Cvoice24.com

খায়ের-জাহান ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে এবার গ্রামবাসী পেল বিনামূল্যে দাঁতের চিকিৎসা

সিভয়েস ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৭:৩৮, ১৭ ডিসেম্বর ২০২২
খায়ের-জাহান ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে এবার গ্রামবাসী পেল বিনামূল্যে দাঁতের চিকিৎসা

ষাটোর্ধ্ব ছকিনা বেগমের দাঁতের ব্যথা অনেকদিন ধরে। ব্যথাটা যখন উঠে তখন দুনিয়াটা অসহ্য লাগে। মনে হয় মরে গেলেই বোধহয় বেঁচে যেতেন। খাবারের সোডা দাঁতে ছেপে ধরে সাময়িক ব্যথা কিছুটা উপশম হলেও নিত্য এই ব্যথা তার জীবনকে দুর্বিষহ করে তোলে।

সেই ছকিনা বেগম জীবনে প্রথমবারের মতো দাঁতের ডাক্তার দেখালেন খায়ের-জাহান ফাউন্ডেশন আয়োজিত ফ্রি ডেন্টাল চেকআপ ও চিকিৎসা ক্যাম্পে। ব্যথাময় দুটি দাঁতের স্কিলিংয়ের পাশাপাশি পেলেন ব্যবস্থাপত্র, মেডিপ্যাথের ফ্রি টুথপেস্ট। এসব পেয়ে রাজ্যের সব আনন্দ যেন ছকিনা বেগমের চোখেমুখে। দাঁতের ব্যথা হলে কী ওষুধ খাবেন সেটা লেখা আছে ব্যবস্থাপত্র বা প্রেসক্রিপশনে, দাঁতের ব্যথায় এখন আর চিন্তা নেই। ডাক্তারের লিখে দেওয়া ওষুধ খেলেই সাথে সাথে তার ব্যথা উধাও হয়ে যাবে। তাই কে দেখে তার আনন্দ!

ঠাণ্ডা কিংবা গরম পানি, যাই পান করেন  দাঁত শিরশির করে ৩০ বছর বয়সী ফোরকানের। দীর্ঘদিনের এই সমস্যা তাকে বেশ অস্বস্তি ও কষ্টে রেখেছে। ডেন্টাল চিকিৎসা ব্যয়বহুল এবং চিকিৎসার জন্য ৫০ কিলোমিটার পথ পেরিয়ে শহরে আসা-যাওয়ার ঝক্কি তো আছেই। এসব কারণে দন্তবিষয়ক কষ্টগুলো চেপেই রেখেছিলেন ফোরকান। দোরগোড়ায় বিনামূল্যে বড় বড় ডাক্তার ও তাদের চিকিৎসা পেয়ে বেশ খুশি তিনি।

প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে তিনি বললেন, পৃথিবীতে দাঁতের কষ্টের চেয়ে বড় কোনো কষ্ট নেই। আর এই কষ্ট দূর করতে খায়ের-জাহান ফাউন্ডেশন যে উদ্যোগ নিয়েছে আমরা তা কখনো ভুলব না।

ছকিনা বেগম কিংবা ফোরকান শুধু নয়, গ্রামের অন্তত দেড় শতাধিক মানুষ দাঁতের চিকিৎসা পেয়ে তাদের প্রার্থনায় দুই হাত উচিয়েছেন সৃষ্টিকর্তার কাছে।

রাঙ্গুনিয়া উপজেলার পদুয়া ইউনিয়ন পরিষদের পুরোনো অফিস-প্রাঙ্গণে মাঝে এক ঘণ্টা বিরতি দিয়ে শুক্রবার (১৬ ডিসেম্বর) সকাল ১০টা থেকে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত চলে বিনামূল্যে জমজমাট দাঁতের চিকিৎসা। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কর্মরত বিসিএস (স্বাস্থ্য) ক্যাডারের ডা. একিউএম মহিউদ্দিন মাসুমের নেতৃত্বে চিকিৎসায় অংশ নেন ডা. কাজী সোহানা আকতার, ডা. মালিহা মেহজাবিন, সায়লা আক্তার রিমি, শায়েরী নূর গণি ও ক্লিনিক্যাল এসিস্ট্যান্ট অন্তর দাশ। বিশেষজ্ঞ এই চিকিৎসক দল দেড় শতাধিক রোগীকে দাঁত ও মুখের স্ক্রিনিং ও ব্যবস্থাপত্র দেওয়ার পাশাপাশি ১০ জনের দাঁত ফেলেছে এবং ৭ জনের ফিলিং করে দিয়েছে।

এসময় একই ভেন্যুতে মহান বিজয় দিবস ও রাঙ্গুনিয়ার ধ্রুপদী শিক্ষানুরাগী খায়ের আহমেদ তালুকদারের ১৬ তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভার আয়োজন করে খায়ের-জাহান ফাউন্ডেশন। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আবু জাফরের সভাপতিত্বে ও খায়ের-জাহান ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা, একুশে পত্রিকা সম্পাদক আজাদ তালুকদারের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন নন্দিত সমাজব্রতী পরিবর্তনের নায়ক খ্যাত এরশাদ মাহমুদ।

