Cvoice24.com

বাবাকে পিটিয়ে ৩১ লাখ টাকা ছিনতাই করল তিন ছেলে

সিভয়েস ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৩:০৭, ১৪ আগস্ট ২০২২
বাবাকে পিটিয়ে ৩১ লাখ টাকা ছিনতাই করল তিন ছেলে

রাজধানীর ক্যান্টনমেন্ট থানা এলাকার বাসিন্দা বৃদ্ধ জয়নাল মিয়া। বয়স ৬৯। জীবনের শেষ সম্বল জমি বিক্রির ৩১ লাখ টাকা নিয়ে ফিরছিলেন বাড়িতে। পথে ছিনতাইকারীর হামলা। ছিনতাইকারীরা আর কেউ নয়, নিজের তিন ছেলে। সঙ্গে কয়েকজন ভাড়াটে লোক। বাবাকে বেধড়ক পিটিয়ে ছিনিয়ে নেয়া হয় সব টাকা। লোহার রড ও হাতুড়ি দিয়ে নির্মমভাবে জখম করে বাবাকে। পরে বাবার করা মামলায় দুই ছেলেসহ গ্রেপ্তার করা হয়েছে চারজনকে। উদ্ধার করা হয়েছে ২৯ লাখ টাকা।

২৮ জুন রাজধানীর ক্যান্টনমেন্ট থানার মানিকদীতে এ ঘটনা ঘটে। সেদিন বাবার চিৎকার শুনে ছুটে এসে ভাইদের হাতে মার খেয়েছিলেন ছোট বোন ও তার স্বামীও। 

জানা যায়, ছেলেদের অত্যাচার সইতে না পেরে ক্যান্টনমেন্ট এলাকার পশ্চিম মানিকদীর একটি ভবনে মেয়ের পরিবারের সঙ্গে ভাড়া থাকেন জয়নাল-হনুফা দম্পতি। নিজের সম্পত্তির অধিকাংশই দিয়েছেন তিন ছেলের নামে। নিজের স্ত্রী আর মেয়ের কথা ভেবে মানিকদী এলাকার আড়াই কাঠা জমি ছেলেদের দেননি। তাই তাদের ওপর মানসিক ও শারিরীক নির্যাতন করতেন তিন ছেলে।

পরে ওই জমি বিক্রি করে টাকা জমিয়ে রাখার সিদ্ধান্ত নেন জয়নাল। জমি বিক্রি করে রেজিস্ট্রি অফিস থেকে বাসায় ফেরার সময় ছিনতাইকারীর বেশে জয়নালের ওপর হামলা চালায় তিন ছেলে। লোহার রড ও হাতুড়ি দিয়ে নির্মমভাবে জখম করেন বাবাকে।

গ্রেপ্তার দুই ছেলে ও বড়ু ছেলের মামা শ্বশুর

জয়নাল মিয়া বলেন, জমি বিক্রি করে ৩১ লাখ টাকা নিয়ে বাসায় ঢোকার সময়ই হামলা করা হয়। আমার তিন ছেলে আর তাদের এক সহকর্মীকে নিয়ে চারজন মিলে মেরে আমার পা আর মাথা জখম করে দেয়। প্রায় এক বিঘার মতো জমি ছিল। সন্তানদের লালন-পালন করতে করতে পরে যা ছিল তার প্রায় সবই ছেলেদের দিয়েছি। এমন সন্তান থাকার চেয়ে না থাকাই ভালো।

ঘটনার পর কয়েক দিন হাসপাতালে থেকে থানায় গিয়ে মামলা করেন জয়নাল দম্পতি। এরপর থেকেই গা ঢাকা দেন ছেলেরা। তাদের ধরতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে ধরনা দিতে থাকেন নির্যাতিত বাবা। ঢাকার ডিবি পুলিশের কাছে এমন তথ্য আসার পর টাঙ্গাইল ও গাজীপুরে পালিয়ে থাকা মেজো ও ছোট ছেলে আবদুল হান্নান ও আবদুল মান্নান এবং বড় ছেলের মামা শ্বশুরকে গ্রেপ্তার করে। এ সময় তাদের কাছ থেকে ছিনতাই হওয়া ২৯ লাখ টাকা উদ্ধার করা হয়। কিন্তু এখনো পলাতক প্রধান আসামি বড় ছেলে হানিফ।

যদিও গ্রেপ্তারের পর নিজেদের দোষ স্বীকার করে সন্তানরা এ ঘটনার জন্য ক্ষমা চেয়েছেন। বলেছেন, সন্তান হিসেবে এটা জঘন্য কাজ, কোনো সন্তান যেন বাবার সঙ্গে এমন কাজ না করে। এ সময় ক্ষমা চেয়ে কেয়ামতের ময়দানে তারা মা-বাবার শাফায়াতও প্রার্থনা করেন।

গোয়েন্দা পুলিশ জানায়, বাবার কাছ থেকে ছিনতাই করা ৩১ লাখ টাকা তিন ভাই ভাগ করে নেন। গ্রেপ্তারের পর মেজো ছেলে হান্নানকে নিয়ে তার বাসায় অভিযান চালিয়ে উদ্ধার করা হয় ৫ লাখ টাকা। এর আগে বড় ছেলের মামা শ্বশুরের বাসায় অভিযান চালিয়ে উদ্ধার করা হয় ২২ লাখ টাকা। গ্রেপ্তার করা হয়েছে সেই মামা শ্বশুরকেও।

বাবা-মার প্রতি সন্তানদের এমন আচরণ দেখে হতবাক পুলিশ কর্মকর্তারাও। 

ডিএমপির ডিবি উপকমিশনার মশিউর রহমান বলেন, ছেলেগুলো বখাটে। পাশাপাশি তাদের স্ত্রী ও স্ত্রী পক্ষীয় আত্মীয়-স্বজনরাও লোভী। তাই মা-বাবাকে ভালোবাসা বা ভরণপোষণের পরিবর্তে তারা স্বামীদের উসকে দিতো তাদের নির্যাতন করার জন্য।

তিনি বলেন, ‘জয়নাল আবেদীনের ছেলেরা কখনোই তাদের বাবা-মায়ের দেখাশোনা করতেন না। ফলে বৃদ্ধ বয়সে তাদের এক মেয়ের সঙ্গে থাকতেন। তারা চাচ্ছিলেন তার বাবা মারা যাক। তাহলেই তার সম্পদ তারা ভোগ করতে পারবেন।’

তিনি বলেন, দেশের আইন অনুযায়ী, মা-বাবা বৃদ্ধ হলে তার ভরণপোষণসহ তাদের নিয়মিত সময় দিতে বাধ্য থাকবেন সন্তানরা। কেউ এ রকম অন্যায়ের শিকার হলে দ্রুত অভিযোগ দেওয়ার পরামর্শ পুলিশের এই কর্মকর্তার।

-সিভয়েস/পিবি

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়