Cvoice24.com

মাদ্রাসা সুপারের ‘প্রতারণায়’, অনিশ্চিত পাঁচজনের শিক্ষাজীবন

সাতকানিয়া প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১৯:৫৯, ১৪ মে ২০২৩
মাদ্রাসা সুপারের ‘প্রতারণায়’, অনিশ্চিত পাঁচজনের শিক্ষাজীবন

চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় মাদ্রাসা সুপারের প্রতারণায় এবারের দাখিল পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেনি পাঁচ শিক্ষার্থী। আগামী বছরও অংশ নিতে পারবে কিনা তারও কোন নিশ্চয়তা নেই। কেননা, করোনাকালীন সময়ে জেডিসি পরীক্ষায় তাদের রেজিস্ট্রেশনই করেনি মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ। অথচ মাদ্রাসা সুপার তাদের নবম-দশম শ্রেণিতে ভর্তি করিয়ে শিক্ষাকার্যক্রম চালিয়েছেন।

ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার ঢেমশা ইউনিয়নের দক্ষিণ ঢেমশা দাইমারখীল ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসায়।

ওই পাঁচ শিক্ষার্থী হলেন— মো. আরফাতুল ইসলাম, মো. খালেদ ইমতিয়াজ, মো. রাসেল, মো. রাকিবুল ইসলাম ও আবুল হাসনাত।  

বোর্ড কর্মকর্তারা বলছেন, অষ্টম ও নবম শ্রেণিতে রেজিষ্ট্রেশন না হলে দাখিল পরীক্ষায় অংশ নেয়ার কোন সুযোগ নাই। বিষয়টি নিয়ে এলাকায় তোলপাড় সৃষ্টি হলেও উপজেলা নির্বাহী অফিসার এবং মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এখনো কিছুই জানেন না।

জানা গেছে, করোনাকালীন সময়ে জেডিসি পরীক্ষার রেজিষ্ট্রেশন ফি’সহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সুপারকে বুঝিয়ে দিলেও সুপার রেজিষ্ট্রেশন না করায় তাদের নাম অটো পাশের তালিকায় আসেনি। পরে তারা পাশের সনদ চাইলে সুপার জানান, শিক্ষা বোর্ড থেকে সনদ আসলে দেয়া হবে। ইতোমধ্যে নবম শ্রেণিতে ভর্তি হয়ে বার্ষিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয় পাঁচ পরীক্ষার্থী। আবার দশম শ্রেণিতে ভর্তি হয়ে দাখিল নির্বাচনী পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে উত্তীর্ণ হই। 

এদিকে দাখিল পরীক্ষায় ফরম পূরণ ও তাদের নিকট হতে কোচিং ফি’ও গ্রহণ করেন মাদ্রাসা সুপার। পরবর্তীতে পরীক্ষার প্রবেশপত্র নিতে গেলে সুপার জানান, জেডিসি’তে রেজিষ্ট্রেশন না হওয়ায় দাখিলের ফরম পূরণ করা সম্ভব হয়নি। যার কারণে বোর্ড থেকে প্রবেশপত্র আসেনি। এ সময় সুপার ওই শিক্ষার্থীদের ২০২৪ সালে পরীক্ষা দেয়ার প্রস্তুতি নিতে বলেন। সুপারের কথা শিক্ষার্থী কান্নাকাটি শুরু করলে সুপার বকা-ঝকা করে অফিস থেকে বের করে দেন। 

আক্ষেপের সুরে পরীক্ষার্থীরা বলেন, কেন আমাদের এভাবে অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দিলেন? এর দায়ভার কে নেবে? 

মাদ্রাসা সূত্রে জানা যায়, চলতি বছর এ মাদ্রাসায় দাখিল পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ১২জন। এর মধ্যে মেয়ে সাতজন ও ছেলে পাঁচজন। মাদ্রাসাটি ২০০২ সালে প্রতিষ্ঠা হলেও এখনও এমপিওভুক্ত না হওয়ায় ছেলেরা রূপকানিয়া আহমদিয়া দাখিল মাদ্রাসা ও মেয়েরা আঞ্জুমানে ইসলামিয়া মহিলা মাদ্রাসার অধীনে দাখিল পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে। 

এ ব্যাপারে পরীক্ষার্থী খালেদ ইমতিয়াজের বাবা কামাল হোসেন বলেন, ছেলে পরীক্ষা দিতে পারছে না শুনে সুপারের সাথে দেখা করেছিলাম। ভুলে রেজিস্ট্রেশন না হওয়ায় এ বছর পরীক্ষা দিতে পারবে না বলে তিনি জানান। শুনেছি এ বিষয়ে সুপার ছাত্রদের সাথে খারাপ ব্যবহার করেছেন।

