিশেষ করে বস্তা প্রতি লবণের দাম বস্তায় ৬শ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। তাই আমাদের লাভের পরিমাণটা তুলনামূলক কমে গেছে।

 

কামার অনীল নাথের দোকানে কথা হয় ক্রেতা মো. রাসেল মিয়ার সাথে। তিনি সিভয়েসকে বলেন, ঈদ যতোই ঘনিয়ে আসছে, কামাররা তাদের মজুরি ও সরঞ্জামের দামও বাড়িয়ে দিয়েছে। আমি একটি ছুরি ২২০ টাকা দিয়ে কিনেছি যা চার পাঁচ মাস আগেও ১৫০ টাকা ছিল। পুরনো যন্ত্রপাতি মেরামত করতেও বেশি দাম নিচ্ছেন কামাররা।

বছর বছর ফিরে আসে পবিত্র ইদুল আজহা। গত তিন বছর করোনার কারণে ব্যবসায় ভাটা ছিল কামারদের। চলতি বছর করোনার প্রাদুর্ভাব থাকলেও নেই লকডাউন কিংবা কঠোর বিধি-নিষেধ। তাই এ বছরের স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে ঈদের আগের এক সপ্তাহকে টার্গেট করেছেন তারা। এসময়ে অতীতের সব লোকসান কাটিয়ে ওঠার অপেক্ষায় আছেন চট্টগ্রামের এই কামার শিল্পীরা।

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়