মুসলিম ভোটেই মমতার ঐতিহাসিক জয়

পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচনে এবারও মমতা বন্দোপাধ্যায়ের দল তৃণমূলকে দুহাত ভরে দিয়েছেন মুসলিম ভোটাররা। ঐক্যবদ্ধ এই সংখ্যালঘু ভোটেই মূলত মমতার এই ঐতিহাসিক বিজয়।

রাজ্য বিধানসভার আসনগুলোর মধ্যে ৬৩টিই নিয়ন্ত্রণ হয় মুসলিম ভোটে। এর মধ্যে ৬১টি আসনে এবার নির্বাচন হয়েছে। প্রার্থীদের মৃত্যুর কারণে দুটি আসনে ভোট স্থগিত করা হয়। এই ৬১টি আসনের মধ্যে মমতার তৃণমূল পেয়েছে ৫৮টি, বিজেপি দুটি ও সংযুক্ত মোর্চা একটি। এ পরিসংখ্যান দিয়েছে মুসলিম মিরর পত্রিকা। একই তথ্য উঠে এসেছে আনন্দবাজারের এক প্রতিবেদনেও। 

মুসলিম প্রাধান্য আসনগুলোর বেশির ভাগই চারটি জেলায়— মুর্শিদাবাদ, মালদা, উত্তর ২৪ পরগনা ও দক্ষিণ ২৪ পরগানা। এর মধ্যে মুর্শিদাবাদে রয়েছে ১৬টি আসন। বাকি তিনটি জেলার প্রত্যেকটিতে আসন আছে নয়টি করে।

পরিসংখ্যান বলছে, ওই ৬১টি আসনের মধ্যে যে ৫৮টিতে তৃণমূল জিতেছে, তার মধ্যে ৩০টিতেই ৪০ হাজার বা তার চেয়ে বেশি ভোটে জয় পেয়েছে দলটির প্রার্থীরা। আবার মালদার সুজাপুরের এসকে জিয়াউদ্দিন, ফারাক্কার মনিরুল ইসলাম, ভাঙ্গাবনগোলার ইদ্রিস আলীর মতো প্রার্থীরা ৫০ হাজারের বেশি ভোটে জয়ী হয়েছেন।

বিজেপির জয় পাওয়া দুটির একটি হলো উত্তর দিনাজপুর, অপরটি মুর্শিদাবাদে। আর সংযুক্ত মোর্চার সিদ্দিকির ইন্ডিয়ান সেক্যুলার ফ্রন্ট জিতেছে একটি আসনে।

পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচনে মুসলিম ভোট ব্যাংক সবসময়ই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই ভোটের ওপর ভর করেই বামফ্রন্ট ৩৪ বছর রাজত্ব করে রাজ্যে। পরে সিঙ্গুর ও নন্দীগ্রাম বিক্ষোভের জের ধরে মুসলিমরা বামফ্রন্ট ত্যাগ করে তৃণমূলে ভোট দিতে থাকেন।

আনন্দবাজারের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে তৃণমূলনেত্রী মমতার পাশেই থেকেছেন রাজ্যের সংখ্যালঘু মুসলিম ভোটাররা। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ওই ভোটাররাই হয়ে উঠেছেন মমতার পর পর তিনবার সরকার গড়ার অন্যতম কারিগর। 

আবার নির্বাচন কমিশনের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, রাজ্যের ২৯৪টি আসনের মধ্যে ৭৪টিতে সংখ্যালঘু ভোটার ৪০ শতাংশ বা তার বেশি। ওইসব কেন্দ্রের বেশির ভাগেই বিপুল জয় পেয়েছে তৃণমূল। ৭৪টির মধ্যে ৬৯টি আসনই দখল করেছে জোড়াফুল শিবির। বিজেপি পেয়েছে মাত্র দুটি আসন। ভাঙড় আসনটি পেয়েছে ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্ট (আইএসএফ)। অবশ্য মুর্শিদাবাদের জঙ্গিপুর এবং সামশেরগঞ্জ আসনে ভোট এখনো বাকি রয়েছে।

রাজ্যের মোট ৫৭টি বিধানসভা কেন্দ্রে সংখ্যালঘু ভোট ২৫ থেকে ৪০ শতাংশের মধ্যে। ওই ৫৭টি আসনের মধ্যে ৪৬টি পেয়েছে জোড়াফুল শিবির। আবার ওই রকম ১১টি আসন দখল করেছে বিজেপিও। রাজ্যের সার্বিক ফলে তৃণমূল এবং বিজেপি— এই দুই শক্তিধরের লড়াইয়ের মাঝে তৃতীয়পক্ষের কোনো উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়নি।