সংস্কার : ১০ রাতের জন্য বন্ধ হচ্ছে কালুরঘাট সেতু

প্রকাশিত: ১৪:২০, ১৩ জুলাই ২০২০
সংস্কার : ১০ রাতের জন্য বন্ধ হচ্ছে কালুরঘাট সেতু

সংস্কার কাজের জন্য জরাজীর্ণ কালুরঘাট ব্রিজে সোমবার (১৩ জুলাই) থেকে বৃহস্পতিবার (২৩ জুলাই) পর্যন্ত মোট ১১ দিন রাতে যানবাহন চলাচল বন্ধ ঘোষণা করেছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। তবে দিনে ট্রেনসহ অন্যান্য যানবাহন স্বাভাবিক নিয়মে চলবে।

রেলওয়ে সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রতিদিন রাত ১০টা থেকে পরদিন সকাল ৮টা পর্যন্ত সেতুর ওপর দিয়ে সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকবে। সংস্কার কাজ শেষে সেতুটি আবার আগের নিয়মে খুলে দেওয়া হবে।

রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী মো. সবুক্তগীন জানান, ২৩ জুলাইয়ের মধ্য কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। আসন্ন কোরবানি ঈদকে কেন্দ্র করে জনভোগান্তি এড়াতে ২৩ জুলাইয়ের পরিবর্তে ১৩ জুলাই কাজ শুরু করা করে রাতে যান চলাচল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

একমুখি এই সেতুর উপর নির্ভরশীল দক্ষিণ চট্টগ্রামের বোয়ালখালী, পটিয়াসহ বিভিন্ন এলাকার লোকজন। তাছাড়া এ রেল সেতু দিয়ে চট্টগ্রাম থেকে দোহাজারী লাইনে প্রতিদিন এক জোড়া ট্রেন এবং দোহাজারী ১০০ মেগাওয়াট পিকিং পাওয়ার প্ল্যান্টের জন্য ফার্নেস ওয়েলও ট্রেনে আনা-নেওয়া করা হয়।

জোড়াতালি দিয়ে গুণছে ২০ বছর: 

এ সেতু বারবার সংস্কার-মেরামত করে জোড়াতালি দিয়ে টিকিয়ে রাখা হয়েছে। স্থানীয়দের অভিযোগ এই সেতু নাকের ডগায় মুলার মত ঝুলিয়ে নির্বাচনী বৈতরণীতে পার হয় ওই এলাকার জনপ্রতিনিধিরা। অন্যদিকে এই সেতু মেয়াদোত্তীর্ণ হয় প্রায় ২০ বছর আগে। অর্থাৎ ২০০১ সালে। এরপর ২০০৪ সালের ১৩ আগস্ট ১০ কোটি টাকা ব্যয়ে এই সেতুতে বড় ধরনের সংস্কার কাজ করা হয়। এ সময় ১১ মাস সেতুর ওপর যানবাহন চলাচল বন্ধ ছিল। ২০১৮ সালে  জাহাজের ধাক্কায় একটি স্প্যান সরে যায়। ওই সময় দুদিন বন্ধ রেখে তা ৫০ লাখ টাকায় মেরামত করা হয়। এর আগে দফায় দফায় সেতুর সংস্কার করা হয়। সর্বশেষ প্রায় ১ মাস আগেও এই সেতুর উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া লক্কর-ঝক্কর রেল লাইনের কাজ হয়েছিল। সেইবার ৩ দিনের জন্য রেললাইন মেরামতের কাজ হয়েছিল। এবার হবে পুরো সেতুর কাজ।

শত বছরের ভারে ন্যুব্জ সেতু কালুরঘাট:

জানা গেছে, ১৯১৪ সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় বার্মা ফ্রন্টের সৈন্য পরিচালনার জন্য ১৯৩০ সালে কর্ণফুলী নদীতে একটি আপৎকালীন সেতু নির্মাণ করা হয়। ব্রুনিক অ্যান্ড কোম্পানি ব্রিজ বিল্ডার্স হাওড়া নামে একটি প্রতিষ্ঠান ট্রেন চলাচলের উপযোগী করে ৭০০ গজের সেতুটি তৈরি করে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে মোটরযান চলাচলের জন্য সেতুতে ডেক বসানো হয়। ১৯৫৮ সালে এই এক লেনের সেতুটিই সব ধরনের যানবাহন চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়।

বয়সের ভারে এখন ন্যুব্জ এই সেতু। ফলে ২০০১ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে কালুরঘাট রেল ও সড়ক সেতুটিকে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। জোড়াতালি দিয়ে কোনোভাবে টিকিয়ে রাখা হয়েছে। চরম ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে হাজার হাজার মানুষ। এ অবস্থায় সেতু ব্যবহারকারী বোয়ালখালী উপজেলা ও পটিয়ার একাংশের বাসিন্দারা একই স্থানে নতুন সেতু নির্মাণের দাবি জানিয়ে আসছেন। অস্ট্রেলিয়া, তাইওয়ান ও বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠান নতুন সেতু নির্মাণে সম্ভাব্যতা যাচাই করে।

ব্রিটিশ আমলে নির্মিত কালুরঘাট রেল ও সেতুটি জরাজীর্ণ হওয়ায় দুই দশকের বেশি সময় ধরে লাখ লাখ মানুষকে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। দক্ষিণ চট্টগ্রামবাসীর দীর্ঘদিনের দাবির প্রেক্ষিতে এবং বর্তমান সরকারের সদিচ্ছায় প্রস্তাবিত চীন, মিয়ানমার এবং ভারতের সঙ্গে রেল নেটওয়ার্ক স্থাপন এবং কর্ণফুলী নদীর ওপর পুরানো কালুরঘাট রেল সেতু ভেঙে নতুন করে রেল ও সড়ক সেতু নির্মাণ করার উদ্যোগ নিয়েছে রেলপথ মন্ত্রণালয়। এ সেতুটি সরকারের মেগা প্রকল্প দোহাজারী-ঘুমধুম রেললাইনের অন্তর্ভুক্ত।

সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ রেলওয়ে পূর্বাঞ্চল কর্তৃপক্ষ ২০১৭ সালের ২১ সেপ্টেম্বর কালুরঘাট কর্ণফুলী নদীর ওপর রেল ও সড়ক সেতু নামে একটি ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট প্রপোজাল (ডিপিপি) তৈরি করে ঢাকাস্থ রেলভবন কার্যালয়ে পাঠায়। পরে সেটি যাচাই-বাছাই শেষে কয়েক দফা পুনর্গঠন করে ২৭ মার্চ সংশোধিত ডিপিপি রেলপথ মন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদনের জন্য পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগে পাঠানো হয়।

প্রকল্প অনুসারে ২০২০ সালের শুরুতে সেতুর নির্মাণকাজ শুরু হয় ২০২৩ সালের মধ্যে শেষ করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে এক হাজার ১৬৪ কোটি ৯৮ লাখ ৮৯ হাজার টাকা। যার মধ্যে ১ হাজার ১৪৬ কোটি টাকার দক্ষিণ কোরিয়ার ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট কো-অপারেশন ফান্ড (ইডিসিএফ)। বাকি টাকার যোগান দেবে বাংলাদেশ সরকার।

রেল কর্মকর্তাদের মতে, প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত রেললাইন নির্মাণের যে প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন আছে, তার সুফলও নির্ভর করছে কালুরঘাটে নতুন সেতু নির্মাণের ওপর।

-সিভয়েস/এপি/এসসি

সিভয়েস প্রতিবেদক

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়