Cvoice24.com

আদালতের আদেশেও চাক্তাই-রাজাখালী খালের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে গরজ নেই কারো!

সিভয়েস প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৪:২৯, ২৭ এপ্রিল ২০২২
আদালতের আদেশেও চাক্তাই-রাজাখালী খালের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে গরজ নেই কারো!

২০১৫ সালেও তালিকা ধরে চট্টগ্রামের প্রধানতম চাক্তাই-রাজাখালী খালের অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করতে আদেশ দিয়েছিলেন আদালত। পরে সেই উচ্ছেদ আদেশের পাঁচ বছর পেরিয়ে চলতি বছরের মার্চে নতুন তালিকা ধরে ১২৬ অবৈধ দখলদারকে উচ্ছেদের জন্য চট্টগ্রামের সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে ৯০ দিন সময় বেঁধে দেন দেশের উচ্চ আদালত। কিন্তু সেই ৯০ দিন থেকে ৪০ দিন পেরিয়ে গেলেও আদেশ বাস্তবায়নের গরজ নেই কোন সংস্থারই! সিডিএ, চসিক কিংবা পরিবেশ অধিদপ্তরের কাছে নাকি এই ধরনের কোন লিখিত আদেশই আসেনি। যদিও চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসন বলছে, তারা ম্যাজিস্ট্রেট দিয়ে অভিযান চালাতে প্রস্তুত। তবে অন্য সেবা সংস্থাগুলোকেই এখন প্রস্তুত হতে হবে।

এই পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে যখন চাক্তাই-রাজাখালী খালের অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ কার্যক্রম। তখন সিভয়েসের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হয় অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ কার্যক্রমের রিটকারী সংস্থা হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ’র প্রধান আইনজীবী মনজিল মোরশেদের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘জাজমেন্টটা এখনো যায়নি; আর ৯০ দিন তো শেষ হয়নি। মানে এখান থেকে জাজমেন্টের কপিটা যায়নি। এখনও নামে নাই। আমরা ফলোআপ করছি। পেলেই জানাবো।’

২০১৫ সালে চাক্তাই ও রাজাখালী খালের জায়গায় অবৈধ দখলদারদের চিহ্নিত করে তালিকা তৈরি করেছিল চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন। সেসময় দুটি খালের জায়গায় ১০২ জন দখলদারের নাম উঠে আসে। কিন্তু সেই তালিকার সাড়ে ছয় বছর পরেও আজও দখলমুক্ত হয়নি কর্ণফুলী নদীর প্রধান এ দুটি শাখা খাল। ২০১৬ সালে প্রকৃত সীমানা চিহ্নিত করে খালের জায়গায় মাটি ভরাট, দখল উচ্ছেদ এবং নির্মাণকাজ বন্ধের নির্দেশনা চেয়ে হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ রিট করেছিল। ওই বছরের ৬ জুন আদালত দুটি খাল জরিপ করে প্রতিবেদন দেওয়ার নির্দেশ দেন। পরে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন দুটি খালে ১২৬ দখলদার চিহ্নিত করে প্রতিবেদন দেয়।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, চাক্তাই খালে ৬৫ এবং রাজাখালী খালে ৬১ দখলদার রয়েছে। আদালতের নির্দেশনার পর সেই তালিকারও পাঁচ বছর পেরিয়ে গেছে। কিন্তু এই দুই খালের জায়গায় অবৈধ দখলদারদের হটাতে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনায় গরজ নেই কোনো সংস্থারই।

সর্বশেষ চলতি বছরের ১৬ মার্চ চাক্তাই ও রাজাখালী খালের জায়গা থেকে ১২৬ জন অবৈধ দখলদারকে ৯০ দিনের মধ্যে উচ্ছেদের জন্য প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। সেই নির্দেশারও ৪০ দিন পেরিয়ে গেছে। তবে উচ্ছেদের আগে আদালত নিজ খরচে এসব অবৈধ স্থাপনা সরিয়ে নেওয়ার জন্য দুই সপ্তাহ সময় দিতে বলেছেন। কিন্তু এখনও পর্যন্ত সাড়াশব্দ নেই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের। এমনকি আদালত থেকে জাজমেন্টও পৌঁছায়নি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দপ্তরে। এ যেন কেবল কাগজে কলমের নির্দেশনাতেই আটকে আছে কর্ণফুলীর প্রধানতম দুই খাল। বছরের পর বছর পেরিয়ে গেলেও অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদে নেওয়া হয় না কোনো উদ্যোগ।

