Cvoice24.com


প্লাস্টিকের বোতল ব্যবহার কতটুকু যুক্তিযুক্ত?

প্রকাশিত: ১২:০০, ১৫ জানুয়ারি ২০১৯
প্লাস্টিকের বোতল ব্যবহার কতটুকু যুক্তিযুক্ত?

যে কোনো সময়ের তুলনায় বর্তমানে প্লাস্টিকের বোতলের ব্যবহার বেড়েছে কয়েক গুণ। স্কুলের ব্যাগে পানি নেয়া, বাসা বাড়িতে পানি খাওয়ার জন্যে, মেস বা হোস্টেলে পানি জমা রাখা, দোকানে পানি রাখার জন্যে ইত্যাদি কাজে প্লাস্টিকের বোতলের ব্যবহার চলছে।

নগরীর বিভিন্ন ব্যস্ততম এলাকার নাস্তার দোকান ও হোটেল গুলোতে ঘুরে দেখা যায় প্রায়ই নাস্তার দোকান ও হোটেলে পানি খাওয়ার জন্যে প্লাস্টিকের বোতল ব্যবহার হচ্ছে।

চকবাজার এলাকার বিসমিল্লাহ রেস্তোরার ম্যানেজারের কাছে এর ব্যবহার বিধি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এই বোতল নস্ট হয়ে যাওয়ার পূর্ববর্তী সময় পর্যন্ত তারা ব্যবহার করে থাকেন। কিন্তু কোন সতর্কতা বা পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে তিনি জানেন না।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আরিফ হোসেনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, দোকানিরা মগ কিংবা জারের পরিবর্তে বোতল ব্যবহার করছে এতে তারা নিরুপায় হয়ে সে বোতলের পানি গ্রহণ করছে।

তিনি আরো বলেন, আমাদের গুটি কয়েক মানুষের মাঝে সচেতনতা থাকলেও প্রতিটা মানুষকে এই বিষয়ে সচেতন করা অত্যন্ত জরুরি। না হলে জনজীবন হুমকির মুখে পড়ে যাবে।

ষোলশহ আবাসিক এলাকায় মেসে থাকেন ফরিদুল আলম। তার সাথে এ বিষয়ে কথা হলে তিনি জানান, মগ বা অন্যকিছু ব্যবহার করার চাইতে বোতল ব্যবহার আমাদের জন্য সাশ্রয়ী।কারণ এতে বাড়িত খরচ হয় না। তাই আমরা ব্যবহার করি।

স্বাস্থ্যঝুকি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, দীর্ঘমেয়াদী চিন্তা করলে এটা ব্যবহার বিপজ্জনক।

স্কুল ছাত্রী- নাদিয়া সুলতানা এমির কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সাধারণত আম্মু বোতলে করে পানি দেয় আমরা পানি খাই কিন্তু কখনো কোনো সমস্যা না হওয়াতে চিন্তা করে দেখিনি। তবে এ বিষয়ে সতর্ক করা হলে কিংবা অবশ্যেই আমরা তা পরিহার করব।।

প্লাস্টিক সামগ্রী ব্যবহার করা কতটা স্বাস্থ্যসম্মত বা শরীরের জন্য নিরাপদ? এমন প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গেলে ব্যবহৃত প্লাস্টিকের মানের বিষয়টি প্রথমে এসে যায়। কোন ধরনের প্লাস্টিক স্বাস্থ্যসম্মত?

প্লাস্টিকের বোতল বা পাত্রের তলায় প্লাস্টিকের তৈরি জিনিস ব্যবহারের সতর্কবার্তা আছে। সেখানে আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের ভিত্তিতে তিনকোনা রিসাইক্লিং চিহ্নের মধ্যেই দেওয়া আছে সতর্ক নম্বর। কোন বোতল বা পাত্র কতবার ব্যবহার করা যাবে, ব্যবহার করা কতটা নিরাপদ হবে এই নম্বরই তার আভাস দিচ্ছে।

যুক্তরাষ্ট্রের মাননিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠান এএসটিএম ইন্টারন্যাশনাল প্রথম এই কোড প্রচলন করে। কানাডিয়ান স্ট্যান্ডার্ড অ্যাসোসিয়েশনসহ সারা বিশ্বে তা এখন প্রচলিত। আমাদের দেশের প্লাস্টিকে সামগ্রীর বেলায়ও তা দেখা যায়।

এসব নম্বর ১ থেকে ৭ পর্যন্ত হয়ে থাকে। পাশে থাকে সাংকেতিক কোড। এর মধ্যে ২, ৪ ও ৫ এই তিনটি নম্বরযুক্ত প্লাস্টিক ব্যবহার করা সবচেয়ে নিরাপদ। ১ ও ৭ নম্বরযুক্ত প্লাস্টিকে স্বাস্থ্যঝুঁকি তুলনামূলকভাবে কম। আবার ৩ ও ৬ নম্বরযুক্ত প্লাস্টিক স্বাস্থ্যের জন্য খুব ঝুঁকিপূর্ণ।

