শান্তিচুক্তি বাস্তবায়নের সুফল পাচ্ছে পার্বত্য অঞ্চলের মানুষ: প্রধানমন্ত্রী

সিভয়েস প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৪:০৫, ৭ নভেম্বর ২০২২
শান্তিচুক্তি বাস্তবায়নের সুফল পাচ্ছে পার্বত্য অঞ্চলের মানুষ: প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘শান্তিচুক্তি বাস্তবায়নের সুফল মিলছে। শান্তিচুক্তির ফলে পার্বত্য অঞ্চলেও উন্নয়ন হচ্ছে। সেখানে যোগাযোগ ব্যবস্থারও উন্নয়ন হচ্ছে। আজ ডিজিটাল বাংলাদেশ করেছি। পার্বত্য চট্টগ্রামে যেখানে মোবাইল নেটওয়ার্ক ছিল না, সেখানে সেটা করে দিয়েছি। এর জন্য বিভিন্ন জেলা যুক্ত করে আজ একসাথে শত সেতুর উদ্বোধন করতে পারছি।’

সোমবার (৭ নভেম্বর) বেলা ১২টার দিকে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হয়ে চট্টগ্রামসহ দেশের ২৫ জেলায় নির্মিত ১০০ সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে  প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন। 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের নির্বাচনী ইশতেহারে বাংলাদেশটাকে উন্নয়নের জন্য আমরা ২০২১ রূপকল্প ঘোষণা দিয়েছিলাম। সেটাই লক্ষ্য ছিল বাংলাদেশের যোগাযোগ ব্যবস্থাকে উন্নত করা। একই সাথে শত সেতু নির্মাণ করা এবং তার উদ্বোধন করা আশ্চর্যের বিষয়।’

চট্টগ্রামসহ সারাদেশের মানুষকে খাদ্য উৎপাদনে গুরুত্বারোপ ও তেল, গ্যাস, বিদ্যুৎ ব্যবহার সীমিত করার আহবান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্বব্যাপী যে অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দিচ্ছে, তার ধাক্কা যেন বাংলাদেশকে খুব বেশি ক্ষতি করতে না পারে। আঘাতটা লাগবেই, কারণ পৃথিবী একটা গ্লোবাল ভিলেজ, আমরা একই সঙ্গে। কাজেই একটা জায়গায় যদি এ রকম হয়, সারা বিশ্বে দেখা দেয়। সেই অভিঘাতটা বাংলাদেশেও আসে।

কক্সবাজার বিমানবন্দরের কাজও দ্রুত শেষ হবে উল্লেখ করে সরকার প্রধান বলেন, ‘আমরা সিলেট ও চট্টগ্রাম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর নির্মাণ করে দিয়েছি। এখন কক্সবাজার বিমানবন্দরের কাজ চলছে। সেটাও দ্রুত শেষ হবে। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন এবং সমগ্র বাংলাদেশে শতভাগ বিদ্যুৎ দিতে সক্ষম হয়েছি। করোনা ভাইরাস, তারপর ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ ও নিষেধাজ্ঞার কারণে শুধু আমাদের না, বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দিয়েছে। এর মাঝেও সেতুগুলো নির্মাণ করে কাজ যে সম্পন্ন করেছে, সেজন্য যোগাযোগ ও সেতু মন্ত্রণালয় এবং সেতুর কাজের সাথে যারা সম্পৃক্ত ছিল তাদের ধন্যবাদ জানাই।’ 

জানা গেছে, চট্টগ্রাম বিভাগের ৪৫টি সেতুর মোট দৈর্ঘ্য এক হাজার ৯০৭ দশমিক ৬১ মিটার। এরমধ্যে পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়িতেই রয়েছে ৪২টি ও পটিয়া উপজেলায় রয়েছে ২টি। সর্বনিম্ন দৈর্ঘ্যের চারটি সেতু চট্টগ্রামের খাগড়াছড়িতে অবস্থিত। এসব সেতু নির্মাণে খরচ হয়েছে ২৩৮ কোটি ২৪ লাখ ৫৪ হাজার টাকা। বেশির ভাগ সেতুই স্থানীয় এলাকার নামে নামকরণ করা হয়েছে।

সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ) সূত্রে জানা গেছে, খাগড়াছড়ি জেলার বিভিন্ন সড়কে পিসি গার্ডার সেতু, আরসিসি সেতু ও আরসিসি বক্স কালভার্ট নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় প্রায় ১৮৩ কোটি ৬০ লাখ টাকা ব্যয়ে ৪২টি সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে দীর্ঘ সেতুটি হচ্ছে দীঘিনালা-বাবুছড়া-লোগাং-পানছড়ি সড়কের লোগাং সেতু। ১৪৩ দশমিক ৫ মিটার দৈর্ঘ্যের সেতুটি নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ১১ কোটি ৭১ লক্ষ টাকা। ১০০ মিটার দৈর্ঘ্যের দ্বিতীয় দীর্ঘতম সেতুটি  মানিকছড়ি-লক্ষ্মীছড়ি সড়কে ধুরুং খালের ওপর নির্মাণ করা হয়। সেতুটি নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ৯ কোটি ২৭ লাখ টাকা।

এছাড়া ৭ কোটি ৩২ লাখ টাকায় দিঘীনালা-বাবুছড়া-লোগাং-পানছড়ি সড়কে ৭৯.০৫ মিটারের পুজগাং বাজার সেতু, ৬ কোটি টাকা ব্যয়ে মাটিরাঙ্গা-তানাক্কাপাড়া সড়কের ৫০ মিটার দৈর্ঘ্যের গোমতী সেতু, ৪ কোটি ৬২ লাখ টাকায় মানিকছড়ি-লক্ষীছড়ি সড়কে ৪৪.২ মিটার দৈর্ঘ্যের জুর্গাছড়ি সেতু, ৫ কোটি ২৮ লাখ টাকায় খাগড়াছড়ি-ঢাকা মহাসড়কের রামগড়ের সোনাইপুল সেতু, ৪ কোটি ৫৫ লাখ টাকা করে ৬৯ কোটি ১৫ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত ১৩টি সেতু, দীঘিনালা-বাবুছড়া-লোগাং-পানছড়ি সড়কে ৪৪ মিটার দৈর্ঘ্যের পাবলাখালী সেতু, একই সড়কে ৪৪ মিটার দৈর্ঘ্যের বাঘাইছড়ি সেতু, ৪০ মিটার দৈর্ঘ্যের বাবুরোপাড়া সেতু, খাগড়াছড়ি-পানছড়ি সড়কে ৩৭ মিটার দৈর্ঘ্যের পেরাছড়া ব্রিজ, একই সড়কে ৩৭ মিটার দৈর্ঘ্যের গাছবান ব্রিজ, ৩৭ মিটার দৈর্ঘ্যের কুকিছড়া ব্রিজ, ৩৭ মিটার দৈর্ঘ্যের কুরাদিয়াছড়া ব্রিজ, একই দৈর্ঘ্যের লতিবানছড়া ব্রিজ, একই দৈর্ঘ্যের হাটহাজারী-মাটিরাঙ্গা সড়কের খাগড়াপুর ব্রিজ, রাঙামাটি-মহালছড়ি সড়কে ঠাকুরছড়া ব্রিজ, মানিকছড়ি-লক্ষ্মীছড়ির হাতিছড়া সেতু, জালিয়াপাড়া-মহালছড়ি সড়কের সিন্দুকছড়ি সেতু ও পঙ্খিমুড়া সেতু নির্মাণ করা হয়েছে।

