Cvoice24.com

দক্ষিণ চট্টগ্রামে ​অল্প খরচে মিলবে কিডনি ডায়ালাইসিস

চন্দনাইশ ​প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ২১:৩১, ২৪ এপ্রিল ২০২১
দক্ষিণ চট্টগ্রামে ​অল্প খরচে মিলবে কিডনি ডায়ালাইসিস

চন্দনাইশ বিজিসি ট্রাস্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ডায়ালাইসিস বিভাগে চলছে চিকিৎসা কার্যক্রম

কিডনি বিকল হলে রক্ত থেকে বিষাক্ত পদার্থ বের করে সচল করার একমাত্র উপায় হলো ডায়ালাইসিস। বর্তমানে বাংলাদেশে এই চিকিৎসা বেশ ব্যয়বহুল। করোনার এই দুঃসময়ে চট্টগ্রাম দক্ষিণাঞ্চলের কিডনি রোগীদের জন্য সু-খবর দিয়েছে চন্দনাইশ উপজেলার বিজিসি ট্রাস্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল।

দীর্ঘ প্রতিক্ষার পরে চট্টগ্রাম দক্ষিণাঞ্চলের চন্দনাইশ উপজেলার সর্বোবৃহৎ এই হাসপাতালটিতে কিডনি রোগীদের জন্য চালু করা হয়েছে নেফ্রোলজি বা কিডনি ডায়ালাইসিস বিভাগ। প্রাথমিক পর্যায়ে নেফ্রোলজি (কিডনি) বিভাগে ২টি ডায়ালাইসিস মেশিন নিয়ে এই বিভাগটি চালু করা হয়।

শনিবার (২৪ এপ্রিল) দুপুরে হাসপাতালের ২য় তলায় স্পেশাল কেয়ার কিডনি রোগে আক্রান্ত উপজেলার দোহাজারী এলাকায় রাজিয়া বেগম (৬৮) ও হাশিমপুর এলাকায় দিলুয়ারা বেগম (৩০) নামের দুই রোগীর পরীক্ষামূলকভাবে কিডনি ডায়ালাইসিস করা হয়েছে, এতে সফলও হয়েছে। এর মধ্যে দিয়ে কিডনি রোগীদের আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থায় বিজিসি ট্রাস্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এক ধাপ এগিয়ে গেছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। 

গত ২১ এপ্রিল (বুধবার) ডায়ালাইসিস ইউনিটের উদ্বোধন করেন হসপিটালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আফরীন আহমদ হাসনাইন। এসময় মেডিকেল কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ডা. অরূপ দত্ত বাপ্পী, হসপিটালের পরিচালক ক্যাপ্টেন ডা. খায়েরউদ্দিন বরকত (অব.), কিডনি বিশেষজ্ঞ ডা. রতন কান্তি সাহা, ডা. মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন, ডা. সাইফুল ইসলাম, ডা. অর্পন দেবনাথ, ডা. নাসিমুজ্জামান, আজিজুল হক ভূঁইয়া, মো. এরশাদ হোসেনসহ বিভিন্ন বিভাগের চিকিৎসক, কর্মকর্তা, কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন। 

কিডনি ডায়ালাইসিস বিভাগের কিডনি বিশেষজ্ঞ ডা. রতন কান্তি সাহা বলেন, ‘করোনার কারণে আপাতত সংক্ষিপ্ত পরিসরে ডায়ালাইসিসের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। প্রাথমিকভাবে ২টি ডায়ালাইসিস মেশিন স্থাপন করা হযেছে। পর্যায়ক্রমে এই ইউনিটে আরও ডায়ালাইসিস মেশিন স্থাপন করা হবে।’ বিজিসি ট্রাস্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কিডনি প্রতিস্থাপন ছাড়াও কিডনির অন্যান্য সব রোগের চিকিৎসার ব্যবস্থা রয়েছে বলে জানান তিনি।