সতর্কতা নম্বর ১: এএসটিএম ইন্টারন্যাশনালের মতে, এই শ্রেণির প্লাস্টিককে পলিথিলিন প্যারেসথালেট বলে। এর সাংকেতিক কোড পিইটি বা পিইটিই নামে পরিচিত। এ ধরনের প্লাস্টিক প্রসাধনসামগ্রীর বাক্স, বাসায় ব্যবহারযোগ্য জিনিস, পানি বা জুসের বোতল তৈরির জন্য ব্যবহার করা হয়। কোমল পানীয় ও তেল রাখার জন্যও এ জাতীয় প্লাস্টিক ব্যবহার করা হয়। এ ধরনের প্লাস্টিকের বোতল বা পাত্র অনেক দিন ব্যবহার করা ঠিক নয়। দীর্ঘ সময় গরম স্থানে রাখলে তা থেকে স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর পদার্থ নির্গত করে। এ জন্য এই নম্বরযুক্ত প্লাস্টিক একাধিকবার ব্যবহার করা ক্ষতিকর।

সতর্কতা নম্বর ২: এ ধরনের প্লাস্টিক উচ্চ ঘনত্বের পলিথিলিন; যা সংক্ষেপে এইচডিপিই নামে পরিচিত। এই প্লাস্টিক শক্ত ও স্বচ্ছ; যা কিছুটা উচ্চ তাপমাত্রায় রাখা যেতে পারে। এ নম্বরযুক্ত প্লাস্টিকের সামগ্রী সবচেয়ে নিরাপদ। এ ধরনের প্লাস্টিক সাধারণত বাচ্চাদের খেলনা ও খাবার প্যাকেজিংয়ে ব্যবহার করা হয়। বাজারে দুধ রাখার যে পাত্রগুলো পাওয়া যায়, তা-ও এই প্লাস্টিক থেকে তৈরি। এই নম্বরযুক্ত প্লাস্টিকের জিনিস একাধিকবার ব্যবহার করা যায়।

সতর্কতা নম্বর ৩: এটাকে পলিভিনাইল ক্লোরাইড প্লাস্টিক বলে; যা সংক্ষেপে পিভিসি নামে পরিচিত। নিত্য ব্যবহারের জন্য এই নম্বরযুক্ত প্লাস্টিক বোতল বা পাত্র অত্যন্ত বিপজ্জনক। সাধারণত, এ ধরনের প্লাস্টিক থেকে গোসলখানার পর্দা, পুলে ব্যবহারের জন্য নিরাপত্তাসামগ্রী, বিভিন্ন ইনফ্লাটেবল জিনিস ও পোশাক তৈরির জন্য ব্যবহার করা হয়।

এই নম্বরযুক্ত প্লাস্টিক ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকা উচিত। সে ক্ষেত্রে অরগানিক হিসেবে তৈরি গোসলখানার পর্দা ব্যবহার করতে পারেন।

সতর্কতা নম্বর ৪: এ ধরনের প্লাস্টিক কম ঘনত্বের পলিথিলিন, যা সংক্ষেপে এলডিপিই নামে পরিচিত। এ ধরনের প্লাস্টিক স্বচ্ছ ও বাঁকানো যায়। এটি জুস ও দুধের পাত্রে ব্যবহার করা হয়। বেশির ভাগ বাজারের ব্যাগ এই প্লাস্টিক থেকে তৈরি। এই নম্বরযুক্ত প্লাস্টিক নিরাপদ।

সতর্কতা নম্বর ৫: এই শ্রেণির প্লাস্টিককে পলিপ্রোপাইলিন বলে; যা সংক্ষেপে পিপি নামে পরিচিত। বাচ্চাদের বোতল, কাপ ইত্যাদি এই প্লাস্টিক থেকে তৈরি হয়ে থাকে। রান্নাঘরে জিনিস ও মাইক্রোওয়েভে এই নম্বরযুক্ত প্লাস্টিক ব্যবহার করা হয়। তবে, এই নম্বরযুক্ত প্লাস্টিকের জিনিস একাধিকবার ব্যবহার করা যায়।

রান্নাঘরে গরম পাত্র রাখার জন্য কাচের জিনিস উত্তম। আর মাইক্রোওয়েভ কিনলে অভ্যন্তরে কাচের গাত্র দেখে কেনা ভালো।

সতর্কতা নম্বর ৬: এটাকে পলিস্টাইরিন প্লাস্টিক বলে, সংক্ষেপে যা পিএস নামে পরিচিত। এটি পেট্রোলিয়াম থেকে তৈরি। এই শক্ত বা নরম উভয় ধরনের হয়ে থাকে। এই নম্বরযুক্ত প্লাস্টিক খুব ক্ষতিকর। সিডি, ডিভিডি বা ডিম বহনের কার্টুন তৈরিতে এই প্লাস্টিক ব্যবহার করা হয়ে থাকে। আমরা হোটেল থেকে ফোমের যে পাত্রে খাবার এনে থাকি, তা-ও এ ধরনের প্লাস্টিক থেকে তৈরি হয়। এই নম্বরযুক্ত প্লাস্টিকের জিনিস অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ।

সতর্কতা নম্বর ৭: এই প্লাস্টিককে পলিকার্বোনেট বলে; যার সাংকেতিক কোড পিসি। এটি মোটামুটি নিরাপদ। বৈদ্যুতিক তার, সিডি ও ডিভিডি এখান থেকে তৈরি হয়। এই নম্বরযুক্ত প্লাস্টিকের জিনিস একাধিকবার ব্যবহার করা যায়। বাচ্চাদের বোতল ও অন্যান্য পানির বোতল এ ধরনের প্লাস্টিক থেকে তৈরি করা হয়ে থাকে।

-সিভয়েস/আরএইচ/এমএইচ

সিভয়েস ডেস্ক

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়