Cvoice24.com

চট্টগ্রামে করোনায় সুস্থদের ৮৮ দশমিক ৬০ শতাংশের শরীরে অ্যান্টিবডি

সিভয়েস প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২৩:০২, ৮ মে ২০২১
চট্টগ্রামে করোনায় সুস্থদের ৮৮ দশমিক ৬০ শতাংশের শরীরে অ্যান্টিবডি

চট্টগ্রামে করোনায় আক্রান্ত থেকে সেরে ওঠাদের ৮৮ দশমিক ৬০ শতাংশের শরীরে অ্যান্টিবডির পাশাপাশি আরটি–পিসিআর পরীক্ষায় করোনা নেগেটিভ হওয়া ২৬ শতাংশের শরীরেও কোভিড-১৯ অ্যান্টিবডি পাওয়া গেছে। এছাড়া অ্যান্টিবডি ৯ মাস পর্যন্ত শরীরে বিদ্যমান থাকার প্রমাণ পেয়েছেন একদল গবেষক। আরটি–পিসিআর পরীক্ষায় করোনা পজিটিভ হওয়া ও নেগেটিভ হওয়া মিলে ৬৫ শতাংশের শরীরে অ্যান্টিবডি পাওয়া গেছে। তবে পজিটিভ হয়ে সুস্থ হওয়ার পর অনেকের শরীরে অ্যান্টিবডি ছিল না। পজিটিভ হওয়া ৯৪১ জনের মধ্যে ১০৭ জন এবং নেগেটিভ হওয়া ৫৮৯ জনের মধ্যে ৪৩৬ জনের শরীরে অ্যান্টিবডি পাওয়া যায়নি। গবেষণায় পুরুষের অংশগ্রহণ ছিল ৭৬ শতাংশ। বাকিরা ছিলেন নারী।

‘চট্টগ্রামে কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের শরীরে অ্যান্টিবডির উপস্থিতি’ শিরোনামে এই গবেষণা প্রতিবেদনে এসব তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে। শনিবার দুপুরে জেনারেল হাসপাতালে একটি অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে এই গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন শিক্ষা উপমন্ত্রী ও জেনারেল হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল।

চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক মো. আব্দুর রবের নেতৃত্বে এই গবেষণা পরিচালিত হয়। ওই হাসপাতালের জুনিয়র কনসালট্যান্ট এইচ এম হামিদুল্লাহ মেহেদী, চট্টগ্রামের ডেপুটি সিভিল সার্জন মোহাম্মদ আসিফ খান, যুক্তরাষ্ট্রের সাউথ ক্যারোলাইনা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা সহযোগী এম এ কবির চৌধুরী, সহকারী সার্জন অমি দেব ও চিকিৎসা কর্মকর্তা মোরতাহিনা রশিদ এ গবেষণায় অংশ নেন।

গত বছরের অক্টোবর মাস থেকে গত এপ্রিল পর্যন্ত পরিচালিত এই গবেষণায় দৈবচয়নের ভিত্তিতে চট্টগ্রামের ১ হাজার ৫৩০ জন (আরটি–পিসিআর পরীক্ষায় পজিটিভ ৯৪১ জন এবং নেগেটিভ ৫৮৯ জন) ব্যক্তিকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগীর পাশাপাশি ঘরে থেকে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হওয়াদের ওপর এই গবেষণা চলে বলে জানান গবেষক টিমের সদস্য ডা. মোহাম্মদ আসিফ খান। 

গবেষণায় দেখা গেছে, কোভিডে আক্রান্তদের ৯২ শতাংশের জ্বর ছিল, কাশি ছিল ৬৩ শতাংশের, ঘ্রাণশক্তি লোপ পায় ৫২ শতাংশের। এছাড়া গলা ব্যাথা, মাথা ব্যাথা, পাতলা পায়খানা, শ্বাসকষ্ট ইত্যাদি উপসর্গ ছিল। আক্রান্তদের ১৫ শতাংশের ডায়াবেটিস, ২৩ শতাংশের উচ্চ রক্তচাপ, ৯ শতাংশের শ্বাসতন্ত্রের জটিলতা ও হৃদরোগ ইত্যাদি ছিল। এছাড়া এইডস ও ক্যানসার আক্রান্ত রোগীও করোনায় আক্রান্তের পর সুস্থ হওয়ার বিষয়টি গবেষণায় উঠে এসেছে। তাদের শরীরে অ্যান্টিবডিও পাওয়া গেছে। 