কান্না বিজড়িত কণ্ঠে কামাল হোসেন আরও বলেন, এ বিষয়টি শুনার পর আমার রাত-দিন ঘুম নাই। অন্য ছেলেরা পরীক্ষা দিচ্ছে, অথচ আমার ছেলে ঘরে বসে আছে। ছেলেকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন ছিল। এখনতো অনেক লস হয়ে গেছে।

এ ব্যাপারে পরীক্ষার্থী আরফাতুল ইসলামের মা কমরুন্নাহার বেগম বলেন, আমার খুবই কষ্ট লাগছে। দাখিল পরীক্ষা হচ্ছে একজন শিক্ষার্থীর জন্য ১০ বছরের সাধনা। হুজুরের ভুলে আমার ছেলের এত বড় ক্ষতি আমি সহ্য করতে পারছি না। 

দক্ষিণ ঢেমশা দাইমারখীর ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসার সুপার নোমানুর রহমান বলেন, করোনাকালীন সময়ে জেডিসি পরীক্ষার জন্য রূপকানিয়া আহমদিয়া মাদ্রাসার সুপার মো. ইসমাইল সাহেবকে টাকা ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দিলেও তাঁর গাফিলতির কারণে সে সময় অটো পাশের রেজাল্ট আসেনি। ২০১৯ সালের জেডিসির রেজাল্টের চূড়ান্ত শীট বের হয়েছে ২০২৩ সালের জানুয়ারি মাসে। এ তালিকাও আমাদের ছাত্রদের নাম নেই।

নোমানুর রহমান বলেন, মনে করেছিলাম ওই মাদ্রাসায় টাকাসহ কাগজপত্র সব দিয়েছি, কাজ হয়ে যাবে। সুপার ইসমাইলের ভুল ও প্রতারণায় কাজ হয়নি। শেষ মুহুর্তে বিষয়টি জানলে মনে হয়েছে, মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়েছে।

জেডিসি ও নবম শ্রেণিতে রেজিষ্ট্রেশন না হলে ২০২৪ সালে কিভাবে পরীক্ষায় অংশ নিবে এমন প্রশ্নে সুপার বলেন, আগামী বছর পরীক্ষা দেওয়ার জন্য সর্বোচ্চ পর্যায়ে তদবির চলছে।

রূপকানিয়া আহমদিয়া দাখিল মাদ্রাসার সুপার মো. ইসমাইল সৌদি আরব অবস্থান করায় তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে, এ ব্যাপারে মাদ্রাসার পরিচালনা কমিটির সেক্রেটারী মো. শাহ আলম ও অফিস সহকারি শাহাদাত হোসেন বলেন, ২০২১ সালে দাইমারখীল দাখিল মাদ্রাসার ছাত্ররা আমাদের মাদ্রাসার অধীনে দাখিল পরীক্ষা দিয়েছিল। চলতি বছরও দাখিল পরীক্ষার ফরম পূরণ চলাকালীন সুপার মাদ্রাসায় এসেছিল। ছাত্রদের অষ্টম ও নবম শ্রেণিতে রেজিষ্ট্রেশন না থাকায় ফরম পূরণ সম্ভব হয়নি।

সুপার নোমানুর রহমান কর্তৃক টাকা ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দেয়ার বিষয়ে তাঁরা বলেন, এ রকম কোন টাকার লেনদেন ও ফরম পূরণের জন্য কোন কাগজপত্র এ মাদ্রাসার সুপার গ্রহণ করেননি। এ বিষয়ে সুপার নোমানুর রহমান সত্য বলছেন না।

দাইমারখীল ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটি সেক্রেটারী আবু তাহের বলেন, এ বিষয়টি নিয়ে সুপার সাহেবকে অনেক কথা শুনানো হয়েছে। আগামী বছর যাতে ওই শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা দিতে পারে এর প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে।

বাংলাদেশে মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের উপ-মাদ্রাসা পরিদর্শক-১ মো. আকরাম হোসেন বলেন, অষ্টম ও নবম শ্রেণিতে রেজিষ্ট্রেশন না করে দাখিল পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ নাই। তাই আগামী বছরের পরীক্ষায়ও অংশগ্রহনের বিষয়টিও অনিশ্চিত।

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়