Cvoice24.com

চট্টগ্রামে এখনো জমে উঠেনি কোরবানির পশুর হাট

সিভয়েস প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২০:১৯, ২ জুলাই ২০২২
চট্টগ্রামে এখনো জমে উঠেনি কোরবানির পশুর হাট

আর মাত্র সাত দিন পরই ঈদুল আজহা। অন্যান্য বছর চাঁদ দেখার পর কোরবানির পশুর হাট জমজমাট হয়ে উঠলেও এবছর এখনও ফাঁকা। চাহিদা অনুযায়ী পশু না উঠায় সরগরম হয়ে উঠেনি বাজার।

শনিবার (২ জুলাই) চট্টগ্রাম নগরের বিভিন্ন পশুর বাজার ঘুরে এই চিত্র দেখা গেছে। তবে আগামী সোম-মঙ্গলবারের মধ্যে পশুর হাটগুলো গরু-ছাগলে ভরে উঠবে বলে প্রত্যাশা করছেন ইজারাদাররা।

বিকেলে নগরের বিবির হাট গরু বাজারে দেখা গেছে, অধিকাংশ লেইনে গরু-ছাগল শূন্য। অনেক লেইনে এখনো পোঁতা হচ্ছে বাঁশ। কোথাও কোথাও টাঙানো হচ্ছে ত্রিপল। অন্যদিকে কিছু লেইনে অনেক ব‌্যবসায়ী গরু-ছাগল নিয়ে বসে আছেন। এ পর্যন্ত ৬০ হাজার টাকা থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ সাড়ে ৪ লাখ টাকা পর্যন্ত গরু উঠেছে বিবিরহাটে।

বিক্রেতারা বলছেন, ক্রেতার উপস্থিতি খুবই কম। এছাড়া যে কয়েকজন ক্রেতা আসছেন তারাও কাঙ্ক্ষিত দাম বলছেন না। তাই বিক্রিও তেমন হচ্ছে না। 

দিনাজপুর থেকে গরু নিয়ে আসা মোহাম্মদ ইমন বলেন, ‘হাট এখনও পুরোপুরি জমে ওঠেনি। গতকাল রাতে আমি ২২টি গরু নিয়ে এখানে এসেছি। সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত মাত্র ১টি গরু বিক্রি করতে পেরেছি।’ 

তিনি বলেন, ‘৭৮ হাজার টাকা দিয়ে লাল রঙের একটি গরিু বিক্রি করেছি। যদিও সেটার দাম ৯০ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছিল। ওই ক্রেতা অনেকবার আসছে এ গরু নেওয়ার জন্য; তাই আর দাম ধরে না রেখে ছেড়ে দিয়েছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘প্রতিটি গরুর দাম ৮০ হাজার থেকে ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত। তবে এত দাম দিয়ে গরু কেনার মতো ক্রেতা এখনও হাটে আসেনি।’

কুষ্টিয়া থেকে এক ট্রাক গরু নিয়ে বিবিরহাটে আসা বেপারি ফরিদুল আলম বলেন, ‘গত বছর ৫০ হাজার টাকায় যে গরু বিক্রি করেছি, সেই সাইজের গরু এবার ৮০ হাজার টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে। কেননা, গো-খাদ্যের দাম অনেক বেশি বেড়েছে। সারামাস গরুকে বাড়তি দামেই খাদ্য কিনে খাওয়াতে হয়েছে। সেই হিসেবে যদি বিক্রিত দাম না পাই তাহলে পুরোটাই লোকসান হবে।’

এদিকে চট্টগ্রামের ছেলে মো. পারভেজ বিভিন্ন জায়গা থেকে এনে ১৫টি দেশি মোটাতাজা গরু তুলেছেন বিবিরহাট বাজারে। প্রত্যেকটি আড়াই লাখ থেকে ৪ লাখ টাকা পর্যন্ত গরুর দাম হাঁকিয়েছেন তিনি। 

মো. পারভেজ সিভয়েসকে বলেন, কুষ্টিয়া, সিরাজগঞ্জ ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে মোট ১৫টি গরু নিয়ে বাজারে এসেছি। আজ বিকেলে একটি গরু বিক্রি করেছি। যেটির দাম ছিল ৪ লাখ টাকা। বাকি ১৪টি গরুর মধ্যে সবচেয়ে বড় গরুটির দাম ৩ লাখ ৮০ হাজার টাকা। সেটি কেউ সাড়ে ৩ লাখ টাকা মূল্য হাঁকালে বিক্রি করে দিব। তবে বাজারে যেমনি ক্রেতার আনাগোনা কম তেমনি বড় গরু কিনতে মানুষের চাহিদাও কম বলে জানান তিনি।