গবেষণায় দেখা যায়, কোভিড থেকে সুস্থ হওয়ার পরে প্রায় ৫৭ শতাংশের কোনো না কোনো উপসর্গ দীর্ঘদিন ধরে ছিল। এগুলোর শারীরিক দুর্বলতা, ব্যথা, দুশ্চিন্তা, অবসাদ, কাশি, চুল পড়ে যাওয়া ইত্যাদি উপসর্গ উল্লেখযোগ্য। 

চট্টগ্রামের ডেপুটি সিভিল সার্জন মোহাম্মদ আসিফ খান সিভয়েসকে জানান, কোভিড-১৯ আক্রান্ত ও উপসর্গযুক্ত রোগীদের শরীরে কোভিড-১৯ বিরোধী এন্টিবডির উপস্থিতি এবং এর স্থায়ীত্ব অনুসন্ধান করার উদ্দেশ্যে এ গবেষণা পরিচালিত হয়। একই সাথে রোগীদের আর্থ সামাজিক অবস্থা, কোভিড আক্রান্ত হওয়ার সময় তাদের মধ্যে কি কি উপসর্গ বিদ্যমান ছিল এবং কোভিড থেকে সুস্থ হওয়ার পরও কোনো ধরনের দীর্ঘ মেয়াদি জটিলতা রয়ে গেছে কিনা এসব তথ্য আহরণ করা ইত্যাদি ছিল এ গবেষণার অন্যতম উদ্দেশ্য। 

গবেষণায় নেতৃত্ব দেওয়া ডা. আবদুর রব বলেন, ‘আমরা দীর্ঘদিন যাবৎ কোভিড রোগীদের চিকিৎসা দিয়ে আসছি। কোভিড-১৯ কে আরও বিষদভাবে জানার লক্ষ্যে রোগীদের লক্ষণ, সেরে ওঠার পর দীর্ঘমেয়াদি জটিলতা এবং এন্টিবডির উপস্থিতি নিয়ে এই গবেষণা অত্যন্ত সময়োপযোগী। গবেষণায় প্রাপ্ত ফলাফল সরকারের চলমান কোভিড-১৯ টিকা কর্মসূচীকে আরও গ্রহণযোগ্য ও গতিশীল করবে। কোভিড–১৯ থেকে সেরে ওঠার পর ৯ মাস পর্যন্ত অনেকের শরীরে আ্যান্টিবডি পাওয়া গেছে। আবার পজিটিভ অনেকের অ্যান্টিবডি ছিল না। এসব তথ্য আরও বিষদে বিশ্লেষণ করে কোনো আন্তর্জাতিক জার্নালে প্রকাশের উদ্যোগ নিয়েছি।’ 

গবেষণা কর্মটির সমন্বয়ক ডা. মোহাম্মদ আসিফ খান সিভয়েসকে বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী আমাদের দেশের বাস্তবতায় চিকিৎসা বিজ্ঞানকে উন্নত করার জন্য এ ধরনের গবেষণার কোন বিকল্প নেই। আমাদের জানা মতে, জেলা পর্যায়ের কোন হাসপাতালে নিজস্ব উদ্যোগে পরিচালিত গবেষণার এটিই প্রথম উদাহরণ। আমরা আশা করি, আমাদের এই উদ্যোগ চিকিৎসা ক্ষেত্রে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত গবেষণা কর্মকে উৎসাহিত করবে। এর আগে ঢাকায় পরিচালিত আইসিডিডিআরবির জরিপে অ্যান্টিবডি পাওয়া গিয়েছিল ৪৫ শতাংশ। কিন্তু আমাদের জরিপে তা সব মিলিয়ে প্রায় ৯০ শতাংশ। এটি অবশ্যই আশা জাগানিয়া খবর।’ 

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়