বিশেষ অতিথি ছিলেন দক্ষিণ রাঙ্গুনিয়া ডিগ্রি কলেজের পরিচালনা পরিষদের সভাপতি নুরুল আবছার তালুকদার। বক্তব্য রাখেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক একিউএম মহিউদ্দিন মাসুম, পদুয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আকতার হোসেন, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শাহাদাত হোসেন তালুকদার, দপ্তর সম্পাদক মাওলানা নুরুল আজিম, পদুয়া ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি, খায়ের-জাহান ফাউন্ডেশনের সমন্বয়কারী মো. তারেক সোহেল, উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহেদুল ইসলাম, পদুয়া ইউনিয়ন যুব লীগের সাধারণ সম্পাদক ইউপি মেম্বার সায়েদুল আলম সায়েদ, পদুয়া ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি শাখাওয়াত হোসেন।

উপস্থিত ছিলেন খায়ের-জাহান ফাউন্ডেশনের সমন্বয়কারী, ওমান সেনাবাহিনীর সাবেক সদস্য শওকত হোসেন তালুকদার, খায়ের আহমেদ তালুকদারের ভ্রাতুষ্পুত্র দিলদার হোসেন, পদুয়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক সদস্য ও আওয়ামী লীগ নেতা আবুল কালাম চৌধুরী বাচা, রাঙ্গুনিয়া উপজেলা ছাত্রলীগের সহ সভাপতি আতিকুল্লাহ ইয়াসিন ও এলাকার বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ।

অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি এরশাদ মাহমুদ বক্তব্যের শুরুতে দেশমাতৃকার সকল শহীদ, সম্ভ্রম হারানো মা-বোন, সকল মুক্তিযোদ্ধার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করে এবং শিশুবয়সের মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচারণ করেন। এলাকার গুণী ব্যক্তিত্ব প্রয়াত খায়ের আহমেদ তালুকদারকে সময়ের শ্রেষ্ঠ সমাজসেবক আখ্যায়িত করেন। বলেন, এলাকার প্রতিটি ভালো কাজে, সালিশ-বিচারে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠায় খায়ের আহমদ তালুকদারের অবদান প্রজন্ম থেকে প্রজান্মন্তরে আদর্শিক আলোকবর্তিকা হয়ে থাকবে।

সভাপতির বক্তব্যে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও চেয়ারম্যান মো. আবু জাফর বলেন, খায়ের আহমেদ তালুকদার ছিলেন যশস্বী সামাজিক ও শিক্ষানুরাগী ব্যক্তিত্ব। এলাকার অগ্রগতি, মানুষের কল্যাণে আজীবন তিনি নিঃস্বার্থভাবে কাজ করে গেছেন। এলাকায় মজবুত শিক্ষার ভিত তৈরি করতেও তিনি অনবদ্য ভূমিকা রেখেছেন।

শিক্ষানুরাগী নুরুল আবছার তালুকদার বলেন, সমগ্র রাঙ্গুনিয়ায় শিক্ষাসূচকে পদুয়া ইউনিয়ন অনেক এগিয়ে। এই যে এগিয়ে থাকা, সেক্ষেত্রে যে কয়জন মানুষের ভূমিকা রয়েছে তাদের মধ্যে খায়ের আহমেদ তালুকদারের ভূমিকা অন্যতম। শিক্ষার প্রতি অপরিসীম অনুরাগ ছিল মানুষটির। ১৯৬৫ সালে এলাকায় হাইস্কুল প্রতিষ্ঠায় উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছিলেন। এলাকার ছেলেদের শিক্ষামুখী করতে নানা উৎসাহ, উদ্দীপনা জোগাতেন।

খায়ের আহমেদ তালুকদারের কনিষ্ঠ সন্তান একুশে পত্রিকা সম্পাদক আজাদ তালুকদার যাদের আত্মত্যাগে এই বাংলাদেশ তাদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানান বক্তব্যের শুরুতে। তিনি বলেন, পৃথিবীর সকল বড় অর্জন আসে তুমুল বাধা পেরিয়ে, তুখোড় গর্জনের মধ্য দিয়ে। আজকের ১৬ ডিসেম্বর তেমনই গর্জনের ফল, আমাদের গৌরবের দিন। আমাদের ১৬ ডিসেম্বর আছে, আছে বাংলাদেশ। এর চেয়ে বড় প্রাপ্তি আর কী হতে পারে।

বাবার স্মৃতিচারণ করে আজাদ তালুকদার বলেন, আমার বাবা সোদা মাটির গন্ধে, মানবপ্রেমে পাগলপারা মানুষ। পুরো জীবনটাই তিনি উৎসর্গ করেছেন মানুষের জন্য, সমাজের জন্য। এমন মানুষ আমার বাবা, তার আদর্শিক রক্ত আমার শরীরে, এর চেয়ে গৌরবের আর কিছুই হতে পারে না।

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়