২০১৫ সালের তালিকা অনুযায়ী, চাক্তাই খালের ১৯ হাজার ৯৮২ বর্গফুট জায়গা দখল করে আছে ৪৮ দখলদার আর ১৩২টি অবৈধ স্থাপনা। এরমধ্যে ১৭টি বহুতল ভবন, ৬৭টি টিনশেড ও ৪৮টি কাঁচা ঘর। আর ৫৪ জনের দখলে রয়েছে রাজাখালী খালের এক দশমিক ৩২ একর জায়গা। তবে ২০১৯ সালের জুলাইয়ে চাক্তাই খালের বহদ্দারহাট, বাড়ইপাড়া, সিরাজদ্দৌলা রোডের মাছুয়া ঝর্ণা ও সাবেরিয়া সেতু এলাকা থেকে ৬০ থেকে ৬৫টি স্থাপনা এবং রাজাখালী খাল থেকে ২৬টি অবৈধ স্থাপনা ও নোয়াখাল থেকে ১৫টি স্থাপনা উচ্ছেদ করে সিডিএ (চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ)। সেসময় খালের আড়াই থেকে তিন কিলোমিটার অংশে অবৈধ দখলমুক্ত করা হয়েছে বলে দাবিও করে সিডিএ। কিন্তু এরপর খালের জায়গা দখলমুক্ত করতে আর কোনো উচ্ছেদ অভিযান চালানো হয়নি।

অন্যদিকে, বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরী এবং বিচারপতি মো. কামরুল হোসেন মোল্লার আদালত শুনানি শেষে আদালতের এ রায় বাস্তবায়নকারীদের মধ্যে পরিবেশ, অর্থ, এলজিআরডি ও পানি সম্পদ সচিব, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র, সিডিএ চেয়ারম্যান, পরিবেশ অধিদপ্তরের ডিজি, জেলা প্রশাসক, এডিসি, চট্টগ্রামের পুলিশ কমিশনার, বাকলিয়ার এসিল্যান্ড এবং ওসিকে রাখা হয়েছে।

আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী খালের দখলকৃত জায়গা উদ্ধার করতে সিডিএ এবং চসিককে চিঠি দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমান। তিনি সিভয়েসকে বলেন, ‘আমরা আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী সিডিএ এবং চসিককে চিঠি দিয়েছি। মূলত উচ্ছেদ কার্যক্রম চালাবে তারাই। তারা যখন বলবে তখন উচ্ছেদ অভিযান চালানো হবে। আমরা আমাদের ম্যাজিস্ট্রেট নিয়ে প্রস্তুত।
 
কিন্তু এ চিঠির বিষয়ে কিছুই জানেন না চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের সচিব খালেদ মাহমুদ। তিনি সিভয়েসকে বলেন, ‘আসলে এটা সম্পর্কে (চাক্তাই রাজাখালী খালের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ) আমি জানি না। কিন্তু এটার কপিও আমি পাইনি।’

তৎক্ষণাত এই বিষয় সম্পর্কে দ্বিতীয় কোনো ব্যক্তির সঙ্গে আলাপ করে তিনি সিভয়েসকে বলেন, ‘এটা একটু দেখি। আমাদের ল অফিসার আর ম্যাজিস্ট্রেটের সঙ্গে কথা বলে আপনাকে জানাবো।’

এদিকে, ২০১৯ সালের পর আর কোনো অভিযান হয়েছে কিনা এমন প্রশ্নে সিডিএ’র প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস সিভয়েসকে বলেন, ‘না, এরপর আর কোনো অভিযান চালানো হয়নি। আমরা এখনও উচ্ছেদ প্রক্রিয়া শুরু করিনি।’

কবে নাগাদ হবে— এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘সামনে হবে আর কি। যখন আমরা কাজ করবো তখন উচ্ছেদ করবো। যদি আমাদের কাজ থাকে। সিটি করপোরেশনের কাজ থাকবে। সব জায়গায় কাজ থাকে না। মানে আমাদের কাজ থাকলে, আমাদের এলাইনমেন্টের মধ্যে থাকলে আমরা কাজ করবো। অনেক সময় আমাদের আওতায় থাকে না।’

একইভাবে এই বিষয়ে জানা নেই পরিবেশ অধিদপ্তরেরও। পরিবেশ অধিদপ্তরের (মহানগর) উপ-পরিচলক মিয়া মাহমুদুল হক সিভয়েসকে বলেন, ‘উচ্ছেদের কার্যক্রম ডিসি অফিস করে। এ সংক্রান্ত আমাদের কাছে কোনো চিঠি আসে নাই।’

প্রসঙ্গত, ২০১৪ সালের ১৬ জুলাই নদী-সংক্রান্ত টাস্কফোর্সের এক বৈঠকে চাক্তাই ও রাজাখালী খালের সীমানা নির্ধারণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। একই বছরের ২০ অক্টোবর সীমানা নির্ধারণ করে ১৫ কার্য দিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেয় নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়। কিন্তু সীমানা নির্ধারণে কেটে যায় প্রায় এক বছর। ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে অবৈধ দখলদারদের তালিকা তৈরি করে জমা দেয় চাক্তাই খাল ও রাজাখালী খাল সীমানা নির্ধারণ-সংক্রান্ত গঠিত কমিটি।

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়