এদিকে ডায়ালাইসিস বিভাগ উদ্বোধন পরবর্তী প্রথম সেবা গ্রহণ করেছেন উপজেলার দোহাজারী বাসিন্দা রাজিয়া বেগম। তিনি বলেন, ‘আমি দীর্ঘ দিন কিডনি সমস্যায় ভুগছি। এ কারণে গত ১০ মাস ধরে ডায়ালাইসিস করতে হচ্ছে। প্রাইভেট ক্লিনিক বা হাসপাতালে ডায়ালাইসিস করতে প্রতি ছয় মাসের প্যাকেজে আমার আড়াই লাখ টাকা খরচ হয়েছে। কিন্তু বিজিসি ট্রাস্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অল্প টাকায় পাচ্ছি।’

হসপিটালের পরিচালক ক্যাপ্টেন ডা. খায়ের উদ্দিন বরকত (অব.) বলেন, ‘কিডনি ডায়ালাইসিস প্রাইভেটভাবে করাতে গেলে সেটা ব্যয়বহুল। তবে বিজিসি ট্রাস্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেফ্রোলজি বিভাগে মাত্র অল্প ব্যয়ে ডায়ালাইসিস করা যাবে। দক্ষিণ চট্টগ্রাম থেকে বিভিন্ন হাসপাতালে প্রতিদিন প্রায় শ’খানেক রোগী ডায়ালাইসিস করতে যায়। ডায়ালাইসিস সেবার কার্যক্রম চালু হওয়ায় দক্ষিণ চট্টগ্রামের মানুষ চিকিৎসাসেবার ক্ষেত্রে এক ধাপ এগিয়ে গেল। কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত রোগীরা এখন থেকে উপকৃত হবে।’

‘এখন থেকে চন্দনাইশেই সম্ভাবনা নিয়ে শুরু হয়েছে কিডনি ডায়ালাইসিস, দক্ষিণ চট্টগ্রামের যা ছিল সোনার হরিণ। কম খরচে এখন চন্দনাইশ বিজিসি ট্রাস্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সম্ভব হবে কিডনি ডায়ালাইসিস।’— বলে হসপিটাল পরিচালক।

তিনি আরও বলেন, ‘প্রতিষ্ঠার দীর্ঘ বছরেও কিডনি রোগীদের ডায়ালাইসিস করার সুযোগ ছিল না। দক্ষিণাঞ্চলের মানুষদের কিডনি ডায়ালাইসিসের জন্য ছুঁটতে হতো চট্টগ্রাম-ঢাকা কিংবা অন্য কোনো বেসরকারি ক্লিনিকে। লাখ লাখ টাকা খরচ করে কিডনি ডায়ালাইসিস করতে হতো। বতর্মানে অল্প খরচে বিজিসি ট্রাস্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এই সেবা পাওয়া যাবে।’

তিনি আরও বলেন, দেশের সকল হাসপাতালেই চিকিৎসা ব্যবস্থায় আধুনিকতার ছোয়া লেগেছে। কিন্তু দক্ষিণাঞ্চলবাসি পিছিয়ে ছিলো। আমাদের বৃহত্তর এই হাসপাতালে নেফ্রোলজি বিভাগ না থাকায় এই অঞ্চলের কিডনি রোগীদের চিকিৎসা নিতে চট্টগ্রাম-ঢাকায় যেতে হয়েছে। বাইরের হাসপাতাল বা ক্লিনিকে ডায়ালাইসিস করতে গেলে লাখ লাখ টাকা খরচ হতো। অনেকটা জিম্মি অবস্থায় ছিলেন তারা।’ 

বিজিসি ট্রাস্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেফ্রোলজি বিভাগ চালুর মাধ্যমে এ অঞ্চলের মানুষকে কিছুটা হলেও জিম্মি অবস্থা থেকে মুক্ত পাবেন বলে আশাব্যক্ত করেন তিনি।

তবে সাশ্রয়ী মূল্যে অত্র এলাকার মানুষের ডায়ালাইসিস সেবা প্রদান মূল লক্ষ্য বলে জানান হসপিটালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মিস. আফরীন আহমদ হাসনাইন

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়