আওয়ামী বন্দিদের সকাল সকাল আদালতে হাজিরা
জনরোষ এড়াতে ‘মর্নিং টেকনিক’
রবিউল রবি, সিভয়েস২৪

আখাউড়া সীমান্তে ধরা পড়ার পর হেলিকপ্টার উড়িয়ে আনা রাউজানের সংসদ সদস্য এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী চট্টগ্রাম আদালতপাড়ায় পা রেখেই জনরোষে পড়েন। বিক্ষুব্ধ জনতা তাকে বহনকারী প্রিজনভ্যান লক্ষ্য করে ডিম ছুঁড়ে। আর বন্দর-পতেঙ্গা আসনের সংসদ সদস্য এম এ লতিফকে বিক্ষুব্ধ জনতার ‘ভয়ে’ প্রথমবার এজলাসেই তোলা যায়নি। প্রিজন ভ্যান থেকেই সরাসরি তাকে পাঠানো হয় কারাগারেই। এছাড়া ইসকন নেতা চিন্ময় ব্রহ্মচারীর জামিন না মঞ্জুরের পর তো ঘটেছে লঙ্কাকাণ্ড! এরপর থেকেই প্রায় সব সাবেক মন্ত্রী-এমপি, আওয়ামী নেতাদের আদালতে তোলা হচ্ছে সকাল সকাল। অনেকটা জনরোষ এড়াতে পুলিশের ‘মর্নিং টেকনিক’।
যদিও পুলিশ বলছে, আদালতের সময় অনুযায়ী তাদের হাজির করা হচ্ছে। তবে অনাকাঙ্খিত ঘটনা এড়াতে আদালতের স্বাভাবিক কার্যক্রম শুরুর আগেই তাদের কড়া নিরাপত্তায় তাদের নিয়ে আসা হচ্ছে। আবার শুনানি শেষে যত দ্রুত সম্ভব তাদের নিয়ে যাচ্ছে।
সবশেষ বুধবার (২২ জানুয়ারি) সকাল ৯টা ১৫ মিনিটের দিকে নগর পুলিশ, জেলা পুলিশ ও এবিপিএন সদস্যদের পাহাড়ায় প্রিজন ভ্যানে করে আদালতে আনা হয় আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভীকে। তখনো বিচারপ্রার্থীদের আনাগোনা বাড়েনি আদালত প্রাঙ্গণে। এ সময় আদালতের কয়েকজন কর্মচারী এজলাস কক্ষের বাইরের বারান্দা ঝাড় দেওয়াসহ বিভিন্ন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ করছিলেন। ৯টা ৪৫ মিনিটের দিকে রিমান্ড শুনানি শেষে বের করা হয় আবু রেজা নদভীকে। এরপর মিনিট পাঁচেকের মধ্যেই তাকে প্রিজন ভ্যানে তুলে নেওয়া হয় চট্টগ্রাম কারাগারে। এর আগে, ১৫ জানুয়ারি সাবেক গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনকে সকাল সকাল আদালতে তোলা হয়।
আদালত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নদভী ছাড়াও আওয়ামী সরকারের আমলের গ্রেপ্তার সাবেক মন্ত্রী-এমপি যারা রয়েছেন তাদের আদালতে হাজির করার সময় যেন অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতি না ঘটে— সেজন্যই সকাল সকাল তাদের ‘লোকচক্ষুর’ আড়ালে আদালতে হাজির করা হয়। কারণ, এর আগে চট্টগ্রাম-১১ (বন্দর ও পতেঙ্গা) আসনের আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক সংসদ সদস্য এম এ লতিফকে হাজিরের সময় শত শত মানুষ জড়ো হয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। নিরাপত্তার স্বার্থে তাকে প্রিজন ভ্যান থেকে না নামিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় কারাগারে।
পরবর্তীতে রাউজানের সাবেক সংসদ সদস্য এ বি এম ফজলে করিম চৌধুরীকে আদালতে হাজিরের সময় আগে থেকেই উপস্থিত বিক্ষুব্ধ জনতা তাঁর ফাঁসির দাবি করেন। এসময় বিক্ষুব্ধরা বিভিন্ন স্লোগান দেন এবং পুলিশের প্রিজন ভ্যান লক্ষ্য করে ডিম নিক্ষেপ করেন। সেসময় পুলিশ কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিলেও বিক্ষুব্ধদের থামানো যায়নি।
এছাড়া, গত বছরের ২৬ নভেম্বর চট্টগ্রামে সম্মিলিত সনাতনী জাগরণী জোটের নেতা চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের জামিন না হওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে ঘটে ভয়াবহ সংঘর্ষের ঘটনা। ওই ঘটনায় আদালত প্রাঙ্গণে থাকা পুলিশের ও ব্যক্তিগত বিভিন্ন গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। একইদিনে সাইফুল ইসলাম আলিফ নামে একজন আইনজীবীকে নৃশংসভাবে কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যা করা হয়।
চট্টগ্রাম জেলা কোর্ট পরিদর্শক হাবিবুর রহমান এ প্রসঙ্গে সিভয়েস২৪’কে বলেন, ‘যেহেতু দেশের বিভিন্ন জায়গায় যেহেতু আসামিদের আদালতে হাজিরের সময় আক্রমণের ঘটনা ঘটেছে। সেহেতু চট্টগ্রামের ক্ষেত্রেও এমন আশঙ্কা অমূলক না। আসামিদের জনরোষ থেকে বাঁচাতে আমাদের যে ধরনের নিরাপত্তা দেওয়া দরকার আমরা সেটা দিচ্ছি।’
নিয়মিত আদালত শুরু হওয়ার আগে আসামি হাজিরের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী আসামি হাজির করি। আমাদের যেভাবে নির্দেশনা দেওয়া হয় ঠিক ওই সময়েই হাজির করতে হয়।’
চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ আদালয়ের সরকারি কৌঁসুলি অ্যাডভোকেট মফিজুল হক ভূঁইয়া সিভয়েস২৪’কে বলেন, ‘মূলত ঝামেলা এড়ানোর জন্য সাবেক মন্ত্রী-এমপি যারা গ্রেপ্তার হয়েছেন তাদের পূর্ণ আদালত শুরুর আগেই আনা হচ্ছে। অনেকের ওপরেই জনরোষ রয়েছে। তাই আসামিদের হাজিরের সময় পূর্ণাঙ্গ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হচ্ছে। যেহেতু দেশের বিভিন্ন জায়গায় আদালতে বিশৃঙ্খলার ঘটনা ঘটেছে, তাই এই ব্যবস্থা।’
মহানগর দায়রা জজ আদালতের সহকারী সরকারি কৌঁসুলি (এপিপি) অ্যাডভোকেট রায়হানুল ওয়াজেদ চৌধুরী সিভয়েস২৪’কে বলেন, ‘এর আগে চট্টগ্রাম আদালতে সাবেক এক এমপিকে লক্ষ্য করে ডিম ছোঁড়ার ঘটনা ঘটেছিল। এরপর চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে নিয়ে একটা ইস্যু হলো। আবার যদি কোনো আসামি জনরোষের শিকার হয় তাহলে আসামির নিরাপত্তা বিঘ্নিত হবে এবং আবার নতুন ইস্যু হবে। যার ফলে আদালতের কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ার শঙ্কা থাকে। তাই পুলিশ প্রটেকশন দিয়ে সকাল সকাল আদালতে আনা হচ্ছে। যখন আদালতে বিচারপ্রার্থীদের আনাগোনা অনেক কম থাকে।’
রাজনীতি সব খবর