সীতাকুণ্ডে বিস্ফোরণ/
একটাই আতঙ্ক, এই বুঝি হারালো চোখের আলো

সিভয়েস প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৯:৪৪, ১১ জুন ২০২২
একটাই আতঙ্ক, এই বুঝি হারালো চোখের আলো

সীতাকুণ্ডে বিস্ফোরণে রোগীরা ক্ষত শুকিয়ে এলেও ভয়ে আছেন চোখ নিয়ে। 

সীতাকুণ্ডের বিএম কনটেইনার ডিপোতে কাভার্ডভ্যান চালক ছিলেন মো. সেকান্দার (৪৫)। গেল শনিবার ভয়াবহ বিস্ফোরণের কবলে পড়ে পুড়ে গেছে তার শরীরের বেশ কিছু অংশ। চিকিৎসায় সেই ক্ষত শুকিয়ে এলেও, তার ভয় চোখ নিয়ে। 

শনিবার (১১জুন) চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে বার্ন ইউনিটে কথা হয় সেকান্দারের সঙ্গে। তিনি সিভয়েসকে বলেন, অগ্নিকাণ্ডের সময় ডিপোর ভেতরে ছিলাম। আস্তে আস্তে  চারদিকে আগুন ছড়িয়ে পড়ে।  হঠাৎ করে বিস্ফোরণের ধ্বংসাবশের একটি অংশ আমারে শরীর এসে পড়ে। চোখ জ্বালাপড়া শুরু হয়। ডাক্তার বলছে আমার চোখ ভালো হয়ে যাবে।  কিন্তু সামনে দেখতে সমস্যা হতে পারে।

মনির নামের আরেক রোগীর চোখ দিয়ে পানি পড়ছে। তিন বছর আগে তিনি  ডিপোতে কার্ভাডভ্যান চালকের সহকারী  হিসেবে কাজ শুরু করেন। শুধু সেকান্দার কিংবা মনির নন, সীতাকুণ্ডে ভয়াবহ বিস্ফোরণের পর শরীরে তেমন ক্ষত না থাকলেও কমবেশি অনেকেই চোখের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি আছেন। 

বিস্ফোরণের ভয়াবহতা এখনও ঘিরে রয়েছে তাদের। তাদের একটাই আতঙ্ক, এই বুঝি হারিয়ে গেলে চোখের আলো।

চিকিৎসকরা জানান, হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়া এসব রোগীদের ফলোআপ চিকিৎসার মধ্যে আনা সম্ভব হলে তারা সুস্থ হয়ে উঠবেন। তবে ভবিষ্যতে এদের দৃষ্টিশক্তি নিয়ে ভুগতে হবে।

চমেক হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, সীতাকুণ্ডে ভয়বাহ অগ্নিকাণ্ডের পর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দগ্ধ হওয়া ৬৩ জনের চোখের সমস্যা চিহ্নিত করে।  অবস্থা গুরুতর হওয়ায় ইতিমধ্যে সাত জনকে ঢাকার চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে ভর্তি করানো হয়েছে। এর মধ্যে একজনের চোখের একটি কর্ণিয়া নষ্ট হয়ে যাওয়ায়, তিনি ওই চোখে দেখতে পারবেন না। এমনকি উন্নত চিকিৎসার প্রয়োজনে ওই রোগীকে বিদেশে চিকিৎসা দেওয়ার কথা জানান স্বাধীনতা চিকিৎসা পরিষদের (স্বচিপ) মহাসচিব ও চক্ষু বিশেষজ্ঞ ডা. এ  আজিজ। এর আগে শেখ হাসিনা বার্ন ইনস্টিটিউটের প্রধান ও চক্ষু বিশেষজ্ঞ ডা. সামন্ত লাল সেন চোখের জটিলতা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীদের উন্নত চিকিৎসার ওপর জোর দেন। তিনি প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে এসব রোগীদের সর্বোচ্চ চিকিৎসার আশ্বাস দেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে চমেকের চক্ষু বিভাগের বিভাগীয় প্রধান  অধ্যাপক ড. তনুজা তানজিন সিভয়েসকে বলেন, অগ্নিকাণ্ডের সময় এসব রোগীর চোখে কেমিক্যাল ও গ্লাসের গুড়ো এসে পড়েছে। যার কারণে অধিকাংশ রোগী চোখে ঝাপসা দেখা, আলোর দিকে তাকাতে না পারা, অনর্গল চোখ দিয়ে পানি পড়া, জ্বালা পোড়া, মাথা ব্যথাসহ নানান সমস্যায় ভুগছেন। ফলোআপ চিকিৎসার মধ্যে রাখায় এদের সবাই ভালো হয়ে উঠছেন। তবে তাদের মনে ভয় কাজ করছে যে, সুস্থ হয়ে উঠার পরও ভবিষ্যতে তারা আগের মতো দেখতে পারবে কিনা। কাজ করতে পারবে কিনা। তবে আমরা আগেও বলে এসেছি এরা সবাই সুস্থ হয়ে উঠবেন এখনও তাই বলছি।

এক প্রশ্নে এই চিকিৎসক বলেন, প্রতিটি রোগীর সমস্যা অনুযায়ী চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এর পাশাপাশি চক্ষু বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিয়ে কাজ করা হচ্ছে। পরবর্তীতে কোন নির্দেশনা পেলে অবশ্যই সে অনুযায়ী কাজ করা হবে।

উল্লেখ্য, গেল শনিবার সীতাকুণ্ডে বিএম ডিপোতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ফায়ার সার্ভিসের নয় কর্মকর্তাসহ ৪৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া এ ঘটনায় অন্তত দুই শতাধিত আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

সম্পর্কিত বিষয়:

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়