বিবিরহাট বাজারের ইজারাদার মোহাম্মদ মহসিন বলেন, দ্বিতীয় দিনের মতো আজ (শনিবার) কোরবানির পশু বেচাকেনা শুরু হয়েছে। তবে ক্রেতা অনেক কম থাকায় এখনও বেচাকেনা জমে উঠেনি। এছাড়া প্রয়োজনের তুলনায় এখন পর্যন্ত বাজারে পশু পর্যাপ্ত নয়। তবে আগামী সোম-মঙ্গলবারের মধ্যে বেপারিরা পুরোদমে গরু নিয়ে বাজার জমজমাট করে তুলবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, বাজারে বিভিন্ন এলাকা থেকে বেপারিরা এসেছেন। আমরা তাদেরকে সর্বোচ্চ সুযোগ-সুবিধা আর নিরাপত্তা দেয়ার চেষ্টা করছি। পাশাপাশি প্রশাসনও আমাদেরকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করছে।

এদিকে, গত শুক্রবার থেকে চট্টগ্রামের সাগরিকা গরুর বাজার শুরু হলেও নেই দামাদামির হাঁকডাক ও ক্রেতার ভিড়। বেপারিরা মাঝারি আকারের গরুর দাম হাঁকাচ্ছেন ১ লাখ ২০ হাজার ও ছোট গরু ৭০ থেকে ৮০ হাজার। এছাড়া বাজারে এবার দেশি গরুর তুলানায় ইন্ডিয়ান গরুর দেখা মিলেছে চোখে পরার মতো। ২শ’টি ইন্ডিয়ান গরু নিয়ে মণ প্রতি ৩০ হাজার করে দাম হাঁকাচ্ছেন বকুল বেপারি। গাড়ির তেলের দাম বৃদ্ধি থাকার কারণে বর্ডার থেকে কোরবানি পশু আনতে রীতিমতো বেকায়দায় পড়তে হয়েছে তাকে।

বকুল বেপারি বলেন, গত বছরের তুলনায় এ বছর ৬০ শতাংশ গরু ব্যবসায়ী বাজারে আসেনি। আশা রাখছি, এবার যারা কোরবানি পশু এনেছে তারা লাভের মুখ দেখবে। যদি বাজারে গরু আসার পরিমাণ ঈদের দুইদিন আগে থেকে বেড়ে যায় তাহলে দাম কমে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। 

সাগরিকা গরুর বাজারে গরু নিয়ে আসা আরেক বেপারি সিরাজ মিয়া সিভয়েসকে বলেন, ঋণ নিয়ে পশুপালন করার কারণে অন্য বছরের তুলনায় এ বছর গরুর দাম বেশি রাখতে হচ্ছে। গেল দুই বছর করোনার কারণে লাভের মুখ দেখা যায়নি। এছাড়া হাটে গরু আনা থেকে শুরু করে বিক্রির শেষ দিন পর্যন্ত নিয়মিত ৯ থেকে ১১ জন রাখালের খরচ চালাতে হবে। তাদের জনপ্রতি প্রতিদিন ৬শ’-৭শ’ টাকা দিতে হবে। গরুর পর্যাপ্ত দাম পেলে কোনো রকম পোষাতে পারবো। আর যদি অল্প দামে গরু ছেড়ে দিতে হয়, তাহলে হয়তো দৈনিক খরচের টাকাও উঠবে না।

বগুরা থেকে ৩০টি গরু এনে ক্রেতার অপেক্ষা করছে রফিফুল মিয়া। তিনি বলেন, করোনার কারণে গত দুই বছর কোরবানির সময় লাভের মুখ দেখিনি। ঈদের দু’দিন আগে লোকসান দিয়ে ১৬টি গরু বিক্রি করে দিয়েছিলাম। গতবার ৫৬ টা গরু আনলেও এই বছর গরু কম এনেছি। অন্যান্য সময় বাজারে গরু দেখার জন্য জমায়েত হতো সাধারণ মানুষেরা। এ বছর তেমন ক্রেতার আনাগোনা দেখছি না।

এদিকে নগরের বৃহত্তম ও স্থায়ী সাগরিকা গরুর বাজারে পশুর ধারণক্ষমতা ৭০ থেকে ৮০ হাজার হলেও এখনো বাজারে ঢুকেছে মাত্র ১২ হাজার কোরবানি পশু।

সাগরিকা গরু বাজারের ইজারাদার আলী আকবর খান সিভয়েসকে বলেন, কোরবানি পশুর হাট গতকাল (শুক্রবার) থেকে শুরু হয়ছে। কাল থেকে ৪শ’ ট্রাকে করে কোরবানি পশু বাজারে নেমেছে। যেখানে বড় গরু আছে ৩ হাজার ৬শ’টি, মাঝারি আকারের গরু ২ হাজার ৪শ’টি। আর কিছুদিনের মধ্যে আরও গরু আসবে। বিক্রি এখন আপাতত কিছু কম থাকলেও ঈদের চারদিন আগে বাড়বে বলেও আশা রাখছেন তারা।

এবার অস্থায়ীভাবে হাট বসছে সল্ট গোলা রেলক্রসিং-সংলগ্ন হাট, নগরের কর্ণফুলী গরুবাজার (নূর নগর হাউজিং এস্টেট), ও দক্ষিণ পতেঙ্গার বাটারফ্লাই পার্কের দক্ষিণে টি কে গ্রুপের খালি মাঠে।

-সিভয়েস/এমএম/এএস/ডিসি

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়