সীতাকুণ্ডে বিস্ফোরণ/
শ্রমিক-কর্মচারি ঐক্য পরিষদের সাত দফা দাবি

সিভয়েস প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৪:০৮, ১৩ জুন ২০২২
শ্রমিক-কর্মচারি ঐক্য পরিষদের সাত দফা দাবি

চট্টগ্রামের সীতকুণ্ড উপজেলার ভাটিয়ারি এলাকার বিএম ডিপোতে অগ্নিকাণ্ড ও বিস্ফোরণের ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটতে চট্টগ্রাম মহানগর ও আবাসিক এলাকা থেকে সকল কনটেইনার ডিপো দ্রুত স্থানান্তরের উদ্যোগসহ সাত দফা দাবি জানিয়েছে চট্টগ্রাম শ্রমিক-কর্মচারি ঐক্য পরিষদ।

সোমবার (১৩ জুন) নগরের প্রেসক্লাবের এস রহমান হলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে চট্টগ্রাম শ্রমিক-কর্মচারি ঐক্য পরিষদের সমন্বয়ক তপন দত্ত এসব দাবি জানান।

সাত দফা দাবি উল্লেখ করে তপন দত্ত বলেন, আইএলও কনভেনশন ১২১ অনুসরন করে কনটেইনার বিস্ফোরণে নিহতদের প্রত্যেকের আজীবন আয়ের সমপরিমাণ ক্ষতিপূরণ প্রদান করতে হবে। আহতদের চিকিৎসাকালীন সবেতন ছুটিসহ সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে হবে। আহতদের মধ্যে কেউ পঙ্গু হয়ে গেলে তাদের ক্ষেত্রে আজীবন আয় ও ভোগান্তি হিসাব করে তার সমপরিমাণ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। কেউ আংশিক পঙ্গু হলে তাদের পুনর্বাসনসহ অঙ্গহানি বিবেচনায় নিয়ে যথাযথ ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। নিরাপত্তার স্বার্থে চট্টগ্রাম মহানগর ও আবাসিক এলাকা থেকে সকল কনটেইনার ডিপো দ্রুত স্থানান্তরের উদ্যোগ নিতে হবে। কনটেইনার ডিপোগুলোর নিরাপত্তা ঘাটতি নিরুপণের জন্য একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন তদন্ত কমিটি গঠন করতে হবে। ডিপোগুলোর নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয়ে একটি জাতীয় নীতিমালা প্রণয়ন এবং সে অনুযায়ী ডিপোগুলো পরিচালনা করার দাবি জানাচ্ছি। 

বিএম ডিপো কর্তৃপক্ষের তথ্য গোপন ও অবহেলার কারণে এত বড় ভয়াবহ ঘটনা ঘটেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সীতাকুণ্ডে বিএম ডিপোতে বিস্ফোরণের ঘটনাটি এ যাবৎকালের একটি নজিরবিহীন ঘটনা। রাসায়নিক দ্রব্য থাকার বিষয়টি ফায়ার সার্ভিসের কাছে গোপন রাখার কারণে তাদের ৯ জন কর্মী প্রাণ হারান। আরও ৩ থেকে ৪ জন কর্মী আহত ও নিখোঁজ রয়েছেন। তথ্য গোপন করা মালিকপক্ষের ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ। এ ঘটনায় তাদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শান্তি তো দূরে থাক বরং তাদেরকে বাঁচানোর জন্য নানা প্রক্রিয়া ফন্দিফিকির আমরা অবলোকন করছি। 

দায়ীদের বিরুদ্ধে প্রশাসন অভিযোগ নিচ্ছে না দাবি করে তপন দত্ত বলেন, ডিপোটিতে ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনায় অর্ধশত লোক নিহত ও ৪ শতাধিক শ্রমিক আহত হয়েছেন। এখনো অনেক শ্রমিক নিখোঁজ রয়েছেন। অনেকের শরীর ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। অনেকের মুখমন্ডল বিকৃত হয়ে গেছে। ফলে অনেক নিহতের লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা সম্ভব হয়নি। অথচ এত বড় হৃদয়বিদারক ঘটনার পরেও প্রশাসন দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা তো নিচ্ছেই না, এমনকি প্রতিবাদ করতে চাইলে তাতেও বাধা দিয়ে শ্রমজীবী মানুষের সাংবিধানিক অধিকারও কেড়ে নিচ্ছে। সম্প্রতি বিএম ডিপোর ঘটনায় মালিকপক্ষকে বাদ দিয়ে আটজন ডিপো কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। এতে রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক চরিত্র প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে এবং রাষ্ট্রের অবস্থান যে ব্যবসায়ী-ধনীক শ্রেণির পক্ষে তা পরিষ্কার হচ্ছে। 

ডিপো কর্তৃপক্ষকে সম্পূর্ণ ঘটনার জন্য দায়ী করে তিনি বলেন, বুয়েটসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ও গবেষকদের মতে, হাইড্রোজেন পারক্সাইড উচ্চ মাত্রার বিস্ফোরক হলেও তা রক্ষণাবেক্ষণের বিষয়ে কর্তৃপক্ষের যথাযথ জ্ঞানের অভাব ও অবহেলার কারণে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। এতে বোঝাই যাচ্ছে ডিপোগুলো কতটা নিরাপদ অবস্থানে রয়েছে। তাই এ ধরনের ঘটনা পুনরায় না ঘটতে এখনই সতর্ক হবার বিকল্প নেই।

সম্পর্কিত বিষয়:

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়