Cvoice24.com

মামলার তদন্তে নেমে মেধাবী মুনমুনের স্বপ্নের সারথি হলেন চন্দনাইশের ওসি

চন্দনাইশ প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ২২:৫৫, ২৯ ডিসেম্বর ২০২২
মামলার তদন্তে নেমে মেধাবী মুনমুনের স্বপ্নের সারথি হলেন চন্দনাইশের ওসি

মুনমুনের হাতে উচ্চ মাধ্যমিকের বই তুলে দিচ্ছেন চন্দনাইশের ওসি মো. আনোয়ার হোসেন।

জীবনটা ফিনিক্স পাখির মতো। যে পাখি ধ্বংসস্তূপ থেকে নতুন প্রাণশক্তি নিয়ে জেগে ওঠে। তেমনি চন্দনাইশের ছোট্ট একটা গাঁয়ের কৃষক বাবার মেয়ে মুনমুন আক্তার। যে কিনা পরিবারের অভাব ছাপিয়ে চালিয়ে গেছে নিজের পড়াশোনা। এসএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়ে উজ্জ্বল করেছে কৃষক বাবার মুখ। তাও বিজ্ঞান বিভাগ থেকে।

কিন্তু মুনমুনের পথচলা খুব একটা সহজ ছিলো না। পথে কাঁটা ছিল পারিবারিক কোন্দল; যা গড়িয়েছে থানা পুলিশ পর্যন্ত। তারই তদন্তে নেমে মেলে মেধাবী মুনমুনের খোঁজ। মেধাবী মুনমুনের স্বপ্নের পথে যাতে পারিবারিক কোন্দল কাঁটা না হয় তার জন্য ঢাল হয়ে দাঁড়ান চন্দনাইশের ওসি মো. আনোয়ার হোসেন। এখানেই শেষ নয়; মামলার স্বাভাবিক কার্যক্রমের পাশাপাশি পড়ালেখায় মুনমুনকে অণুপ্রেরণা যোগাতে থাকেন তিনি।

শুধু তাই নয়, মেধাবী মুনমুনের স্বপ্ন এগিয়ে নিতে কলেজ ভর্তির আগেই তার হাতে বই তুলে দিয়েছেন। বৃহস্পতিবার দুপুরে উপজেলার বরমা ইউনিয়নে পশ্চিম চর বরমা এলাকায় মুনমুন আক্তারদের বাড়িতে গিয়ে একইসঙ্গে কলেজে ভর্তির যাবতীয় খরচের জন্য নগদ অর্থ তুলে দেন। 

মুনমুন আক্তার ওই এলাকার কৃষক জামাল হোসেনের মেয়ে। সে বরকল এসজেড উচ্চ বিদ্যালয়ের থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে ৯টি বিষয়ে ১৩০০ নম্বরের মধ্যে ১১৯৮ নম্বর পেয়েছে।

শিক্ষা উপকরণ ও কলেজে ভর্তির জন্য নগদ অর্থ পেয়ে দারুণ খুশি মুনমুন আক্তার ও তার পরিবার। 

মুনমুন আকতার বলেন, ‘আমি কখনো ভাবিনি একজন পুলিশ অফিসার আমার লেখাপড়ার খোঁজখবর নিয়ে সহযোগিতার হাত বাড়াবেন, স্যার খুব ভালো মানুষ। আমি যাতে ভালোভাবে পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে পারি তার জন্য ওসি স্যার অনেক সহযোগিতা করেছেন। এসএসসি পরীক্ষায় পাশ করার পর কলেজে ভর্তির জন্য নগদ অর্থ ও বইসহ শিক্ষা উপকরণ প্রদান করায় স্যারের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। আমি লেখাপড়া শিখে সমাজে মানুষের মত মানুষ হতে চাই। বড় হয়ে একজন চিকিৎসক হতে চাই। যাতে আমার মতো যারা অসহায় আমিও একটা সময় যেনো তাদের পাশে থাকতে পারি। আমি সবার কাছে দোয়া চাই।’

চন্দনাইশ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, এই মেয়েটি এসএসসি পরীক্ষার্থী ছিলো। তখন তাদের পারিবারিক জায়গা জমি নিয়ে স্থানীয় লোকজনের সাথে একটা সমস্যা হয়। সমস্যার বিষয়টি তদন্ত করতে গিয়ে জানতে পারি মুনমুন মেয়েটি খুবই মেধাবী শিক্ষার্থী। মেয়েটা যাতে ভালোভাবে পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে পারে, পড়ালেখায় যাতে বিঘ্ন সৃষ্টি না হয় সেজন্য সবরকম ব্যবস্থা গ্রহণ করি। সে তার অধ্যাবসায় দিয়ে পরিবারের সহযোগিতা এবং নিজের প্রচেষ্টা দিয়ে ভালো ফলাফল অর্জন করেছে। অজপাড়াগাঁয়ের একটি মেয়ে জিপিএ-৫ পেয়ে তার পরিবারের মুখ উজ্জ্বল করেছে। ভবিষ্যতেও যাতে সে ভালোভাবে তার লেখাপড়া চালিয়ে যেতে পারে সেজন্য তাকে সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস প্রদান করেছি। শিক্ষার্থীদের শারিরীক বিকাশের পাশাপাশি মানসিক বিকাশের জন্য প্রয়োজনীয় শিক্ষা উপকরণ দরকার। এছাড়াও ইভটিজিং, মাদক, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, বাল্য বিয়ে ও সামাজিক সমস্যা দূর করতে শিক্ষার্থীদের উৎসাহ দেয়া প্রয়োজন রয়েছে।

চন্দনাইশ উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অবহেলিত শিক্ষার্থীরা যেন ভালোভাবে লেখাপড়া ও খেলাধুলা করতে পারে এ জন্য আমার ব্যাক্তিগত পক্ষ থেকে সাধ্যমতো সকল প্রকার সহযোগিতা করার চেষ্টা করবো— যোগ করেন ওসি।

সিভয়েস/এসআর

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়