আরও রয়েছে— ৪ কোটি ৪১ লাখ টাকায় দীঘিনালা-বাবুছড়া-লোগাং সড়কের দেওয়ানছড়া সেতু, ৫ কোটি ১৫ লাখ টাকায় বাঘাইহাট-মারিশ্যা সড়কের পতেঙ্গাছড়া সেতু, একই সড়কে ৪ কোটি ৫৫ লাখ টাকায় নাকাপা সেতু, ৪ কোটি ২৬ লাখ টাকায় দীঘিনালা-বাবুছড়া সড়কের জারুলছড়ি সেতু, ৩ কোটি ৮২ লাখ টাকা করে ১১ কোটি ৪৬ লাখ টাকায় নির্মিত ৩টি সেতু, মহালছড়ির চোংড়াছড়ি সেতু, একই সড়কে মুসলিমপাড়া ব্রিজ ও হেঁয়াকো-রামগড়-জালিয়াপাড়া সড়কে ৩১ মিটার দৈর্ঘ্যের পাতাছড়া সেতু।  ৩ কোটি ৪৫ লাখ টাকা করে ৬ কোটি ৯০ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয়েছে জালিয়াপাড়া-সিন্দুকছড়ি সড়কে ২৮ মিটার দৈর্ঘ্যের ধুমনীঘাট সেতু ও যৌথখামার সেতু। 

৩ কোটি ৬৮ লাখ টাকায় দীঘিনালা-বাবুছড়া-লোগাং সড়কে ২৮ মিটার দৈর্ঘ্যের বড়পেরা সেতু, ৩ কোটি ৮ লাখ টাকায় খাগড়াছড়ি পানছড়ি সড়কে ২৫ মিটার দৈর্ঘ্যের ছোটনালা ব্রিজ, ৩ কোটি ৬৬ লাখ টাকায় লক্ষ্মীছড়ি সড়কে ২৫ মিটার দৈর্ঘ্যের মগাইছড়ি সেতু, ৪ কোটি ২৩ লাখ টাকায় পানছড়ি সড়কে ২৫ মিটার দৈর্ঘ্যের লোগাং বাজার সেতু, ৩ কোটি ৫৭ লাখ টাকায় দীঘিনালার বুজ্যেনাল সেতু, ৪ কোটি ৯ লাখ টাকায় মগমারাছড়া সেতু, ২ কোটি ৭৫ লাখ টাকায় খাগড়াছি-পানছড়ি সড়কের ২২ মিটার দৈর্ঘ্যের পাকুজ্জাছড়ি ব্রিজ, ২ কোটি ৭৩ লাখ টাকায় মানিকছড়ি সড়কে ২২ মিটার দৈর্ঘ্যের দুল্লাতলী সেতু, ২ কোটি ৩৫ লাখ টাকা করে ৪ কোটি ৭০ লাখ টাকায় নির্মাণ করা হয় পানছড়ি সড়কের ১৯ মিটার দৈর্ঘ্যের ভাইবোনছড়া ব্রিজ ও কলাবাগান ব্রিজ।

আরও রয়েছে, ৩ কোটি ৯৮ লাখ টাকায় নির্মিত মাটিরাঙ্গার তবলছড়ি ও তাইন্দং ২টি সেতু, ৩ কোটি ৭৬ লাখ টাকায় খাগড়াছড়ি-দীঘিনালা সড়কে ১৬ মিটার দৈর্ঘ্যের কৃষি গবেষণা সেতু ও ৩ কোটি ৪১ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত দীঘিনালা সড়কের হাতিমারাছড়া সেতু।

ভিডিও কনফারেন্সে প্রধানমন্ত্রীর পটিয়ার কালারপোল সেতু এলাকায় উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন— পটিয়ার সাংসদ সদস্য ও জাতীয় সংসদের হুইপ শামসুল হক চৌধুরী, বোয়ালখালীর সংসদ সদস্য মোসলেম উদ্দিন আহমেদ, চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার মো. আশরাফুল ইসলাম, চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি আনোয়ার হোসেন, চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মো. মমিনুর রহমান, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এটিএম পেয়ারুল ইসলাম, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ সেক্রেটারি মফিজুর রহমান, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার এম এ মাসুদ, জেলা পুলিশ সুপার এসএম শফিউল্লাহ প্রমুখ।

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়