Cvoice24.com


নিত্যপণ্যের দাম নিয়ে নয়ছয়, নেই নজরদারি

প্রকাশিত: ১২:৪০, ২৬ আগস্ট ২০২০
নিত্যপণ্যের দাম নিয়ে নয়ছয়, নেই নজরদারি

নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মধ্যে চাল, সয়াবিন তেল, ছোট দানার মসুর ডাল, মুগ ডাল, অ্যাংকর ডাল ও জিরার দাম বেড়েছে। সরকারি প্রতিষ্ঠান ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। খুচরা ব্যবসায়ীদের মতে সরবরাহ কম থাকায় নিত্য পণ্যের দাম বেড়েছে। তবে চাল ছাড়া অন্যান্য পণ্যের মজুদ ও দাম ঠিকঠাক আছে বলে জানিয়েছেন পাইকারি ব্যবসায়ীরা। বাজারের এ অবস্থাকে প্রশাসনের নজরদারির অভাব বলে মনে করছে কনজ্যুমার এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ।

নগরীর কর্নেলহাট, অলংকার, পাহাড়তলী, কর্ণফুলী (চৌমুহনী) ও কাজির দেউড়ি বাজার ঘুরে জানা যায়, টিসিবি'র তথ্যানুযায়ী চালের দাম সবচেয়ে বেশি বেড়েছে। নাজির, মিনিকেট, পাইজাম, লতা, স্বর্ণ সব ধরনের চালের দাম গত এক সপ্তাহে বেড়েছে। এর মধ্যে নাজির ও মিনিকেট চালের দাম ৫ দশমিক ৩৬ শতাংশ বেড়ে কেজি ৫৪ থেকে ৬৪ টাকা বিক্রি হচ্ছে। মাঝারি মানের পাইজাম ও লতা চালের দাম সপ্তাহের ব্যবধানে বেড়েছে ৯ দশমিক ৫৭ শতাংশ। বর্তমানে এই চালের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪৮ থেকে ৫৫ টাকা। মোটা চাল (সিদ্ধ) স্বর্ণার কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪৪ থেকে ৪৮ টাকায়। এতে সপ্তাহের ব্যবধানে দাম বেড়েছে ৮ দশমিক ২৪ শতাংশ।


এ বিষয়ে চাক্তাই চাল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ওমর আজম সিভয়েসকে বলেন, ‌‌‌চালের দাম এ বছরের শুরু থেকেই বাড়তি। সরকার শুল্ক কমিয়ে চাল আমদানি না করা পর্যন্ত চালের দাম কমার সম্ভাবনা দেখছি না। সরকার যদিও বলছে, চালের মজুদ আছে। ব্যবসায়ীরা এ তথ্যটি ভুল মনে করছে। যদি সত্যি হতো, তাহলে এতো বাড়তি দামে মানুষ চাল কেনার পরেও সরকার কেন মজুদ করা চাল বাজারে ছাড়ছে না। আবার আরেকটা কারণ হতে পারে, সেটি হলো- কৃষকরা হয়তো বেশি দাম পাওয়ার আশায় ধান আটকে রেখেছে। তাই চালের দাম কমাতে হলে সরকারকে দাম বাড়ার কারণ বের করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।'


অন্যদিকে সয়াবিন তেল, ছোট দানার মসুর ডাল, মুগ ডাল, অ্যাংকর ও জিরার দামও খুচরা বাজারে গত সপ্তাহের তুলনায় বাড়তি দেখা যায়। অলংকার বাজারে ছোট দানার মসুর ডালের কেজি প্রতি ১০০ থেকে ১১৫ টাকায়, মুগ ডাল কেজি প্রতি ১১০ থেকে ১২০ টাকা, বোতলের ৫ লিটার সয়াবিন তেল ৪৫০ থেকে ৫১০ টাকায়, অ্যাংকর ডাল কেজি প্রতি ৪০ থেকে ৪৫ টাকায় এবং জিরা কেজি প্রতি ৩০০ থেকে ৪৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দাম বাড়ার কারণ হিসেবে দোকানিরা সরবরাহ কম থাকার কথা জানাচ্ছেন।


বাজারে দাম বাড়তি থাকার কারণ জানতে চাইলে চট্টগ্রামের চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ আড়তদার ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির নেতা সোলাইমান বাদশা বলেন, 'বর্তমানে সব পণ্যের মজুদ ঠিকঠাক আছে। দাম বাড়ার কোনো কারণ নাই। এটি ঠিক সরবরাহ কম থাকলে পণ্যের দাম বেড়ে যায়। তাই উত্তরের বন্যার অজুহাতে কিছু কিছু খুচরা ব্যবসায়ী সরবরাহ কম বলে নিত্যপণ্যের দাম বাড়াচ্ছে। তবে এটি ঠিক নয়। বর্তমানে পাইকারি বাজারে সব পণ্যের দাম স্বাভাবিক আছে।'

কয়েক মাস ধরে চড়া দামে বিক্রি হওয়া আলুর দামও গত সপ্তাহে কিছুটা কমেছে। কমেও চড়া দামেই বিক্রি হচ্ছে আলু। দেখা যায়, গত এক সপ্তাহের তুলনায় সামান্য কমে আলু কেজি প্রতি বিক্রি হচ্ছে ৩৫ টাকায়। আর আমদানি করা রসুনের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৮০ টাকা। বলা যায়, পাইকারি বাজারে সকল ধরনের পণ্যের পর্যাপ্ত মজুদ ও ঠিকঠাক দাম থাকলেও খুচরা বাজারে বাড়তি দামে কিনতে হচ্ছে ভোক্তাদের।

এ প্রসঙ্গে কনজ্যুমার এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'মূল সমস্যা হলো প্রশাসনের। প্রশাসন বাজার মনিটরিংয়ের দিকে নজর না দেয়ার কারণে সব পণ্যের দাম বাড়তি রাখার সুযোগ পাচ্ছে ব্যবসায়ীরা।‌ প্রশাসন যদি বাজার মনিটরিংয়ে মনোযোগ দিতো, তাহলে নিত্যপণ্যের দাম এভাবে বাড়তো না। পাশাপাশি তাদের কাছেও কোন পণ্যের দাম কত বেড়েছে ও কেন বেড়েছে তা জানা থাকতো।'

চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইলিয়াস হোসেন বাজার মনিটরিংয়ে নজরদারি অব্যাহত থাকার কথা জানিয়ে বলেন, 'জেলা প্রশাসন থেকে নিয়মিত বাজার মনিটরিং করা হচ্ছে। বিশেষ করে দেশের অন্যতম পাইকারি বাজার চাক্তাই খাতুনগঞ্জের বিগত সময়ে পণ্য কারসাজিতে জড়িতদের কড়া নজরদারিতে রাখা হয়েছে। তবে উত্তরের বন্যার কারণে সবজি বাজারসহ নিত্যপণ্যের বাজারের পণ্যের দাম কিছুটা বাড়তি। এটি আশা করি অল্প সময়ের মধ্যে পণ্যের দাম কমিয়ে আনার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।'

শুভ্রজিৎ বড়ুয়া

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়